নিরাপদ কৃষি, যান্ত্রিকীকরণ ও ধানের সমলয়ে চাষাবাদের গুরুত্ব

ড. জগৎ চাঁদ মালাকার:বাংলাদেশের আবহাওয়া মাঠফসল, ফল ও শাকসবজি চাষের খুবই উপযোগী। আমাদের দেশে রয়েছে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন-প্রখর সূর্য়ের আলো, উর্বর কৃষি জমি, ভালো সেচ ব্যবস্থাপনা, বৃষ্টিপাত এছাড়া রয়েছে প্রাকৃতিক বৈচিত্রের ষড়ঝতুর বাংলাদেশ। অর্থাৎ যে কোনো ফসল সফলভাবে উৎপাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশের কৃষি ক্রমেই খরপোষ কৃষি (Subsistance Agriculture বা স্বনির্ভর কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে (Commercial Agriculture) পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলস্বরূপ এদেশে বর্তমানে ড্রাগন ফল, মাল্টা, কমলা, স্ট্রবেরি, কফি, কাজুবাদাম, মেলন ইত্যাদি সফল ভাবে চাষ করা হচ্ছে।

বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব  বালাইয়ের বালাইনাশকের প্রতি সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়। মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। গবাদিপশু হাঁস মুরগি ও মাছের ক্ষতি হয়।উপকারী পোকা মাকড় ও জীব মারা যায়। পোকামাকড়ের পুনরুৎপত্তি হয়।  মাটির অণুজীব মারা যায়।খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়, দূষিত হয়। বালাইনাশকের অবশেষ ক্রিয়া দীর্ঘদিন থাকে। মাঠফসল, বসতবাড়ির সবজি ও ফল আবাদের সমস্যাসমূহের মধ্যে পোকা ও রোগের আক্রমন প্রধান। যে কোন ফসলের রোগ ও পোকা নিয়ন্ত্রন করতে হলে প্রথমে ঐ রোগ ও পোকা সনাক্ত করণে কৃষকগণ দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। মাঠফসল, সবজি ও ফলের পোকা ব্যবস্থাপনার প্রথম বিবেচ্য হচ্ছে পোকা চেনা, পোকার ক্ষতিকর পর্যায় জানা, ক্ষতির লক্ষণ জানা ও ক্ষতিকর পোকার জীবনের বিভিন্ন ধাপ সমূহের অবস্থান জানা। এছাড়া পোকার উপস্থিতি, ব্যপকতা ও ক্ষতি করার ক্ষমতা যদি কম হয় তখন ব্যবস্থাপনা না নিলেও হয়। এছাড়া সমন্বিত পদ্ধতিতে পোকা ও রোগ দমনের সহজ প্রাপ্য পদ্ধতি সমূহের সমন্বয় করা হয় এবং গাছের বৃদ্ধির কোন পর্যায়ে কোন পোকা ও কোন অংশে কোন পোকা বা রোগ আক্রমন করে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিলে বালাইয়ের আক্রমন হার সর্বনিম্ন থাকে এবং ফসলের উৎপাদন আর্থিকভাবে ক্ষতিকর হয় না।

আইপিএমের আলোকে মাঠফসল, বসতবাড়ির সবজির ও ক্ষতিকর পোকা ও রোগর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা সমূহ:

১। জৈবিক ব্যবস্থাপনা- উপকারী পোকামাকড়ের বংশ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য জমিতে এলোপাতারি বালাইনাশক ব্যবহার না করা।
২। বালাই সহনশীল জাতের চাষ-বি.এ.আর.ই. বেগুন-৭,৮, বেগুনের মাজরা পোকা সহনশীল, কাঁটাযুক্ত, লম্বাটে বেগুনে পোকা কম লাগে।
৩। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি-সুস্থ বীজ ও চারা রোপন, শস্য পর্যায় অনুসরণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ, ফসল সংগ্রহের পর অবশিষ্টাংশ পুড়ে ফেলা, সঠিক দুরত্বে লাগানো, সমকালীন চাষাবাদ, পানি ব্যবস্থাপনা, সার ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত মাঠ জরীপ, বিকল্প পোষক ধ্বংশ করা, গন্ধযুক্ত ফসলের আন্ত:ফসল আবাদ, ফাঁদ ফসলের চাষা করা।
৪। যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা -হাত জাল দিয়ে পোকা ধরা, বিষটোপ ফাঁদ ব্যবহার, ডাল পোতা, ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার, ডিম গাদা সংগ্রহ করে নষ্ট করা, আক্রান্ত ডগা, ফল সংগ্রহ করে পুতে ফেলা, বাগিং করা, শুকনো ছাই দেওয়া, মশারী দিয়ে ঢেকে দেওয়া, পরিস্কার পানি স্প্রে করা, জোড় কলম করা-বনবেগুন+বেগুন, সাবানের গুড়া+ পানি স্প্রে করা।
৫। বালাইনাশকের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার- রোগের আক্রমন বেশি হলে (ক) উদ্ভিজ্জ-নিমতৈল, নিমবীজের শ্বাসের চূর্ণ, নিশিন্ধা, বিষকাটালী, মেহগনীর বীজ, পাট বীজ, তামাক পাতা।(খ) রাসায়নিক-সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসাবে-কম স্থায়ী, স্পর্শ, প্রবাহ বিষ ব্যবহার কর।

