আপেল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারীতা

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

বিজ্ঞানী ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান:
আপেল সিডার ভিনেগার কি?
আপেল থেকে গাঁজন বা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা হয়। অ্যাপেলের রসে ইস্ট ও ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় আপেল সিডার ভিনেগার যা আপেল জুসকে অ্যালকোহলে পরিনত করে। ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে অ্যালকোহল এসিটিক অ্যাসিডে পরিনত হয়ে অ্যাসিটো ব্যাকটেরিয়া জন্ম দেয়। এ ভিনেগারে ৯৪% পানি, ১% কার্বোহাইড্রেট ৫% অ্যাসেটিক এসিড থাকে এবং কোনও ফ্যাট বা প্রোটিন নেই। ইহা ২২ ক্যালোরি সরবরাহ করে। এটি শরীরের জন্য উপকারী। এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এসিটিক অ্যাসিড থাকার জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের স্বাদ সাধারণত টক হয় এবং রঙ হয় হালকা বাদামি। এতে খনিজ লবণ, ভিটামিনস, মিনারেলস, অ্যামিনো অ্যাসিডস, অর্গানিক অ্যাসিডস, পলিফেনল কম্পাউন্ডস রয়েছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এর মধ্যে।

যখন Apple Cider Vinegar প্রস্তুতির ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়াটির মেয়াদকাল আরো বাড়ানো হয়, তখন এতে বেশকিছু উপকারী এনজাইম, ইস্ট এবং এসিটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়ে যায়। এই উপকারী উপাদানসমূহকে একত্রে “মাদার” বলা হয়। আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং উপকারী। আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার দেখতে ঘোলাটে ও তুলনামূলকভাবে ঘন হয়ে থাকে।

আপেল সিডার ভিনেগার পান করার নিয়ম, পরিমান ও সময়

আপেল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারিতা

১. ডায়াবেটিস কমায় (রক্তে সুগারের পরিমান কমায়, ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এবং রক্তের সুগার ও ইনসুলিনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে)

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে

৩. রক্তের কোলেস্টেরল ও চর্বি কমায়

৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়। যখন রক্ত চাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে তখন আপেল সিডার ভিনেগার খেলে রক্তচাপ কমে যাবে। তবে যাদের রক্তচাপ কম তাদের এই ভিনেগার থেকে দূরে থাকা উচিত।

৫. হৃদরোগ রোগের ঝুকি কমায়: বর্তমান বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, ফলে হৃদরোগের ঝুকি কমে।
৬. লিভার ভাল রাখে: আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের লিভারের ফ্যাট বার্ন করে লিভারকে ভালো রাখে এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।

৭. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

৮. দেহের pH-এর সমতা রক্ষা করে : অ্যাপল সিডার ভিনেগার pH স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে, শক্তি বাড়ায়, ক্লান্তি কমাতে পারে, ব্যথা দূর করতে পারে এবং ওয়ার্কআউট করার সময় শরীরকে অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় স্ট্যামিনাকে উন্নত করতে পারে।

৯. শক্তি উদ্দীপক: অনেক সময় ব্যায়াম বা অধিক চাপ দেহে অবসাদ কারণ হয়ে দাড়ায়। আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা পটাশিয়াম ও এনজাইম ক্লান্তভাবকে দূর করে। ১ গ্লাস পানিতে ১ বা ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেলে পুনরায় উদ্দীপনা ফিরে পাওয়া যায়।

১০. ক্যানসার প্রতিরোধ করে: আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধী শক্তি। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এ ভিনেগার ক্যানসার কোষ নির্মূল ও টিউমার সারাতে ভূমিকা রাখে। তবে এটি এখনো সর্বব্যাপী স্বীকৃত নয়। এনিয়ে আরও গবেষণা চলছে।

১১. পেটের সমস্যা নিরাময় করে ও হজমে সাহায্য করে: প্রত্যেকেই প্রায় প্রতি নিয়ত বিভিন্ন ধরনের পেটের ব্যথায় ভুগে। এই সমস্যা দূর করতে আমরা আপেল সিডার ভিনেগার এর সাহায্য নিতে পারি। ১ টি কাপে অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে তার সাথে পানি মিশিয়ে খেলে পেটের ব্যথা চলে যাবে এবং ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন জনিত ডায়রিয়া দূর হবে। এতে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক গুন, পেকটিন যা অভ্যন্তরীণ সমস্যা দূর করে।

