ঈদুল আযহার শিক্ষা ও আদর্শ বাস্তব জীবনে প্রতিফলন করতে হবে

Category: ইসলাম ও জীবন Written by agrilife24

ইসলামিক ডেস্ক:দেখতে দেখতে এসে গেল পবিত্র ঈদুল আযহা। মুসলমানদের অন্যতম সম্প্রীতির উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। যে উৎসব মুসলিম সমাজে সাম্য ও সম্প্রীতিপূর্ণ ভালোবাসার জোয়ার বয়ে আনে। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জন ও ভক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং তা থেকে সমাজের সার্বিক কল্যাণের অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে সকলকে। কেননা কোরবানি শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই নয় বরং ত্যাগের দীক্ষায় পরিশুদ্ধ জীবন গঠন ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের নিয়মতান্ত্রিক অনুশীলনে উৎসাহ প্রদান করে। ঈদুল আযহার শিক্ষা ও আদর্শ গ্রহণ করে বাস্তব জীবনে সেটি প্রতিফলিত করা জরুরি।

কোরবানি মুসলমানদের সাম্য, সম্প্রতি ও ভাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে সামাজের আদর্শ মানুষ হতে শেখায়। সমাজের শ্রেণিগত বিভেদ দূর করে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা ও সুবর্ণ সুযোগ দান করে। পশু কোরবানির মাধ্যমে মানবমনে বিরাজমান যাবতীয় পশুত্ব তথা নির্মমতা, ক্রোধ, হিংসা, অত্যাচারী মনোভাবের অশুভ কর্মেচ্ছার মূলোৎপাঠন ঘটানোর দীক্ষাই কোরবানির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ পেয়ে থাকে। নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের মধ্যে কোরবানির গোশত বণ্টনের মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের আবহ তৈরি হয়।যাতে রয়েছে সামাজিক সমতার মহান আদর্শ। কোরবানির গোশত কাউকে দান করা অন্যান্য দান-সদকার চেয়ে উত্তম। রাসূল সা: বলেছেন, ‘মানুষের কল্যাণ-সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা’ (বুখারি-১২)।

ঈদুল আজহা সমাজের মানুষের হৃদয়ে আত্মত্যাগের শিক্ষাকে প্রোথিত করে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে বিশেষ অনুপ্রেরণাই দিয়ে থাকে। যার ফলে প্রতি বছর ঈদ মুসলমানদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতির সংযোগ-মোহনায় দাঁড় করিয়ে সামাজিক মানবতাবোধের শক্তিতে বলীয়ান করে।  মানবজীবনের সব কাজ হতে হবে শুধু মহান রবের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। তাতে থাকবে না কোনো লৌকিকতা বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বার্থ। কেননা, কর্মের উদ্দেশ্য সঠিক বা পরকল্যাণমুখী না হলে বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা থাকে। তাই আল্লাহ যেকোনো কাজের আগে নিয়ত ও উদ্দেশ্য ঠিক করতে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন।

ঈদুল আজহার সাথে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেরও বিশেষ সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ ও খামার ব্যবসায়ীরা বিশেষ পুঁজি বিনিয়োগ করে থাকেন। শুধু ঈদ পূর্ববর্তী এক সপ্তাহে পশু ও কোরবানির সরঞ্জামাদি ক্রয়-বিক্রয় এবং পশু পরিবহন ইত্যাদি খাতে দেশে কয়েক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিত্তবান মুসলমানদের থেকে দান-সদকার মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে হাতবদল হয়। যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারিত হয়।

ইসলামী শরিয়া মুসলিমদের যে সুনির্দিষ্ট পথে চলতে বলে তাতে কোনো সংশয় বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব না রেখে এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যথাসাধ্য পালনের চেষ্টা করা। আসুন আমরা ঈদুল আজহার আত্মত্যাগের শিক্ষা ও আদর্শ গ্রহণ করে বাস্তব জীবনে সেটি প্রতিফলিত করি। শান্তিপূর্ণ সামাজিক সহাবস্থান নিশ্চিত করি।- মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের কোরবানীকে কবুল করুন-আমিন