চলমান শীতে মাছের পরিচর্যা নিয়ে কিছু কথা

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

মৎস্যবিদ মোঃ রাশেদুজ্জামান :একজন মৎস্যবিদ হিসেবে আমার গুরুদায়িত্ব হলো দেশের প্রান্তিক মৎস্য খামারীদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে তাদের পাশে থাকা। সেই ভাবনা থেকেই মনে হলো চলন্ত শীতকালে মাছের পরিচর্যা নিয়ে কিছু লিখি !

আজ ১২ পৌষ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, রোজ মঙ্গলবার। শহরগুলোর তাপমাত্রার চেয়ে গ্রাম এবং মফস্বল এলাকায় তাপমাত্রা কম থাকে ফলে ঠান্ডার প্রভাব একটু বেশি থাকে। আর আমাদের খামারী ভাইদের মাছের প্রজেক্ট গুলো সাধারণত গ্রামে গঞ্জেই হয়ে থাকে। পড়ন্ত শীতে মাছের পুকুরে সবচেয়ে বেশি সমস্যা করে নিচের উল্লেখিত কারন গুলোঃ

১) সূর্যের আলোর স্বল্পতাঃ দিন ছোট হওয়া রোদ অল্প সময় পুকুরের পানিতে পড়ে। ফলে পুকুরের পানির তাপমাত্রা কমে যায়। সূর্যের আলো কম পাওয়ায় প্রাকৃতিক অক্সিজেন উৎপাদন কমে যায়। ফলে মাছের শ্বাসকার্য চালাতে কষ্ট হয়। মাছ খাবি খেতে শুরু করে। তাই অক্সিজেনের অভাবে মাছের মৃত্যু ঘটে।

২) মাছের ঘনত্বঃ এই সময় পানির গভীরতা কমে যায় ফলে মাছের সাইজ বড় হওয়ায় ঘনত্ব বেড়ে যায়।  

৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াঃ দেহের পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়। লেজ ও পাখনায় সাদাটে দাগ দেখা যায়। লেজ ও পাখনায় পচন ধরে। লেজ ও পাখনার পর্দা ছিঁড়ে যায়। লেজ ও পাখনা খসে পড়ে। রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ও রং ফ্যাকাশে হয়। মাছ দেহের ভারসাম্য হারায়। মাছ ঝাঁকুনি দিয়ে চলাফেরা করে। আক্রান্ত স্থানে তুলার মতো "এফানোমাইসিস" ছত্রাক জন্মায়।

৪) খাদ্যের বিপাক ক্রিয়া ঘাটতিঃ পুকুরের ঠান্ডা পানিতে মাছ তাদের চলাচল কমিয়ে দেয়। যার ফলে মাছের মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া কমে যায় এবং ক্ষুধা কমে যায়। অন্যদিকে, পানি ঠান্ডা থাকায় বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়।

৫) পুকুরে রোগ সৃষ্টিকারী "এরোমোনাস" এবং মিক্সো ব্যাকটেরিয়া সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। এর প্রভাবে মাছের ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা, ফুলকা পচা এবং উদরফোলা রোগ দেখা দিতে পারে।

৬) ক্ষতিকর ফাংগাস যেমন "এফানোমাইসিস" এর বংশবৃদ্ধি ঘটা।
এছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় যেমনঃ পানি দূষিত হয়, গ্যাস সৃষ্টি হওয়া সহ নানা সমস্যার জন্য মাছের বিভিন্ন রোগ ও মড়ক দেখা যায়।

৭) পি এইচ এর মান কমে যায়ঃ শীতকালে পানির পিএইচ স্বাভাবিক থাকে না। মাছের বৃদ্ধির জন্য স্বাভাবিক পিএইচের মান ৬ থেকে ৮ এর মধ্যে থাকা উচিত। যদি ৬ এর থেকে কম হয়, তাহলে পানি বেশি অম্লীয় হয়ে যাবে এবং মাছ খাবার খেতে অনীহা দেখাবে।

৮) অ্যামোনিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পায়ঃ শীতের সময় ঠান্ডায় মাছ খাদ্য গ্রহণ অনেকটা কমিয়ে দেয়। এর প্রভাবে অতিরিক্ত খাদ্য পচে গিয়ে পুকুরে অ্যামোনিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়

