নবায়নযোগ্য জ্বালানী এবং জলবায়ু ক্ষতিপূরণের দাবি তরুণদের

Category: সমসাময়িক Written by agrilife24

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের জীবাশ্ম জ্বালানী আমদানি  যেমন এলএনজি আমদানির উপর দেশের উচ্চ নির্ভরশীলতা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকারক কার্যক্রম বন্ধ করার এবং একটি জ্বালানি নিরাপদ ও টেকসই বাংলাদেশের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করারও দাবি জানান।

ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস বিশ্বব্যাপী স্কুল শিক্ষার্থী আন্দোলন 'ফ্রাইডেস ফর দ্য ফিউচার' আয়োজিত বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসেবে ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং ঐতিহাসিকভাবে দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে বিশ্বজুড়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়। 'উই ওয়ান্ট ক্লাইমেট জাস্টিস' স্লোগানকে সামনে রেখে রাজপথে এবং অনলাইনে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসাবে স্থানীয় তরুণরা এই আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুৎ ও তেল সংকট মুহুর্তে তরুণরা জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির ইস্যুতে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন এটি আমদানি বন্ধ করা হয়। এলএনজি একটি জীবাশ্ম জ্বালানী যা আমদানি করতে গিয়ে দেশের অর্থনীতির উপর অনেক চাপ তৈরি হচ্ছে। বরং, বিদ্যুৎ খাতের নতুন মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানীর অংশ বৃদ্ধি করা হলে জ্বালানি সুরক্ষিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তরুণদের দাবির মধ্যে আরও ছিল জলবায়ু দূষণ বন্ধ করা, যার মধ্যে রয়েছে উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখা এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত করে কার্বন নিঃসরণ কমানো।

তারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করেছেন এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির জীবন ও সম্পদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা তৈরি এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অভিযোজনমূলক পদক্ষেপের জন্য তহবিল সরবরাহ করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য একটি দ্রুত-কার্যকর কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য উন্নত দেশগুলিকে আহ্বান জানিয়েছেন।

এই বছর, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ধর্মঘট সারা দেশে ২৬ টি জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা তাদের দাবিসহ ব্যানার, ফেস্টুন এবং প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছে।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্বন নিঃসরণ কমানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় উন্নত দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করেন তরুণরা। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবের কারণে বিশ্ব এখন একটি সংকটময় মুহূর্ত পার করছে যাকে জাতিসংঘ মানবতার জন্য একটি অশনি সংকেত হিসেবে অভিহিত করেছে। মূলত ক্ষতিকারক জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের জন্য সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই প্রকৃতি এবং পরিবেশ-ধ্বংসকারী কার্যকলাপের দায় নিতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানীর প্রসারে তাদেরকে কাজ করতে হবে।

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’র নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, “জলবায়ু সংকট আমাদের দেশ ও বিশ্বের জন্য একটি বড় দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে, আমাদের দেশের জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভরতা বন্ধ করা এবং ভবিষ্যতের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানীকে উৎসাহিত করা জরুরি। একইভাবে, দূষণকারী দেশগুলির কাছ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই পৃথিবী আমাদের। তাই এই পৃথিবীকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তাই, আমরা বাংলাদেশের জন্য একটি সবুজ ভবিষ্যৎ এবং অভিযোজন অর্থের ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায়বিচার দাবি করছি। "

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র পরিচালক ডক্টর সালিমুল হকও তরুণদের সাথে তার দৃঢ় সংহতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন “এটা স্পষ্ট যে দূষণকারী দেশগুলোর জন্যই মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে; সরকার এবং জীবাশ্ম জ্বালানী কোম্পানি উভয়ই দায়ী এবং তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। জলবায়ু সঙ্কটের পিছনে প্রকৃত অপরাধী যারা, সেই জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে মোকাবেলার সময় এসেছে । এরা মুনাফার লোভে জেনেশুনে ক্ষতি করেছে এবং দূষণকারী দেশগুলির রাজনীতিবিদদেরও প্রভাবিত করছে যারা ইউএনএফসিসিসি-এর অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছে।”

ধর্মঘটে উপস্থিত ছিলেন ধর্মঘটে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড: আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার ও দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ডক্টর  বদিউল আলম মজুমদার। ডক্টর  বদিউল আলম মজুমদার সংহতি প্রকাশ করে বলেন, "প্রকৃতি-পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, দায়িত্বশীল আচরণ এবং পরিবেশ ধ্বংসের উদ্যোগ প্রতিরোধ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। তরুণরাই পারে এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।"