গোল্ডেন রাইস হতে পারে ভিটামিন 'A'-এর একটি টেকসই উৎস

Category: ফার্ম টু ডাইনিং Written by agrilife24

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) আজ সকালে “ভিটামিন এ-এর ঘাটতি মেটাতে “ইম্পরট্যান্স অব গোল্ডেন রাইস অ্যাজ এ চয়েস টু সাসটেইন ভিটামিন এ সাফিসিয়েন্সি- লুকিং অ্যাট পভারটি অ্যান্ড আন্ডার নিউট্রিশন নেক্সাস” শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। অংশগ্রহণকারীরা গোল্ডেন রাইসের বায়োসেফটি অনুমোদনের পথে বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন এবং কিভাবে এটি সম্ভব কম সময়ে অন্যমোদন পেতে পারে সে বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। কারণ, তারা মনে করেন, এটি ভিটামিন এ-এর একটি টেকসই উৎস। অংশগ্রহণকারীদের মতে, এই চাল ভিটামিন এ-এর অভাব পূরণে সরকারের পুষ্টি সংক্রান্ত চলমান বিভিন্ন কার্যক্রমে অন্যতম কার্যকরী একটি উপায় হতে পারে।

ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক। এছাড়াও, এসিআই লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডঃ এফএইচ আনসারি, আইসিডিডিআরবি এর নির্বাহী পরিচালক ডাঃ  তাহমিদ আহমেদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডঃ সাত্তার মন্ডল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ লুৎফুল হাসান, ডঃ মো. শাহজাহান কবির, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), ডঃ হোমনাথ ভান্ডারী, ইরি বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট নাগরিক সমাজের সদস্যরা ওয়েবিনারে যোগদান করেন।

ওয়েবিনারের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইরি বাংলাদেশের প্রাক্তন কান্ট্রি প্রধান ড নোয়েল মেগর। উপস্থাপনাটি গত কয়েক দশকে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি পূরনে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অগ্রগতি তুলে ধরে, যেমন ভিটামিন এ ক্যাপ্সুল বিতরন, পুষ্টি চাল ও পুস্টি তেল কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্রতম এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগনের ভিটামিন এ-এর ঘাটতি প্রায় পর্যাপ্ত মাত্রা অর্জনের প্রশংসা করে।

তাঁরা মত প্রকাশ করেন যে সরকারের এসকল কার্যক্রমের পাশাপাশি, গোল্ডেন রাইস হতে পারে ভুক্তভোগী জনগনের ভিটামিন এর একটি স্থায়ীত্তশীল উৎস হতে পারে এবং সরকারের অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি চলতে পারে।

গোল্ডেন রাইস সবচেয়ে দরিদ্র মধ্যে চাষ এবং বিতরণ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, যারা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার প্রতিদিন কিনতে পারে না, এবং মুলত ভাতের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। গোল্ডেন রাইস এই সকল মানুষদের জন্য ভিটামিন এ-এর সম্পূরক উৎস হতে পারে। শুধুমাত্র গোল্ডেন রাইস মানুষের গড় ভিটামিন এ-এর চাহিদা ৩০-৪০% পূরণ করতে পারে। গোল্ডেন রাইসের ফলন ব্রি ধান২৯-এর ফলনের সমান এবং এর চাষ, সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণ প্রক্রিয়া ও স্বাদ প্রচলিত ধান থেকে আলাদা নয়। এছাড়াও ইনব্রিড ধান হওয়াতে, যে কোন কৃষক নিজেই এই ধান থেকে তাদের বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।

আইসিডিডিআরবি এর নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “আমাদের দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং খাদ্য নিরাপত্তার উপর চাপের পরিপ্রেক্ষিতে, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি মোকাবেলায় একাধিক হস্তক্ষেপ এবং কৌশল নেওয়ার সময় এসেছে। এরকম একটি হস্তক্ষেপ হল ভিটামিন এ ফর্টিফাইড গোল্ডেন রাইস। গোল্ডেন রাইসের গবেষণার তথ্য নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এর ফলে জাতটি দ্রুত অবমুক্ত করা যাবে ফলে কৃষক এবং ভোক্তারা এটি খেতে পারবেন।”

ডঃ হোমনাথ ভান্ডারী, ইরি বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, “আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট চাল-ভিত্তিক কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল মানুষ এবং জনসংখ্যার দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করার জন্য নিবেদিত। ইরি পুষ্টি সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। ইরি এবং ব্রি যৌথভাবে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি পূরণের বিকল্প হিসাবে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইস তৈরি করেছে। সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পেলে, গোল্ডেন রাইস বাংলাদেশকে ভিটামিন এ পর্যাপ্ত দেশে পরিণত করার জন্যে সরকরারের চলমান কার্যক্রমে সহায়তা করতে পারবে।”

ব্রি এবং ইরি সম্মিলিতভাবে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি পূরণের বিকল্প হিসাবে বেটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ বায়োফোর্টিফাইড রাইস ("গোল্ডেন রাইস") এর উন্নয়নে অনেক বছর ধরে কাজ করছে। জনপ্রিয় বোরো ধানের জাত, ব্রি ধান২৯ এ, বিটা-ক্যারোটিন সংযুক্ত করা হয়েছে যা সারা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। ব্রি বায়োসেফটি ক্লিয়ারেন্সের জন্য জাতীয় বায়োসেফটি কমিটির কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন জমা দিয়েছে। তবে দীর্ঘ চার বছর অতিক্রম করার পরেও আজ পর্যন্ত, এটি সেই ছাড়পত্র পায়নি।