আলোকিত শিশু’র উদ্যোগে সম্মাননা পেলেন ছয়জন গ্রামীণ নারী

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:আন্তর্জান্তিক গ্রামীণ নারী দিবসকে সামনে রেখে সম্প্রতি, ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ ও ‘ইউকে এইড’ এর সহায়তায় ‘আলোকিত শিশু’ ও ‘ভলান্টিয়ার অপরচুনিটিজ’ কর্তৃক আয়োজিত হলো ‘আলোকিত গ্রামীণ নারী সম্মাননা ২০২১’ অনুষ্ঠান। রাজধানীর খামারবাড়ি সড়কে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-তে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি পালিত হয়। এই আয়োজনের মূল স্লোগান ছিল “গ্ৰামীণ নারী দিবসের দাবি, ঘরে ঘরে নারীর কাজের স্বীকৃতি"।

এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল আলোকিত গ্রামীণ নারীদের সফল হয়ে ওঠার পেছনের গল্পগুলো জানা এবং তাদের কমিউনিটিতে অসাধারণ নেতৃত্ব বা অবদানের জন্য সন্মাননা প্রদান করা। মূলত দুইটি ক্যাটাগরিতে তিনজন করে এই সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে, ক্যাটাগরিগুলো হল ‘গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা’ ও ‘গ্রামীণ নারী নেতৃত্ব’। গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা ক্যাটেগরিতে তিনজন বিজয়ী হলেন- মোছাঃ জমিলা বেগম, শাপলা দেবী ত্রিপুরা ও শিরিন আক্তার আশা। এবং গ্রামীণ নারী নেতৃত্ব ক্যাটেগরিতে বিজয়ী হয়েছেন- খুজিস্থা বেগম জোনাকী, সাবিত্রী হেমব্রম ও মনিষা মীম নিপুণ।

পুরস্কার বিতরণের পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদের প্রাপ্য সম্মান, স্বীকৃতি ও অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দেশব্যপী আটটি বিভাগের ত্রিশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী কর্তৃক সাক্ষরিত ১১,০০০ লিখিত অঙ্গীকারনামা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নিকট হস্তান্তর করা হয়। “স্বাক্ষর হোক পরিবর্তনের অঙ্গীকারনামায়” শীর্ষক এই আয়োজনে লক্ষ্য ছিল ১০,০০০ তরুণ হতে গ্রামীণ নারীর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অঙ্গীকার ও স্বাক্ষর সংগ্রহ করা। এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১১,০০০ তরুণ গ্রামীণ নারীদের জন্য ভিন্নরূপী অঙ্গীকার যেমন- নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতারোধ, বাল্যবিবাহ রোধ, গ্রামীণ নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারী বরাদ্দ নিশ্চিতসহ বিভিন্ন অঙ্গীকার লিখে ও স্বাক্ষর করে সংহতি জানান।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য আরোমা দত্ত। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেজোয়ান হক, প্রধান বার্তা সম্পাদক, মাছরাঙা টেলিভিশন; শম্পা রেজা, অভিনেত্রী ও এক্টিভিস্ট; রাশেদ মুজিব নোমান, প্রতিষ্ঠাতা, হিউম্যানিটি ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফাউন্ডেশন; আহসান ভুঁইয়া, প্রতিষ্ঠাতা, পরিবর্তন করি; তাওহিদা জাহান, সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারপার্সন, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বিপাশা শারমিন হোসেন, সিনিয়র টেকনিকাল এডভাইজার, সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ; রেজওয়ানুল হক জামি, হেড অফ ই-কর্মাস, এটুআই ও বনশ্রী মিত্র নেওগী, জেন্ডার এডভাইজার, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দুই ক্যাটেগরির বিচারক প্যানেল- এলেন সেলিমা হোসেন, প্রোগ্রাম ও প্রকল্প পরিচালক, বেটারস্টোরিজ লিমিটেড; সারাহ জিতা, জাতীয় পরামর্শদাতা, ইউএনডিপি; তানজিরাল দিলশাদ দিতান, প্রতিষ্ঠাতা, ক্রেয়নম্যাগ; নাসিমা আক্তার নিশা, যুগ্ম সম্পাদক, ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ; শবনম মুশতারী, কান্ট্রি ম্যানেজার, লিডারশিপ ইন মোশন ও সামিয়া আফরিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ফোর্ট্রেস ভেনচারস লিমিটেড।

প্রথমে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন আলোকিত শিশু এর প্রতিষ্ঠাতা মিথুন দাস কাব্য। অতঃপর বিশেষ অতিথি ও বিচারকগণ তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তারা গ্রামীণ নারীদের কাজের স্বীকৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন এবং নারী-পুরুষ বিভেদ দূর করে পরিপূর্ণ মানুষ হবার আহ্বান জানান। অভিনেত্রী শম্পা রেজা বলেন, "নারী ও পুরুষের পার্থক্য কেবল বাহিরের অবয়বে। তাই বাহিরটা ভেদ করে অন্তরের উন্নয়নের লক্ষ্য রাখতে হবে।"

এছাড়াও তারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের প্রশংসা করে জানান এধরনের আয়োজন গ্রামীণ নারীদের তাদের ভিন্নধর্মী কাজ ও সংগ্রামকে আরো উৎসাহিত করবে। এরপর বক্তব্য রাখেন বিজয়ী নারীরা। তারা তাদের অভাবনীয় সংগ্রাম, ত্যাগ ও প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে তাদের উঠে আসার গল্পগুলো তুলে ধরার মাধম্যে দর্শকশ্রোতাদের অনুপ্রাণিত করেন।

গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার বিজয়ী মোছাঃ জমিলা বেগম, একজন নারী কসাই, তিনি তার এই পেশার অভিজ্ঞতা ব্যাখা করেন। তিনি বলেন, "শুরুতে যখন এই পেশায় আসি, তখন কেউ এটিকে ভালো চোখে দেখেনি। অনেকে অনেক রকম কথা শুনিয়েছে। কিন্তু আজ যখন বিভিন্ন জায়গা থেকে এতো সম্মাননা পাই তখন মনে হয় আমি ভুল পথে এগোইনি"। গ্রামীণ নারী নেতৃত্ব ক্যাটাগরি এর একজন বিজয়ী সাবিত্রী হেমব্রম তার আদিবাসী অধিকার আদায়ের যাত্রার কথা বলেন।

পরিশেষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি আরোমা দত্ত। তিনি তার নারী হিসেবে সংগ্রামের কথা চিত্রায়ীত করেন এবং বলেন "আজকের আয়োজনে যারা বিজয়ী হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন তারা দেশের জন্য দৃষ্টান্ত এবং গর্ব।" অতঃপর বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ ও একটি ছোট সাংস্কৃতিক পর্বের মাধ্যমে পর্দা নামে অনুষ্ঠানের।

‘আলোকিত শিশু ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং নেতৃত্বের দক্ষতা প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক ও আর্থিক স্বাধীনতা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কাজ করে। ‘ভলান্টিয়ার অপরচুনিটিজ বাংলাদেশ’ দেশের সর্ববৃহৎ অনলাইনভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক প্লাটফর্ম এবং সারা দেশজুড়ে স্বেচ্ছাসেবকদের সর্বপ্রথম স্বেচ্ছাসেবক ব্যাংক যা একঝাঁক দক্ষ, শিক্ষিত এবং উদ্যমী তরুণ প্রজন্মের প্রতিফলন।