খসরু মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, সিকৃবি থেকে:সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা খরচে পড়াশুনা, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি তাদের মেধা, মনন ও প্রতিভা বিকাশে কাজ করছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাঠশালা ২১। ২০১২ সালে কৃষি অনুষদের পঞ্চম ব্যাচের একদল স্বপ্নবাজ তরুন-তরুনীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মহতি সংগঠনটি।
“স্বপ্নরথে আলোর পথে” এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতি শুক্র ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামের বারান্দায় চলে পাঠশালা ২১ এর শিক্ষা কার্যক্রম। একজন গৃহ শিক্ষক ক্লাসের বাইরে যেভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করান সেটাই এই স্কুলে করা হয়। ক্লাসের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নাচ, গান ও কবিতা আবৃত্তির তালিমও দেয়া হয় এই পাঠশালায়। শুধু পড়াশুনাই নয়, পড়ার শেষে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় শুকনো খাবার। শুরু থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশুনার বিকাশ গঠাতে কাজ করছে পাঠশালার সদস্যরা। বর্তমানে স্কুলটিতে ১৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিশু শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নরত ছেলেমেয়েরা এখানে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগেরই বাসা ক্যাম্পাসের আশেপাশে। শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে অধায়নরত ও সংগঠনটির ৫০ জন শিক্ষার্থী।
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পাঠশালার সদস্যরা সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ, শীতবস্ত্র ঈদবস্ত্র বিতরণসহ নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। পাঠশালা ২১ এর বর্তমান সভাপতি শামীম রেজা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের আর্থিক সহযোগীতায় এই সকল সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মূলত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধেই সংগঠনটি কাজ করছে।
৭ বছরে পথ চলায় পাঠশালা ২১ তৈরি করেছে অনেক মেধাবী মুখ। পিএসসি, জেএসসি ও এস এস সি পরীক্ষায় পাঠশালা ২১ এর শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। এদেরই একজন মেধাবী মুখ স্বপ্না। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু দারিদ্রতার কারনে স্বপ্নার পরিবারের পক্ষে আর তার পড়াশুনার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তখনই এগিয়ে আসে পাঠশালা ২১। পাশে এসে দাঁড়ায় একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা স্বপ্নার পাশে। স্বপ্নার মলিন চোখের ঝলঝলে স্বপ্নকে স্বার্থক করতে তাকে সিলেট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে সে এখন সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্রী।
আর এক মেধাবী মুখ আবিদার ৫ ভাই ও ১ বোনের দরিদ্র পরিবারে যখন পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছিল তখন পাঠশালা ২১ এর সদস্যরা তার সহযোগীতায় এগিয়ে আসে। আবিদা ২০১৮ সালে মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ন হয়েছে। এখন সে সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্রী।
নানান চরাই উৎরাই পেড়িয়েই সাফল্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে পাঠশালা ২১ এর কার্যক্রম। এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অনেকেই। পাঠশালা ২১ এর উপদেষ্ঠা সহযোগী প্রফেসর ড. ফুয়াদ মন্ডল জানান শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ঠিকঠাকমত হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য নিয়মিত হোম ভিজিট করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাঠশালা ২১ এর মাধ্যমে আরও মেধাবী মুখ তৈরি করা যাবে।
সিকৃবি’র রেজিস্ট্রার মো: বদরুল ইসলাম শোয়েব বলেন, সিকৃবি শিক্ষার্থীদের একটি মহতি উদ্যোগ পাঠশালা ২১। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৩৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী উপকৃত হয়েছে। তিনি বলেন এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বাদ দিয়ে জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সকলের সার্বিক সহযোগীতায় পাঠশালা ২১ আলোর পথের কান্ডারী হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।