মাংসের চাহিদা পূরণে দেশের আবহাওয়া উপযোগী জাত-এর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে-ড. মো: শফিকুর রহমান

Category: ফার্ম টু ডাইনিং Written by agrilife24

রাজধানী প্রতিনিধি:বাংলাদেশে বর্তমানে শীতকাল চলছে, আজকে (৬ জানুয়ারী) রাজধানী ঢাকার আবহাওয়া অনেকটা ইউরোপের মতো হলেও সারা বছর কিন্তু এরকম আবহাওয়া বিরাজ করে না। আমাদের দেশে বছরের প্রায় অধিকাংশ সময় উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করে। কাজেই মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী জাত তৈরি এবং খামারীদের সেটি লালন পালনে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলেই আমরা মাংস উৎপাদনে আরো একধাপ এগিয়ে যাব।

রাজধানীর পুরাতন বানিজ্য মেলার মাঠে দুই দিনব্যাপী ঢাকা ক্যাটেল এক্সপো'র প্রথম দিন (৬ জানুয়ারী) বিকাল ৪ টায়  "Climate Smart suitable Beef Breed for tropical environment in Bangladesh"-শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন সাভারের বিসিএস লাইভস্টক একাডেমি এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. মো: শফিকুর রহমান (শশী)।  

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ডঃ মহিউদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) জনাব মোঃ আজহারুল ইসলাম খান। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডা. মোঃ জহিরুল ইসলাম।

ড. মো: শফিকুর রহমান বলেন, বীফ ব্রিড উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আবহাওয়া। সারা পৃথিবীতে মাংস উৎপানকারী ২০ থেকে ২৫ টি উন্নত জাতের গরু রয়েছে। সেগুলো মূলত শীত প্রধান দেশের লালন পালন উপযোগী। তবে আমাদের দেশে একটি ব্র্রিড রয়েছে যার নাম "ব্রাহমা" যেটি এই ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট আবহাওয়া থেকেই তৈরি করা। বাংলাদেশে অমিত মাংস উৎপাদনের এর আপার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে আমাদের দেশের কিছু স্থানীয় জাত রয়েছে যেমন রেড চিটাগাং ক্যাটেল, পাবনা ক্যাটেল, নর্থ বেঙ্গল গ্রে, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম এসব এলাকার ব্রিডগুলোকে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এগুলির ব্রিড কোয়ালিটি ভালো হলেও গ্রোথ পটেনশিয়ালিটি "ব্রাহমা"র মতো নয়। ব্রাহমা জাত যেহেতু এই দেশেই তৈরি হয়েছে তাই এই ট্রপিকাল রিজিয়নের জন্য এই জাতটি মাংসের জন্য খুবই উপযোগী জানান ড.শফিকুর রহমান শশী।

প্রেজেন্টেশনে তিনি "ব্রাহমা"র গবেষণালব্ধ ফলাফল গুলো উপস্থাপন করেন বলেন, আমাদের দেশে মোট মাংসের যে চাহিদা তা মোটামুটি আমরা পূরণ করে ফেলেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেক্ষিত পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে এখন আমাদের এগুতে হবে। কেননা ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের প্রতিবছর ১১ মিলিয়ন মেট্রিক টন মাংস প্রয়োজন হবে। বর্তমানে আমরা প্রায় নয় মিলিয়ন মেট্রিক টনের যোগান নিশ্চিত করতে পারছি। এই দুই মিলিয়ন মেট্রিক টন মাংসর চাহিদা পূরণ করতে গেলে আমাদের মাংস উৎপাদনকারী জাত উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।



জাত উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের অতি দ্রুত একটি অতি উন্নত মানের জাত আমদানি করতে হবে যেটি হতে পারে "ব্রাহমা"। মাংসের মার্বেলিং কোয়ালিটি দিয়ে হিসাব করলে দেখা যায় "ব্রাহমা"র মাংসের গুণগণ গুণগতমান সবচেয়ে বেশি এবং সুস্বাদু। এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সর্বাধিক এবং ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠলেও এর তেমন কোনো স্ট্রেস দেখা যায় না। এর রিপ্রোডাক্টিভ ক্যাপাসিটিও ভালো এবং নিম্নমানের খাদ্যেও এরা উচ্চ মানের মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম।

expo তে আসা অধিকাংশ উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে তিনি জানতে পারেন এখানের অধিকাংশ উদ্যোক্তা গরু কিনে বড় করে বিক্রি করেন। এটিকে তিনি নেগেটিভ মনে করেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন বাছুর তৈরি করে তারপরে ষাড় উৎপাদন করে বিক্রি করতে হবে। কারণ বাছুরের যত্ন সঠিক সময় না নিলে পরবর্তী সময় যতই খাদ্য, বাসস্থান এসবের পিছনে খরচ করা হোক না কেন কাঙ্খিত উৎপাদন আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ফলে টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত হবে না এজন্যই একটি মাদার হার্ড তৈরি করে খামারীদের ব্যবসা পরিচালনা করার পরামর্শ দেন ড. শফিকুর রহমান শশী।