বন্ধু (উপকারী) পোকামাকড়
বর্তমানে কৃষকরা সবজির জমিতে এলোপাতারি বালাইনাশক ব্যবহার করছেন যা একদিকে আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অন্যদিকে কৃষকদেরও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে চলছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য জৈবিক দমন একটি ভাল উপায়। সফলভাবে জৈবিক দমন করতে হলে আমাদের উপকারি পোকামাকড় (পরভোজী ও পরজীবি) সংরক্ষণ ও লালন-পালন করার কৌশলসমূহ জানতে হবে এবং তা যথারীতি প্রয়োগ করতে হবে। আবার কিছু পোকামাকড় আছে, যে গুলি সবজির ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে বা ধ্বংস করে থাকে এরা উপকারী পোকামাকড় হিসেবে পরিচিত। যে সকল উপকারী পোকামাকড় ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে বা ভোজন করে ধ্বংস করে সেগুলি পরভোজী পোকামাকড়। পক্ষান্তরে কিছু উপকারী পোকামাকড় এর জীবনচক্র কিছু ক্ষতিকর পোকামাকড় এর জীবনকে ধ্বংস বা ক্ষতিকরে সম্পন্ন করে সেগুলি পরজীবি পোকামাকড়। পরভোজী পোকা যে প্রক্রিয়ায় শিকার পোকাকে খায় বা ভোজন করে তাকে পরভোজীতা বলে। পরভোজী মাকড়সা,লেডিবার্ড বিটল,ক্যারাবিড বিটল,স্টেফিনিলিড বিটল ইত্যাদি।

পরজীবি শব্দের অর্থ পরের জীবনের উপর যে নিজের জীবন চালায় বা অন্যের উপর জীবন ধারণ করে ও মেরে ফেলে। যে জীব অন্য জীবের উপর আশ্রয় নেয় ও তার দেহ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং শেষে মেরে ফেলে বা শিকারের জীবনের ক্ষতি করে তাকে পরজীবি পোকা বলে। পরজীবি পোকা যে প্রক্রিয়ায় শিকার পোকাকে ধ্বংস বা ক্ষতি করে তাকে পরজীবিতা বলে।

পূর্ণবয়স্ক পরজীবি বোলতা যেমন ট্রাইকোগ্রামা, টেলিনোমাস, টেট্রাসটিকাস ইত্যাদি শিকার ক্ষতিকর পোকা যেমন মাজরা পোকার ডিমের গাদায় ডিম পাড়ে। বোলতার ডিম মাজরা পোকার ডিমের ক্ষতিসাধন করে নিজের জীবনচক্র সম্পন্ন করে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়ে বেরিয়ে আসে এবং পরিশেষে মাজরার ডিমগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

উপকারী পোকামাকড় ও জীবের বংশ বিস্তার এবং সংরক্ষণ
বন্ধু পোকামাকড় সংরক্ষণ ও লালন-পালন (বংশ বিস্তার) পদ্ধতিসমূহ উপকারী পোকামাকড় সংরক্ষণের প্রধান উপায় হল জমিতে এলোপাতাড়ি কীটনাশক ব্যবহার না করা। উপকারী পোকামাকড় রঙিন ফুলজাতীয় সবজিতে আশ্রয় নিয়ে থাকে। জমিতে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ হলে তখন এই উপকারি পোকামাকড়ই ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

১. চিটাগাং পদ্ধতি বা আইল ফসলের চাষঃ জমির আইলে রঙিন ফুল হয় এমন সবজি (বিশেষ করে বরবটি,শিম, করলা) চাষ করলে সেখানে বিভিন্ন প্রকার বন্ধু পোকার আশ্রয়স্থল তৈরি হয়। এতে করে বন্ধুপোকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তখন জমিতে শক্র পোকার আক্রমণ হলে এসব বন্ধু পোকা জমির শক্রু পোকা খেয়ে জমির ক্ষতিকর পোকা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