১২. রাতে পায়ের পেশিতে টান প্রতিরোধ করে: যদি রাতে প্রায়ই পায়ের পেশিতে টান লাগে, তাহলে বুঝতে হবে শরীরে পটাশিয়াম এর ঘাটতি রয়েছে। আর আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম। তাই ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

১৩. অ্যাসিডিটি দূর করে: যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করতে হবে, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যাবে (যাদের আলসার আছে তাদের জন্য নয়)।

১৪. গলা ব্যথা দূর করে: ½ কাপ কুসুম গরম পানিতে ½ কাপ আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে ১ ঘণ্টা পরপর কুলি করলে গলার ব্যথা কমে যাবে। কারণ আপেল সিডার ভিনেগারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড জীবাণু ধ্বংস করে ও ইনফেকশনে বাধা প্রদান করে।

১৫. মুখের দুর্গন্ধ দূর করে: নিয়মিতভাবে ব্রাশ ও মাউথওয়াশ ব্যবহার করার পরেও মুখের দুর্গন্ধ যাচ্ছে না? তাহলে তারা আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে দেখতে পারেন। কুলকুচা করে বা ১ চা চামচ ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো মরে যাবে।

১৬. দাঁতের জন্য উপকারী : আপেল সিডার ভিনেগার সাধারণত ব্লিচিং এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। এটি মাউথওয়াশ হিসেবেও কাজ করে। তাই আপেল সিডার ভিনেগার দাঁত সাদা ও দাঁতের রং ভালো করে এবং মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করার জন্য এর কোন তুলনা নেই। তবে আপেল সিডার ভিনেগার অত্যধিক ব্যবহারে দাঁতের ক্ষতি হয়। তাই অতিরিক্ত ভিনেগার ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে।

১৭. ত্বকের জন্য টনিক: আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের টনিক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে পানির সাথে বা গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে যেখানে ব্রণ সৃষ্টি হয়েছে, সেই স্থানে নিয়মিত লাগালে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ব্রণ চলে যাবে। পেডি-কিউর করতে কুসুম গরম পানিতে কিছু পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পায়ের যত্নে সপ্তাহে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও সান ট্যান রিমুভ করতে অলিভ অয়েল বা পানির সাথে অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে স্কিনে এপ্লাই করলে সান ট্যান দূর হবে।

১৮. ব্যাকটেরিয়া নিধন করে: শরীরের বিভিন্ন অংশে মাঝে মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয় এই সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত কিছুটা আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে সংক্রামক স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর হবে। ত্বকের অনেক সমস্যা যেমন ব্রণ, র‌্যাশ, আঁচলি, মেছতা, নখের মধ্যে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন ক্ষতিকারক ছত্রাক, কান ও গলার ইনফেকশন দূর করতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার হয়ে থাকে।

১৯. চুলের জন্য উপকারী: আপেল সিডার ভিনেগার চুলে ব্যবহার করলে চুল স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বল ও লম্বা হয়। পাত্রে পরিমাণ মতো আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে সম পরিমাণে পানি মিশিয়ে শ্যাম্পু করার পর মিশ্রণটি দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে চুলে কন্ডিশনিং হবে, তাছাড়া চুলের খুশকি যাবে এবং চুল নতুন করে গজাবে।

২০. কালশিটে দাগ মুছতে: আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামাটরি উপাদান। কালশিটে দাগ এর উপর এটির প্রলেপ আস্তে আস্তে দাগ বিলীন করতে সাহায্য করে। আবার ১ কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার গোসলের ১০ মিনিট আগে সারা শরীরে মেখে রাখবেন। এতে করে রোদে পোড়া ভাব দূর হবে। তাছাড়া গোসলের পানিতে দিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। মন প্রফুল্লও হবে, রোদে পোড়া দাগও কমবে।

আপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত পান করার অপকারিতা

অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করার ক্ষেত্রে সতর্কতা

বি. দ্র.: “আপেল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারীতা” প্রবন্ধটি সম্পূর্ণই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে রচনা করা হয়েছে। প্রবন্ধটি খুব ভাল করে কয়েকবার পড়বেন এবং সে মোতাবেক নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করবেন। অতিরিক্ত বেশী পান করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে লেখক দায়ী থাকবেন না।