প্রতিটি ডিমে ১ টাকা লোকসান গুনছেন বানিজ্যিক লেয়ার খামারীরা

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম::প্রতিটি ডিমে ১ টাকা লোকসান গুনছেন বানিজ্যিক লেয়ার খামারীরা। খামারীগণ বলেন, ক্রমাগত লোকসানে ছোট ছোট মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেলে সব ধরনের ডিম এবং মুরগির মাংস দাম দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তখন স্বল্প মূল্যের এ প্রাণিজ প্রোটিনের ভাবে আমাদের সব কিছুই পিছিয়ে যাবে। আগামীতেও যদি কাঁচামালের মূল্য যদি বৃদ্ধি পেতেই থাকে তাহলে পোল্ট্রি শিল্প হুমকির সম্মুখীন হবে এবং খামারীগন খামার বন্ধ করতে বাধ্য হবে। আন্তর্জাতিক সংকট কাটাতে সরকারের উচিত এখনই এ উদ্যোগী হওয়া। সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া সংকট উত্তরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

দেশের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল বিবিসি নিউজ- এর পোল্ট্রি শিল্প নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পোল্ট্রি শিল্পের সাথে সকল শ্রেণীর স্টেকহোল্ডারবৃন্দ।



প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় মুরগীর মাংস এবং ডিম উৎপাদনে দেশের ছোট-বড় খামারগুলোতে প্রায় ৮০ লক্ষ টন খাদ্যের সরবরাহ আসে দেশের প্রায় ৪০০ ফিডমিল থেকে। আর পোল্ট্রি ফিড তৈরির অধিকাংশ কাঁচামাল আসে আমদানির মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি নির্ভর পোল্ট্রি ফিডের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
 
ফিডমিল ব্যবসায়ীগণ বলেন, গত ২ বছরে কাঁচামালের দাম ৬৩ শতাংশ বাড়লেও পোল্ট্রি শিল্পের স্বার্থে লোকসান দিয়ে ফিড বিক্রয় করতে হচ্ছে তাদের। ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিয়াব)-এর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জনাব নজরুল ইসলাম বলেন, ফিডের মূল্য ২০ শতাংশ এর বেশি  বৃদ্ধি করতে পারেননি তারা। এর ফলে ছোট ফিডমিল যাদের উৎপাদন ২-৫ টন এমন প্রায় ১০০ এর মতো ফিডমিল বন্ধ হয়ে গেছে।



অগ্রাধিকার বিবেচনায় বেশিরভাগ কাঁচামাল আমদানিতে শুণ্য শুল্ক সুবিধাও যথেষ্ট নয় এই সংকট মোকাবেলায় বলেন, পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ীগণ। ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ-এর সভাপতি জনাব এহেতশাম বি শাজাহান বলেন, পোল্ট্রি সেক্টরের জন্য আলাদা পোল্ট্রি বোর্ড থাকা প্রয়োজন। তাৎক্ষণিকভাবে যদি সরকারী কোনো উদ্যোগ গ্রহন করা না হয় তাহলে এই শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বাজারে ডিম কিংবা মাংস পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাড়াতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল-এর সভাপতি জনাব মসিউর রহমান বলেন, বানিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গৃহীত সয়াবিন মিলের রপ্তানির অনুমতি প্রদান করায় বর্তমানে দেশে সয়াবিনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার ফলে ৩৫ টাকা কেজির সয়াবিন মিল ক্রয় করতে হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। তিনি বলেন, যদি সয়াবিন ২০ টাকা করেও কেজিতে বাঁচানো যেতো তাহলে দু:খ-দুর্দশা কিছুটা লাঘব করাযেতো। বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে মনে করেন তিনি।



প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক জনাব ডা. আইনুল হক বলেন, কৃষির বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষ করে ক্রপ সেক্টরে সরকার ভর্তুকি প্রদান করে। গুরুত্বের প্রেক্ষিতে এই খাতেও ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলেন তিনি। সয়াবিন মিল, রাইস ব্রান, হুইট ব্রান ইত্যাদি রপ্তানি বন্ধ করা এবং আপদকালীন অবস্থায় অল্প সুদে অবিলম্বে ঋণ দেওয়া প্রয়োজন বলেন প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক এই মহাপরিচালক।

দেশের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে সয়াবিন মিলসহ সকল ধরনের ফিডমিল রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ জানিয়েছেন বিশ্লেষকগণ। অন্যথায় পুষ্টির ঘাটতি বিপর্যস্ত হলে দেশের আপামর জনসাধারণ পুষ্টি বিপর্যয়ে পড়বে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাই সচেতন মহল অতি দ্রুত সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

প্রতিবেদনটির বিস্তারিত ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন