বাকসু চায় প্রায় ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী

Category: কৃষিবিদ ও ক্যাম্পাস Written by Shafiul Azam

বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ সংক্ষেপে বাকসু না‌মে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, সৎ, দেশপ্রেমিক এবং যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে বাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্মেলন কেন্দ্র (টিএসসি) এর পুরাতন কার্যালয় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত নিয়মিত বাকসু নির্বাচন হলেও বিগত ২৭ বছর ধরে আর বাকসু নির্বাচন অনু‌ষ্ঠিত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা বাকসু নির্বাচনের দাবিতে সভা-সমাবেশ করলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনের পতন হলে দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেয় অন্তবর্তীকালীন সরকার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাকসুকে নিয়ে নতুন স্বপ্নের সঞ্চার হয়। সম্প্রতি বাকসু নিয়ে এক গণভোটের আয়োজন করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাকৃবি শাখা। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, টিএসসি ও কে আর মার্কেটে ক্যাম্পেইন চালিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত সংগ্রহ করে।

২১ দিনব্যাপী এই কার্যক্রমে তারা ১ হাজার ৮৮৩ জন শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে মতামত নেয়। এর মধ্যে ৪৪৭ জন কোনো মতামত দিতে রাজি হননি। সেই হিসাবে বাকসু নি‌য়ে ভোটে দেন ১ হাজার ৩৩৪ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বাকসু চায় ৯২ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং বাকসু চায় না ৭ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী। ওই সংগঠ‌নের সংগঠ‌নে নারী শিক্ষার্থী ক‌মের কার‌ণে বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের নারীদের হল থে‌কে সবার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়‌নি। ত‌বে বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে সব নারী শিক্ষার্থী‌ বাকসু নি‌য়ে ইতিবাচক ব‌লে জানান নেতাকর্মীরা।

এ ছাড়া গত ২৬ আগস্ট বাকৃবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসহ ৯ দফা দাবিতে উপাচার্যের নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো ১. অবিলম্বে বাকসুর পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করতে হবে ২. কথিত সিজি-ভিত্তিক ছাত্রসমিতি বিলুপ্ত করতে হবে ৩. পরীক্ষায় রোলবিহীন খাতা মূল্যায়ন ও খাতা চ্যালেঞ্জের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে ৪. কারিকুলাম আধুনিকীকরণ ও ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে ৫. ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল সীমিতকরণ ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেবার মানোন্নয়ন করে সেটিকে ২০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সেন্টার হিসেবে কার্যকর করতে হবে ৭. হল ডাইনিংয়ে মানসম্মত খাবার সরবরাহে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিতে হবে ৮. এক্সট্রা-কারিকুলার কার্যক্রমের মানোন্নয়ন করতে হবে ৯. আবাসন সংকট নিরসন ও চলমান সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।

কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থী জায়েদ হাসান ওয়ালিদ জানান, “শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্ত গণতন্ত্রের চর্চা, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাকসু নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা হল ও কেন্দ্রীয় স্বার্থ রক্ষার সুযোগ পায়। বাকসু না থাকার কারণে গবেষণার বাজেট কমে গেছে অথচ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি বেড়েছে। এ ছাড়া হলে সিট বাণিজ্য, ডাইনিং ব্যবসা, টেন্ডারবাজি এবং অনুষদে অনির্বাচিত সংসদ চালু রয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় একাডেমিক সিলেবাস প্রণয়ন ও পরিবহন ব্যবস্থার সামগ্রিক সিদ্ধান্ত প্রশাসন এককভাবে নিচ্ছে। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত বাকসুর গঠনতন্ত্র প্রকাশ করে তা সংশোধন ও পরিবর্ধন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।”

কৃষিতত্ত্ব বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী সঞ্জয় রায় জানান, “শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চা ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বাকসু দরকার। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভোটেই নির্বাচিত হবেন হল ও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি। বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ে শিক্ষার্থীরাই অন্যতম অংশীজন হওয়া সত্ত্বেও বাকসু নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকসু নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সমাধান হবে, পরিবহনের সুবিধা বাড়বে, ক্যাম্পাসে রেলস্টেশন প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো হবে, হোটেলের অতিরিক্ত মূল্য নিয়ন্ত্রণ হবে, হেলথ কেয়ারের মানোন্নয়ন হবে এবং মাসিক ২০০ টাকার হল স্টাইপেন্ড বৃদ্ধির দাবি তোলা যাবে। পাশাপাশি গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতির মাধ্যমে জোরপূর্বক রাজনীতিতে টেনে আনা বন্ধ হবে। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত গঠনতন্ত্র সংস্কার করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।”

ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী রুপায়ন জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা করা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার। এর জন্য বাকসু অপরিহার্য। বাকসু না থাকার কার‌ণে পূর্বে শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করে সিলেকশন পদ্ধতিতে ছাত্রসমিতি ঘোষণা করা হয়েছিল। যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নকে ব্যাহত করে।”

পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী আজিজুল হক জানান, শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও রাজনীতিমুখী করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে জুলাই শক্তি জীবন্ত রাখার জন্য বাকসু প্রয়োজন। যদি বাকসু না হয়, তাহলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের মতাদর্শ শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিষ্ঠা করতে আবারও গণরুম ও গেস্টরুম চালু করবে।

বাকৃবি ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক জানান, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় বাকসু নিয়ে কোনো কিছু ভাবছি না। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্বাইন্ড ডিগ্রি নিয়ে দুটি অনুষদে যে চলমান আন্দোলন হচ্ছে, তা সমাধানের পর বাকসুর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করব। অন্তবর্তী সরকারের সময় বাকসু নির্বাচন সম্ভব নয়; গণতান্ত্রিক সরকার এলে বাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।