নানা আয়োজনে বিএলআরআই-এ বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ-২০২১ পালিত

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:নানা আয়োজনে রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)-এ উদযাপন করা হলো বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ-২০২১। আজ মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সপ্তাহটি উদযাপিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা অনুসারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে সপ্তাহটি।

“হোক সচেতনতার বিস্তার, চাই এন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স থেকে নিস্তার (স্প্রেড অ্যাওয়ারনেস, স্টপ রেজিসট্যান্স)” প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স অ্যাকশন সেন্টার, বিএলআরআই-এর আয়োজনে প্রথমবারের মত বিএলআরআই সপ্তাহটি উদযাপন করছে। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকসমূহের বিষয়ে জন সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে এন্টিবায়োটিকের অকার্যকরিতা প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে সপ্তাহটি পালন করছে বিএলআরআই।

সকালে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালির মধ্যে দিয়ে শুরু হয় দিনের আয়োজন। র‌্যালিটি বিএলআরআই-এর প্রশাসনিক ভবনের নিচ থেকে শুরু হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পর্যন্ত ঘুরে পুনরায় বিএলআরআই-এর প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। বিএলআরআই-এর অতিরিক্ত পরিচালক জনাব আজহারুল আমিন-এর নেতৃত্বে ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা এই র্যালিতে যোগ দেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল)-এর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সুসান নিলি কায়দোস-ডানিয়েলস।

র‌্যালি শেষে বিএলআরআই-এর প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে একটি মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা এই ধরনের আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্সের উপরে জন সাধারণকে সচেতন করে তোলার আহ্বান জানান। এসময় তারা অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারমুক্ত নিরাপদ খাদ্যদ্রব্য এবং প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনের বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেন।

বিএলআরআই-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রাণিস্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ এসময় বলেন, আমরা সকলেই জানি অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হতে পারে, তবুও আমরা ডাক্তারের কোন ধরনের পরামর্শ ছাড়াই নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করছি। এতে করে একদিকে যেমন আমরা আমাদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলছি, তেমনিভাবে দেশের জন্য, জাতির জন্যও হুমকির সৃষ্টি করছি।

সিডিসি-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সুসান নিলি কায়দোস-ডানিয়েলস এসময় বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকস রেজিসট্যান্স আমাদের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে সেই সংক্রান্ত পূর্বানুমানগুলো ভয়াবহ। অ্যান্টিবায়োটিকস ব্যবহারে আমাদের সাময়িক উপশম হচ্ছে, কিন্তু নিয়ম না মেনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে তা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে। নিয়ম না মেনে ইচ্ছা মত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের যে প্রবণতা আমাদের মাঝে রয়েছে, তা বন্ধ না করতে পারলে অচিরেই আর অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না।

বিএলআরআই-এর অতিরিক্ত পরিচালক আজহারুল আমিন বলেন, অজ্ঞানতা অভিশাপ, জ্ঞান সেই অভিশাপ জয় করার লড়াইয়ের অস্ত্র। যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকসমূহ আমাদের জানতে হবে, সাধারণ জনগনকে জানাতে হবে। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহারের কারণে মারা যাচ্ছে। ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য জীবাণু যদি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স হয়ে যায়, তবে অচিরেই মানব জাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও আজকাল নিজে নিজে ডাক্তার হয়ে ওঠার একটি প্রবণতা লক্ষ্যণীয়, যা মারাত্মক বিপদজনক। এই সকল প্রবণতা বন্ধ করতে হবে, তা না হলে কোন চিকিৎসাতেই আর কোন কাজ হবে না।