এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার; সেরা খামারি (পোলট্রি) হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা শাহিনুর রহমান। জাতীয় কৃষি পদক পাওয়া এই তরুণের হাতে গত শনিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান; অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) জাফর উদ্দিন সিদ্দিকী।
স্বপ্ন সবাই দেখেন কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ত্যাগ আর ধৈর্যের। এসব কিছুই পারে একজনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এসব গুণে বলীয়ান কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানার পূর্ব বামনপাড়া গ্রামের ছেলে শাহিনুর রহমান।
শুরুটা ছিল এরকম-১৯৯১ সাল; অসুস্থতার কারণে বাবা মোহাম্মদ আলী ঢাকার একটি কোম্পানীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে ৪০ টি মুরগি দিয়ে খামার শুরু করেন। শাহিনূর তখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। সেসময় থেকেই মুরগী পালনের অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু হয় শাহিনুরের স্বপ্ন। এরপর অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তিনি এখন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা।
২০০২ সালে শাহিনুর ও তাঁর বাবা পোল্ট্রি ফিডের ব্যবসা শুরু করলেও প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারলেও হাল ছেড়ে দেননি। অনেক ভেবে চিন্তে ২০০৬ সালে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানার পূর্ব বামনপাড়ায় তিন কাঠা জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেন পোল্ট্রি হ্যাচারি। সে সময় ডিম ফুটানোর ইনকিউবেটর না থাকায় যশোর ও গোয়ালন্দ থেকে ডিম ফুটিয়ে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা বিক্রি করতেন শাহিনূর। এর কয়েক বছর পর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় একটি ইনকিউবেটর পান এর পাশাপাশি একটি পুরনো ইনকিউবেটর কিনে পুরোদমে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে নেমে পড়েন। এরপর থেকেই আর পিছে তাকাতে হয়নি শাহিনূরকে। দিনে দিনে শাহিন পোল্ট্রি হ্যাচারির মুরগির বাচ্চার সুনাম এলাকা থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ হ্যাচারী থেকে বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে ১০ হাজার বচ্চা উৎপাদন করা হয়। এখান থেকে মূলত ব্রয়লার এবং সোনালীর বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। এই বাচ্চাগুলো আশেপাশের জেলা ছাড়াও সাভার, গাজীপুরেও যায়।
শাহিনূরের ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। খামারে যুক্ত হয়েছে ১৭ টি গরু, ১০টি ছাগল সহ কবুতর, টার্কি। টার্কির বাচ্চাও বিক্রি করছেন তিনি। ডিম, মুরগি, একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা, দুধ বিক্রি করে মাসে সব খরচ বাদে লাখ টাকার বেশী আয় করছেন সংগ্রামী এ ব্যক্তিত্ব। এ আয় থেকে তিন কাঠার জমি এখন সাত বিঘাতে পরিণত করেছেন। তৈরী করেছেন দুই ইউনিঠের দোতলা পাকা ভবন। নিয়মিতভাবে কর্মসংস্থান করেছেন সাত-আটজন শ্রমিকের।
২০০৭ সাল তাঁর খামারে বার্ড ফ্লুতে আড়াই হাজার ”প্যারেন্ট স্টক” মারা যায়। এতে তাঁর প্রায় ১৮ লক্ষাধিক টাকার মতো ক্ষতি হয়। কিন্তু সে ধাক্কা তিনি বেশ মনোবল দিয়েই সামলিয়েছেন। কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে ২০১৫ সালে মাস্টার্স পাস করে চাকরির পিছনে ঘুরেননি। তাঁর পরামর্শে ও সহযোগিতায় একই এলাকার অনেকেই খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার অর্জন সম্পর্কে শাহিনুর এগ্রিলাইফকে বলেন "পুরস্কার নেওয়া, আমার কাজের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটি কাজের সঠিক মূল্যায়ন কাজের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া দায়িত্বটাও অনেক বেড়ে যায়। সবাই তার ও খামারের জন্য দোওয়া করবেন যেন সততার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারি।"'