২. চায়না পদ্ধতিঃ ফসল তোলা বা কাটার পর পরই যদি জমির আইলে কিছু খড় বিছিয়ে দেয়া হয় তাহলে উপকারী পোকামাকড় সেখানে আশ্রয় নেবে এবং এতে করে তাদের বংশ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এই পদ্ধতিকে চায়না পদ্ধতি বলে।

 ৩. বুস্টার পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিরে জন্য প্রথমে ৪/৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে বাঁশ নিয়ে বাঁশের ওপর দিক থেকে একটি গিঁটের নিচেই ১ইঞ্চি / ১ ইঞ্চি পরিমাণ কেটে নিতে হবে। কাটা অংশের চার পাশে আঠাযুক্ত পদার্থের প্রলেপ দিতে হবে। আঠা যাতে করে শুকিয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাঁশের খুঁটির মাথায় টিনের কৌটা দিয়ে এমনভাবে ঢাকনি দিতে হবে যেন ছিদ্র দিয়ে বাঁশের ভিতর পানি না ঢুকতে পারে। ক্ষেত থেকে পোকার ডিমের গাদা পাতাসহ সংগ্রহ করে বাঁশের কাটা অংশ দিয়ে বাঁশের ভিতরে ফেলতে হবে। ডিমগুলি যদি পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে কদিন পর বাঁশের ছিদ্র পথে বোলতা বেরিয়ে জমিতে ছড়িয়ে পড়বে আর যদি পোকার ডিম পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত না হয় তবে তা থেকে ক্ষতিকর পোকার কীড়া বের হয়ে যাওয়ার সময় বাঁশের ছিদ্রের চারপাশে দেয়া আঠায় আটকে মারা যাবে। এত করে বন্ধু পোকার সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এই পদ্ধতিতে উপকারী পোকামাকড় সংখ্যা বাড়ানো করা যাবে।

৪. পলি ব্যাগে পোকা পালন করাঃ এই পদ্ধতিতে পোকার ডিম সংগ্রহ করে পলি ব্যাগে রাখতে হবে। পলিব্যাগে পানি ভেজানো তুলা ঢুকিয়ে দিতে হবে। ডিম ফোটার পর যদি দেখা যায় তা উপকারী পোকা তবে তা জমিতে ছেড়ে দিতে হবে। আর যদি দেখা যায় ক্ষতিকর পোকা তবে তা মেরে ফেলতে হবে। এইভাবে বন্ধু পোকা পালন করে সংখ্যা বাড়ানো যায়।

৫. এলোপাতারি কীটনাশক ব্যবহার না করাঃ বেশির ভাগ উপকারি পোকামাকড় ফসলের উপরের দিকে থাকে বিধায় এলোমেলো কীটনাশক ব্যবহার করলে উপকারি পোকা মাকড় মারা যাবে।তাই এলোপাতারি কীটনাশক ব্যবহার না করা এতে উপকারী পোকামাকড় সংখ্যা বাড়ানো করা যাবে।

সমলয়ে চাষাবাদ
বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হলেও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মিটানোর নিশ্চয়তা বিধান করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২ এ ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষি প্রসারের লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে সকল মানুষ বিশেষ করে অরক্ষিত পরিস্থিতিতে বসবাসকারী জনগোষ্টী, দরিদ্র জনগন ও শিশুদের জন্য বিশেষ অগ্রাধিকার সহ বছরব্যাপী নিরাপদ, পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করে ক্ষুধার অবসান ঘটানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে । এজন্য প্রয়োজন আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রবর্তন করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা।

সমলয়ে চাষাবাদ আগামী দিনের কৃষির এক অপরিহার্য উদ্যোগ। ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় সমলয়ে চাষাবাদ একটি সম্মিলিত উৎপাদন প্রয়াস। সফলভাবে ফসল উৎপাদনের জন্য এ পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকারের পক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ পদ্ধতিতে একই সাথে একই ফসলের বীজ বপন বা চারা রোপণ এবং ফসল কর্তন বা সংগ্রহ করা হয়। এতে সমলয়ে চাষাবাদ ভুক্ত ফসলের জমিতে একই সাথে জমির আন্ত:পরিচর্যা যেমন সেচের পানি সরবরাহ, পোকা মাকড়ও রোগ দমনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয় এবং চারা রোপণে রাইস প্লান্টারের ব্যবহার, ফসল সংগ্রহে কম্বাইন হারভেস্টারের ব্যবহারের ফলে, শ্রমিক সংকট নিরসন সম্ভব হয়। ২০২০-২১ সালে প্রতি জেলায় ১টি করে ৬১টি ৫০ একরের ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ১২৩৫ হেক্টর জমিতে সমলয়ে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। গত বছরের ন্যায় এবারও দেশের ৬১টি জেলার ১০০ টি উপজেলায় মোট ১০০টি সমলয়ে চাষাবাদের প্রদর্শণী স্থাপন করা হয়েছিল।

