
রাজধানী প্রতিনিধি: গেইন বাংলাদেশ সুইস সরকারের এসডিসি-এর আর্থিক সহায়তায় দেশের চারটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল বা ক্লাইমেট হটস্পটে বাস্তবায়নাধীন “ক্লাইমেট অ্যাকশন অ্যাট লোকাল লেভেল (CALL)” প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত ফরমেটিভ রিসার্চের ফলাফল যাচাই ও ভেলিডেশনের লক্ষ্যে এক কর্মশালার আয়োজন করে।
আজ বুধবার ২৪ ডিসেম্বরঢাকার মৃত্তিকা ভবনের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় কৃষি, মৃত্তিকা, পুষ্টি ও জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৭০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
প্রকল্পটির আওতায় লবণাক্ততা প্রবণ খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা, খরাপ্রবণ নওগাঁ জেলা, বন্যাপ্রবণ জামালপুর জেলা এবং আরবান হটস্পট হিসেবে সাভার ও গাজীপুর এলাকায় ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপটেশন, ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার, উত্তম কৃষিচর্চা ও অ্যাপ্লাইড নিউট্রিশন বিষয়ে ফরমেটিভ রিসার্চ পরিচালনা করা হয়। গেইনের কনসালট্যান্ট টিম কর্তৃক পরিচালিত এই গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে ফাইন্ডিংস পাওয়া যায়, তা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মাধ্যমে যাচাই ও মতামত গ্রহণই ছিল কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ জনাব সোহরাব উদ্দিন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা। গেইনের পোর্টফোলিও লিড (DFST) জনাব মনিরুজ্জামান বিপুল-এর সভাপতিত্বে আয়োজিত কর্মশালায় ফরমেটিভ রিসার্চের মূল ফাইন্ডিংস উপস্থাপন করেন লিড কনসালট্যান্ট জনাব মাধব চন্দ্র দাস।
কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী, প্রাইভেট সেক্টর প্রতিনিধি, ইয়ুথ লিড প্ল্যাটফর্মের সদস্য, সাংবাদিকসহ অন্যান্য অংশীজনরা গবেষণা ফলাফলের ওপর গঠনমূলক ও পরামর্শমূলক মতামত প্রদান করেন।
লিড কনসালট্যান্ট জনাব মাধব চন্দ্র দাস বলেন, কর্মশালায় প্রাপ্ত সকল পরামর্শ ও মতামত সংযুক্ত করে একটি বাস্তবধর্মী ও প্রয়োগযোগ্য সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হবে। এই সুপারিশমালা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ হটস্পট এলাকাগুলোতে জলবায়ু সহনশীল উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর সম্ভব হবে, যা মানুষের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ জনাব সোহরাব উদ্দিন বলেন, দেশের আবাদি জমির পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, অথচ জনসংখ্যা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষকের হাতে জলবায়ু সহনশীল নতুন নতুন প্রযুক্তি তুলে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লবণাক্ততা, খরা ও বন্যার প্রভাবে মাটির উর্বরতা ও গুণাগুণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব এলাকার জন্য উপযোগী নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন, উত্তম কৃষি চর্চার প্রসার এবং উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে ফলন বৃদ্ধির উদ্যোগ এখনই গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কর্মশালার সভাপতির বক্তব্যে গেইনের পোর্টফোলিও লিড জনাব মনিরুজ্জামান বিপুল বলেন, গেইন সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে অপুষ্টি দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বৈচিত্র্যময় ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল চাষ সম্প্রসারণ, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গেইন ভবিষ্যতেও সকল অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাবে।
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন কৃষিবিদ ড. এম মনির উদ্দিন।