সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড পেলেন বাকৃবি শিক্ষার্থী মওদুদ

রাজধানী প্রতিনিধি:বাংলাদেশ স্কাউটসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) রোভার স্কাউট গ্রুপের মোঃ মওদুদ আহম্মেদ। শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, শিশুদের ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো, টিকা দান প্রদান, বৃক্ষরোপন ও পরিচর্যা, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বর্ন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণসহ সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ সময় কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এই অর্জন করেন তিনি।

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ স্কাউটস এর সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, শনিবার বিকাল ৪.০০ মিনিটে ঢাকা মেট্রোপলিটন স্কাউটস এর ‘নিজাম হল’ এ ২০১৮ সালের সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান স্কাউট ব্যক্তিত্ব হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রধান জাতীয় কমিশনার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মাননীয় কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান এবং বিশেষ স্কাউট ব্যক্তিত্ব হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউটস এর কোষাধ্যক্ষ ড. মোঃ শাহ্ কামাল উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় উপকমিশনার (সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য) ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন  জাতীয় কমিশনার (উন্নয়ন) আখতারুজ জামান খান কবির এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন  জাতীয় উপকমিশনার (সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য) মোহামম্দ শাহীন রাজু। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্কাউটস এর জাতীয় কমিশনার (সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য) কাজী নাজমূল হক।

বাংলাদেশ স্কাউটসের সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য বিভাগ স্কাউট/রোভার স্কাউটদেরকে সমাজসেবা ও সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আত্মনিয়োগ করে মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করার স্বীকৃতিস্বরূপ এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে থাকে।
 
অ্যাওয়ার্ড অর্জনকারী শিক্ষার্থী মওদুদ আহম্মেদ জানান সমাজের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। আজকের এই অর্জনে সমাজের জন্য আরো বেশী বেশী কাজ করতে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে বিশ্বাস করি। তিনি বর্তমানে তরুন প্রজন্মকে সমাজের জন্য কাজ করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এদিকে  সম্মানজনক এই অ্যাওয়ার্ড অর্জন করায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রোভার স্কাউট লিডার ড. জহিরুল আলম বলেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মওদুদ বাকৃবি রোভার স্কাউট গ্রুপের গর্ব। আমি তার সাফল্য কামনা করি। রোভার স্কাউটের গ্রুপ লিডার মোছাঃ সাদেকা হক জানান মওদুদের এই অর্জন রোভার স্কাউট গ্রুপের জন্য সত্যিই  অনেক আনেন্দর।

এই পদক পাওয়ায় তিনি তার অনুভূতি ব্যক্ত করে এগ্রিলাইফের এ প্রতিনিধিকে বলেন এখন তার সামাজিক দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। আগামীতে দেশ, সমাজসহ সকলের জন্য কিছুটা হলেও যেন সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে জন্য সকলের নিকট দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

উর্লেখ্য, সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড স্কাউট ও রোভার স্কাউটদের জন্য বিশেষ অ্যাওয়ার্ড। ১২ থেকে ২৫ বছর বয়স্ক তরুণ/তরুণীদেরকে একটি সুস্থ সমাজের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা প্রদানের লক্ষ্যে সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড চালু করা হয়। এই অ্যাওয়ার্ড অর্জন করতে হলে একজন স্কাউট ও রোভার স্কাউটকে তিনটি নির্দিষ্ট শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ক ব্যাজ অর্জন করতে হয় (টীকাদান কর্মী, শিশু স্বাস্থ্য কর্মী ও পুটি স্যালাইন)। সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড স্কাউটরা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাজ ও রোভার স্কাউটরা প্রশিক্ষণ স্তরের ব্যাজ অর্জনের পর পেতে পারে। এ অ্যাওয়ার্ড ও সনদ জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

১৯৮৮ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী সময়ে ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন কমিউনিক্যাল ডিজিজের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় একই সাথে ঐ সময়ে বাংদেশের মাতৃ ও শিল্প মৃত্যুর হারও ছিল আশংকাজনক। এ ধরনের একটি নাজুক অবস্থায় বাংলাদেশ স্কাউটস সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও World Vission বাংলাদেশের সাথে একটি যৌথ কর্মপন্থা ঠিক করে সরকারের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ২০ জন রোভার ও ২০ জন রেঞ্জার এর সময়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে World Vission তত্বাবধানে তাদের দিয়ে মাঠ পর্যায়ে দক্ষতা অর্জন করিয়ে তাদেরই সহযোগিতায় 'সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড’ এর বর্তমান প্রোগ্রামের বিষয়াবলী চূড়ান্ত করে স্কাউট ও রোভার স্কাউট প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় যা আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯৯২ সালে অনুমোদিত হয়।

১৯৯৫ সাল থেকে সমাজ উন্নয়ন স্কীম অনুযায়ী সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা শুরু হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৮৫৩ জন স্কাউট এবং ১৫৫ জন রোভার স্কাউটসহ মোট ১০০৮ জন সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ স্কাউট এর সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্হ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে সারা দেশের  বিভিন্ন কেন্দ্রে বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে সালে সারা বাংলাদেশ থেকে ১২ জন রোভার কে চুড়ান্তভাবে মনোনিত করা হয়।করোনার কারণে অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠান টি ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হয়।

মওদুদ কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষেদর ফার্ম স্টাকচার এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী।  সে আশরাফুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।