৯) পরজীবী জনিত সমস্যাঃ  শীত মৌসুমে মাছে বিভিন্ন ধরনের পরজীবীজনিত রোগ দেখা যায়। এ সময় সঠিকভাবে মাছের পরিচর্যা না করলে মাছের উঁকুন রোগ, ফলে অপুষ্টিজনিত রোগ, চোখ অন্ধ হওয়া এবং হাড় বাঁকা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এ রোগে আক্রান্ত মাছের গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। মাছের গায়ে ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়। লাল দাগের স্থানে গভীর ক্ষত হয়। মাছ দ্রুত মারা যায়। ক্ষতস্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। মাছ খাদ্য গ্রহণ করে না। ক্ষতে চাপ দিলে দুর্গন্ধ ও পুঁজ বের হয়। মাছ দুর্বল হয় এবং ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। আক্রান্ত বেশি হলে লেজ ও পাখনা পচে খসে পড়ে।

এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন- সেগুলো হলোঃ
১) পুকুরের পরিবেশ ও পানির গুণাগুণ ঠিক রাখা;
২) জলজ আগাছামুক্ত রাখা যাতে পানিতে পর্যাপ্ত সূর্য্যের আলো পরে।
৩) অনাকাঙ্ক্ষিত জলজপ্রাণি অপসারণ করা;
৪) অতিরিক্ত কাদা সরানো;
৫) নিয়মিত পরিমিত চুন প্রয়োগ করা;
৬) মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা;
৭) প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি পরীক্ষা করা; হররা টানা;
৮) পাখি বসতে না দেয়া;
৯) জাল শোধন করে ব্যবহার করা; জাল রোদে শুকিয়ে পুকুরে ব্যবহার করা।
১০) রোগাক্রান্ত মাছ অপসারণ করা;
১১)  পানি কমে গেলে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা।
১২) জৈব সার প্রয়োগ সীমিত করা।



এই সকল সমস্যা থেকে প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে "AvanCo Bangladesh Ltd." তাদের বিভিন্ন প্রকার উন্নত মানের পন্যের সরবরাহ রেখেছে যেমনঃ উকুননাশক "ককটেল" এবং "রকেট"এর মাধ্যমে পুকুরের সকল প্রকার পরজীবী যেমনঃ আরগুলাস, সুজি পোকা, হাঁস পোকা, মাখন পোকা, ডেক্টাইলোগাইরাস, গাইরোডেক্টাইলাস, লারনিয়া বিনাশ করা যায়।

জীবাণুনাশকের মধ্যে রয়েছে " সলভান-এল এবং সলভান-পি"; যার মাধ্যমে পুকুরের সকল প্রকার ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, ফাঙ্গাস সহ সকল অদৃশ্য জীবাণু থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো বুস্টাপ করার জন্য রয়েছে ডেক্সট্রজ সম্বলিত ভিটামিন সি "সিভান-জি"। মেটাবোলিজম বা বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে রয়েছে প্রোবায়োটিক সম্বলিত এনজাইম "এভিজাইম"। পুষ্টি জনিত সমস্যা থেকে রক্ষা করতে রয়েছে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ মাল্টিভিটামিন "গ্রোভিট"। এমোনিয়া সহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস থেকে পরিত্রান দিতে রয়েছে "ইউকাভান"। অক্সিজেন জনিত সমস্যা থেকে রক্ষ্যা করতে রয়েছে "অক্সিভান"। পানির উপকারী ব্যাকটেরিয়া, মাছের গ্রোথ, পানির গুণগত মান এবং তলদেশের কাঁদার মান মানানসই রাখতে রয়েছে "প্রোভান"। পুকুরের পিএইচ এর মান বাড়াতে রয়েছে "ক্যালসিয়াম কার্বনেট"। এছাড়াও রয়েছে আরোও নিত্য প্রয়োজনীয় একুয়া পন্য।

প্রান্তিক খামারীদের সার্বক্ষনিক টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিতে প্রস্তুত রয়েছে আমাদের সুদক্ষ টেকনিক্যাল টিম।

লেখক:ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার
এভানকো বাংলাদেশ লিমিটেড, ঢাকা, বাংলাদেশ।