সমলয়ে চাষাবাদের গুরুত্ব:
১. কৃষকদের মধ্যে সমবায়ী মনোভাব গড়ে তোলা। ২. স্বল্প সময়ে বোরো ফসল রোপন ও কর্তন করা। ৩. বোরো ফসল উৎপাদনে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি করা। ৪. বোরো ফসল চাষে আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা। ৫. বোরো ফসল চাষে শ্রমিক সাশ্রয় করে উৎপাদন খরচ কমানো। ৬. বোরো ফসল চাষের আধুনিক কলা কৌশল সম্পর্কে কৃষকদের সম্যক ধারণা প্রদান করা। ৭. কর্মসূচির আওতাভূক্তও পার্শ্ববর্তী কৃষকদের কৃষি যন্ত্রের ব্যবহার এবং সমলয়ে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা।

উপসংহার:
এছাড়া সমন্বিত পদ্ধতিতে পোকা ও রোগ দমনের সহজ প্রাপ্য পদ্ধতি সমূহের সমন্বয় করা হয় এবং গাছের বৃদ্ধির কোন পর্যায়ে কোন পোকা ও কোন অংশে কোন পোকা বা রোগ আক্রমন করে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিলে বালাইয়ের আক্রমন হার সর্বনিম্ন থাকে এবং ফসলের উৎপাদন আর্থিকভাবে ক্ষতিকর হয় না। শক্র পোকার সংখ্যা কমিয়ে/নিয়ন্ত্রণে রাখা।উপকারি পোকা-মাকড়ের সংখ্যা বাড়ানো। উৎপাদন খরচ কমিয়ে রাখা।কীটনাশকের ব্যবহার কমানো। পরিবেশের ভারসাম্য রজায় রাখা।কীটনাশক শুধু ক্ষতিকর পোকা মাকড় মারে না, এর ব্যবহারে উপকারী পোকা ও মাকড়সাও মারা যায়। এছাড়া বালাইনাশক মানুষের জন্যেও নিরাপদ নয়। এসব রাসায়নিক পদার্থ মানুষকে রোগাক্রান্ত করে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি বালাইনাশকের বিষাক্ততার কিছু অংশ উৎপাদিত ফসল ও খাদ্যের মধ্যে থেকে যায়। এছাড়া বালাইনাশকের দ্বারা পুকুর ও নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। বাতাস দূষিত করে। মাটির অনুজৈবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।  আইপিএমের আলোকে মাঠফসল, বসতবাড়ির সবজির ও ক্ষতিকর পোকা ও রোগের ব্যবস্থাপনা নিলে বালাইয়ের আক্রমন হার সর্বনিম্ন থাকে এবং ফসলের উৎপাদন আর্থিকভাবে ক্ষতিকর হয় না এবং নিরাপদ কৃষি উৎপাদন সম্ভব।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২ এ ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষি প্রসারের লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে সকল মানুষ বিশেষ করে অরক্ষিত পরিস্থিতিতে বসবাসকারী জনগোষ্টী, দরিদ্র জনগন ও শিশুদের জন্য বিশেষ অগ্রাধিকার সহ বছরব্যাপী নিরাপদ, পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করে ক্ষুধার অবসান ঘটানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উৎপাদনের নিরিখে বাংলাদেশে দানাদার/ ধান ফসলের মধ্যে বোরো ধানের অবস্থান প্রথম। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে সাথে জমি বাড়ছে না। কিন্তু বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মিটানোর জন্য ধান ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। মোট উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বোরো ধানের উফশী ও হাইব্রিড জাতের আবাদ বাড়ানো দরকার। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার সহ বোরো ধানের উৎপাদন খরচ কমানো, শ্রমিক সংকট নিরসন ও সময় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ব্যবহার এবং সমলয়ে চাষাবাদে কৃষকগণকে উৎসাহিত করতে হবে।

তথ্য সুত্র: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫।