পোল্ট্রি শিল্পের জন্য স্থায়ী সমাধান জরুরি

Category: বিজনেস ও ইন্ডাস্ট্রি Written by agrilife24

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বেশ কিছুদিন ধরেই বাড়ছে সব ধরনের মুরগির দাম। মনে করা হচ্ছে মুরগির খাদ্যের দাম বাড়াতে দিনদিন অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে মুরগির দাম। দেশে প্রাণীজ আমিষের সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকে এই ব্রয়লার মুরগি। শঙ্কা তৈরি হয়েছে ছোট ছোট মুরগির খামার বন্ধের। এভাবে খামার বন্ধ হয়ে গেলে মুরগি এবং ডিমের দাম দ্বিগুন হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

দেশের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে অন্যতম অবদান রাখে পোল্ট্রি শিল্প। অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা পূরণে হিমসিম খাচ্ছে সাধারণ ভোক্তাগণ। ফিডের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে পোল্ট্রির বাজারদর। সংকট এড়াতে সরকারিভাবে নীতি সহায়তা এবং হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যবসায়ী এবং বিশ্লেষকগণ।

এসব বিষয় নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিশ্লেষণ বিষয়ক ডিবিসি নিউজ-এর নিয়মিত আয়োজন ইসলামী ব্যাংক টালিখাতায় রঞ্জন শুভ্র'র সঞ্চালনায় "ফিডমিলের বাড়তি দামে পোল্ট্রি কী সংকটে?  শীর্ষক আলোচনায় অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন শামসুল আরেফিন খালেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, বিপিআইসিসি এবং ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক পরিচালক (উৎপাদন), প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিপিআইসিসি এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, মহামারির শুরু থেকেই সংকট সৃষ্টি হয়েছে তবে প্রকট আকার ধারণ করে গতবছরের শেষ দিক থেকে। বর্তমানে বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে। সাধারণত মার্চ মাস থেকে সুলভ মূল্যে কাঁচামাল আমদানি করা হয় তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে এবং কাঁচামালের বেড়েছে বহুলাংশে।

গত বছর মার্চ মাসে যেখানে ভুট্টার মূল্য ছিল ২২-২৩ টাকা তা বর্তমানে ৩৩ টাকার উপরে, সয়াবিন মিলের দাম ৪০ টাকা থেকে বেড়ে দাড়িয়েছে ৬০-৭০ টাকায়। ফিড উৎপাদনে ৭০-৭৫% খরচ হয় ভুট্টা এবং সয়াবিন মিলের জন্য। যার ফলে ফিডের উৎপাদন খরচ ২৫-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে কাঁচামালের কারণে। কাঁচামালের কারনে ফিডের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে তবে তা যথাযথ পরিমাণে করানো হয়নি।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে ফিডের মূল্য কেজি প্রতি আরো ৪-৫ টাকা বাড়ানো প্রয়োজন হলেও ফিড মিলাররা কিন্তু দাম বৃদ্ধি করেননি যোগ করেন শামসুল আরেফিন খালেদ। জাহাজের শিপিং খরচ বৃদ্ধি পাওয়া, বন্দরে খরচ বৃদ্ধি পাওয়াসহ বিভিন্ন কারনে ফিডের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও ফিড শিল্পের উদ্যোক্তারা সে তুলনায় ফিডের মূল্য বৃদ্ধি করেন নি।

তিনি প্রস্তাবনা হিসেবে বলেন,  অন্তত ২০২৫ সাল পর্যন্ত আমদানিতে শুল্কমুক্ত করা, ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন করে প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা, বিদেশে আপাতত সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ করা এবং প্রসেসড মার্কেট তৈরী করা হলে দেশের পোল্ট্রি শিল্প ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়াতে পারবে। দেশের বিভিন্ন বন্দরগুলোতে কাঁচামাল সংরক্ষণ করার জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, লোডিং- আনলোডিংয়ের সময় কমিয়ে আনা সহ পোল্ট্রি শিল্পের জন্য আলাদা বোর্ড তৈরি করে স্থায়ী সমাধানের কথা জানান তিনি।

প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন ঈদ, পুজাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বাজারে যে অতিরিক্ত চাহিদা বৃদ্ধি পায় তার ফলেই মুরগির দাম বৃদ্ধি পায়। তবে মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ড্রেসিং ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা এবং চাহিদাকালীন সময়ে ড্রেসিং ব্রয়লার বাজারে সরবরাহ করা এসব ব্যাপার নিয়ে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

তিনি বলেন গতবছর সংকট নিরসনে সরকার বড়, মাঝারী এবং ক্ষুদ্র খামারীদের মাঝে প্রনোদনা প্যাকেজ উপহার দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে সয়াবিন মিলের যে রপ্তানি চলছে তা অতি শীগ্রই বন্ধ হবে এবং দেশের পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে গৃহীত বৃহৎ সিদ্ধান্ত   আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে আগামী মাসের ১৬ তারিখের ভেতরে আসতে পারে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ব্যবসা যেন ক্রেতাবান্ধব ও ব্যবসায়ী বান্ধব হয় এবং দুই পক্ষই যাতে লাভবান হোন সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

 "ফিডমিলের বাড়তি দামে পোল্ট্রি কী সংকটে? আলোচনা দেখতে এখানে ক্লিক করুন