সরকারের মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আম রপ্তানীকে গতিশীল করতে পারে

ফিচার প্রতিবেদক:আমাদের দেশের আম রপ্তানীতে একটা স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। দেশের উৎপাদিত আম আমরা নিজেরা খেতে বেশ পছন্দ করি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, দিনাজপুর,কুষ্টিয়া এসব অঞ্চলে উৎপাদিত আম ২-১ দিনের মধ্যেই ঢাকাসহ বৃহত্তর জেলার ভোক্তাদের হাতে চলে আসে এবং সুন্দরভাবে বিক্রয় হয়ে যায়। এই একই আম যখন আমরা রপ্তানির উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করি তখন কিন্তু প্রসেসিং-এর যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লেগে যায়। এসব আমের প্রাথমিক স্টোরেজ ক্ষমতা অত্যন্ত স্বল্প মেয়াদী হওয়ায় রপ্তানীতে টেকসই হয় না।

সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে ফল রপ্তানীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রসঙ্গে আম রপ্তানীর উদাহরণ টেনে এসব কথা দেশের নীতি নির্ধারকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন এসিআই এগ্রিবিজনেস-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ড.এফ এইচ আনসারি।

ড. আনসারি বলেন, আম রপ্তানীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রথমেই আমাদের ভাবতে হবে দেশে নতুন জাতের উৎপাদনের কথা। অর্থাৎ বিদেশ থেকে আনা যেসব জাত ইতিমধ্যে আমাদের এখানে বেশ ভালো উৎপাদন করছে অথবা সুন্দরভাবে অভিযোজিত হয়েছে সেগুলোর চাষাবাদ সম্প্রসারণ করতে হবে। এসব জাত সম্প্রসারণ করতে গেলে যে নিম্নের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

অনেক জাতের আম গাছ আছে যেগুলোর বয়স ৫০ বছর ৬০ বছর থেকে ১০০ বছর হয়ে গেছে। এসব আমগুলোর গুনগতমান একেকটি একেক রকম এবং এসব জাতের ফলন হেক্টর প্রতি মাত্র সাত থেকে আট মেট্রিক টন। এ ধরনের আম রপ্তানি করে বহির্বিশ্বের ভোক্তাদের কাছে আমরা কোনভাবেই সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব না। সেই ক্ষেত্রে high-density অথবা আল্ট্রা ডেনসিটি আমের চাষ বাড়াতে হবে অর্থাৎ ৭ ফুট X৭ ফুট দূরে দূরে আম গাছ লাগাতে হবে। high-density অথবা আড্ডা আল্ট্রা ডেনসিটি আম উৎপাদন-এর ক্ষেত্রে আমের গুণগত মান ভালো হবে। এসব একটি গাছে ৩০-৪০ টি আম থাকবে ফলে এসব আমগুলো সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এসব আম গাছ থেকে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে যে আম উৎপাদন হবে সেইসব আমের উৎপাদন হবে হেক্টর প্রতি ১২ থেকে ২২ মেট্রিক টন পর্যন্ত। উৎপাদন বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন খরচ কমে যাবে তাহলে গুনগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই এটা রপ্তানির ক্ষেত্রে যে কোন দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে।

ড. আনসারি বলেন, এ ধরনের আম চাষ করতে হলে বিনিয়োগের পাশাপাশি ক্যাপাসিটি বিল্ড আপ করতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি উদাহরণ টেনে বলেন আমরা যদি সকালবেলায় ১০ গ্লাস পানি খেয়ে নেই আর সারাদিন যদি পানি না খাই তাহলে কিন্তু আমরা সুস্থ থাকব না। কিন্তু সারাদিন যদি আমরা এক গ্লাস এক গ্লাস করে পানি খাই তাহলে সুস্থ থাকা সম্ভব। তেমনি ভাবে আমের ক্ষেত্রে গাছে যদি ড্রিপ ইরিগেশন এর মাধ্যমে এক ড্রপ এক ড্রপ করে নির্দিষ্ট সময় পরপর পানি দিতে পারি তাহলে আম গাছ সবল থাকবে,আম সঠিকভাবে পুষ্ট হবে। আমের বর্ণ, গন্ধ, আঁশ সুন্দর হবে। সবমিলিয়ে চমৎকার একটি আম উৎপাদন করা সম্ভব যা বিদেশি ক্রেতাদের অতি সহজেই আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে এবং আমাদের আম রপ্তানি বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

ড্রিপ ইরিগেশন প্রসঙ্গে ড. আনসারি বলেন এখনো বাংলাদেশে সফলভাবে-এর প্রচলন হয়নি যদিও আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো সফলভাবে ড্রিপ ইরিগেশন-এর মাধ্যমে এ ধরনের আম উৎপাদন করে রপ্তানি করে যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ভারতে ড্রিপ ইরিগেশন-এর ক্ষেত্রে সরকার ফল চাষী/উদ্যোক্তাদের ৮০% থেকে কোন কোন ক্ষেত্রে শতভাগ ভর্তুকি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে তাদের ফল রপ্তানীতে উৎসাহিত করছে। সেখান থেকে উৎপাদিত আম, কলা, বেদানা রপ্তানি করে তারা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। আমাদের দেশের সরকারও এ ধরনের পরিকল্পনা নিলে বিপুল পরিমাণ ফল রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন ড: আনসারী।