"পোল্ট্রি শিল্পের সংকট: খামারিরা কেন পাচ্ছেন না ন্যায্য দাম?"-সিইও, আস্থা ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ

Category: এগ্রিবিজ এন্ড টেক্ Written by Shafiul Azam

এগ্রিলাইফ প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত পোল্ট্রি শিল্প। দেশের কোটি মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করছে এই শিল্প, অথচ এই শিল্পের মূল চালিকাশক্তি অর্থাৎ খামারিরা বছরের অধিকাংশ সময়ই তার উৎপাদিত ডিম ও মুরগির ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না। কিন্তু কেন? ২৫ বছরেরও বেশি সময়ের সমৃদ্ধ পেশাগত অভিজ্ঞতার আলোকে এ বিষয়ে খোলামলো কথা বলেছেন আস্থা ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ-এর সিইও ডা. মোহাম্মদ নূরুল আলম।

ডা. মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, সমস্যাটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো মধ্যস্বত্বভোগী ও অপ্রতুল বিপণন নেটওয়ার্ক। একজন সাধারণ খামারী ফার্ম থেকে মুরগি বা ডিম উৎপাদনের পর স্থানীয় পর্যায়ের সংগ্রহকারী, আড়তদার বা স্থানীয় বাজারের বিক্রেতার মাধ্যমে বিক্রি করেন। এই ধারায় অনেকগুলো হাত ঘুরতে ঘুরতে পণ্যটি চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। প্রতিটি ধাপেই মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের মুনাফা নিয়ে নেন, কিন্তু খামারি পান উৎপাদন খরচের কাছাকাছি, অনেক সময় তারও কম দাম। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সরাসরি বড় খুচরা বিক্রেতা বা ভোক্তার সাথে সংযোগের ব্যবস্থা খুবই সীমিত।

তিনি বলেন, একজন সাধারণ খামারির ওপর এর প্রভাবটি ভয়ানক। ধরা যাক, একটি ডিম উৎপাদনে খামারির খরচ পড়ে ১০ টাকা। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যে তিনি পাচ্ছেন মাত্র ৮-৯ টাকা। এতে তিনি প্রতিটি ডিমেই ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এর প্রভাবে খামারি তার বিনিয়োগ ফেরত পাচ্ছেন না। বেশিরভাগ খামারিই ব্যাংক বা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে খামার চালান। দাম না পেলে ঋণ শোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক ছোট খামারি টিকতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হন, যা সামগ্রিকভাবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে।

তিনি বিপণন মডেল ব্যবস্থার কখা উল্লেখ করে বলেন, খামারিরা যদি সমবায় সমিতি গঠন করেন, তাহলে তারা তাদের পণ্য একত্রিত করে সরাসরি শহরের সুপার শপ, রেস্টুরেন্ট বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বড় অর্ডারে বিক্রি করতে পারবেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগী বাদ পড়বে। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ের ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে খামারি সরাসরি তার পণ্যের দাম ও পরিমাণ লিস্ট করবেন এবং পাইকারি ক্রেতারা সরাসরি সেখান থেকে অর্ডার দিতে পারবেন। টেকনোলজির সঠিক ব্যবহারই পারে এই ফাঁকটি পূরণ করতে।

সরকারি নীতি সহায়তার কথা উল্লেখ করে ডা. মোহাম্মদ নূরুল আলম বলেন, সরকার উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে একটি ন্যূনতম মূল্য নিশ্চিত করতে পারে তবে এর যথাযথ প্রয়োগ হওয়া দরকার। অতীতের এ ধরনের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বাস্তবে সেটির চিত্র ছিল কিন্তু ভিন্ন। খামারিদের জন্য সহজ শর্তে বিপণন ঋণের ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সাধারণ ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভোক্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন স্থানীয় বাজারে যাই, তখন শুধু দামের দিকেই নজর দিই , পণ্যটি কোথা থেকে আসছে সেটাও একটু খোঁজ নেওয়া দরকার। যদি সম্ভব হয়, সরাসরি খামার থেকে বা খামারিদের সমন্বয়ে গঠিত কোনও আউটলেট থেকে পণ্য কেনার চেষ্টা করতে পারি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এখন অনেক খামারি তাদের পণ্য বিক্রি করছেন। সচেতন ভোক্তা হিসেবে আমাদের সিদ্ধান্তই খামারিদের ন্যায্য মূল্য পেতে সবচেয়ে বড় সহায়তা করতে পারে।