মাহফুজুর রহমান: আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে মস্তক অবনত চিত্তে শুকরিয়া আদায় করছি, যে মহান আল্লাহ তার এই অধম বান্দাকে জীবনের একটি বড় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার তাওফিক দিয়েছেন। আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করা এবং নবীর রওজা জিয়ারাহ করার স্বপ্ন লালন করেছি খুব অল্প বয়স থেকেই। কেন যেন স্বপ্ন দেখতাম কাবার গিলাফ ছুয়ে দেখার। হাজরে আসওয়াদ যেন আমায় ডাকতো চুম্বন করার জন্য। মা’কামে ইবরাহিমের দর্শন পাওয়ার আকুলতা সবসময় আমার হৃদয়ে বাসা বেঁধে ছিল।
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই কাবায় যাওয়ার স্বপ্ন আমার মনে বাসা বাঁধতে থাকে। এর পর থেকে কাবা ঘরের ছবি যতবারই দেখেছি ততবারই আল্লাহর কাছে আকুতি জানিয়েছি- হে আল্লাহ তুমি তোমার ক্বাবা ঘর তাওয়াফের তাওফিক দাও। যে হাজরে আসওয়াদে আমার নবী (সঃ) চুম্বন করেছে সেখানে একটু চুম্বন করার সুযোগ তুমি তৈরি করে দাও।
অবশেষে মহান আল্লাহ তার এই গোনাহগার বান্দার ফরিয়াদ কবুল করলেন। নূর ভাইয়ের সাথে বেশ আগে কথা হয়েছিলো একসাথে কাবায় যাবো। রমজানের মধ্যে হঠাৎ নূর ভাই কাবায় যাওয়ার কথা জানালেন। এবং তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে যাওয়ার জন্য যাবতীয় কাজ সম্পাদন করলাম। যদিও একেবারে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার জন্য খুব একটা সহজ ছিলোনা। কারন মোটমুটি অর্ধমাসের একটি সফর। অফিস ম্যানেজ সহ সামগ্রীক কিছু জটিলতা থাকলেও মহান আল্লাহ সবকিছুই যেন তাঁর বান্দার জন্য সহজ করে দিলেন। আলহামদুলিল্লাহ।
২ মে সন্ধ্যা ৬.৪৫ মিনিটের বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্ল্যাইটে আমাদের যাত্রা। রাস্তার যানজট বিবেচনায় অনেক আগেই আমরা পৌঁছে গেছি হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। যদিও নূর ভাই এক ঐতিহাসিক জ্যামের কারনে ফ্ল্যাইট ছাড়ার শেষ মুহুর্তে এয়ারপোর্টে পৌঁছান। লাগেজ বুকিং এবং ইমিগ্রেশন শেষ করে আমরা এয়ারপোর্টের মসজিদে যেয়ে আছরের নামাজ আদায় করি। এবং সে মসজিদ থেকেই আমরা ইহরাম বেঁধে ফেলি। কারন বাংলাদেশীদের জন্য নির্ধারিত মিকাত (যেখান থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়) ইয়ালামলাম আমরা অতিক্রম করবো বিমানে থাকা অবস্থাতেই। আমরা সকল কার্যসম্পাদন করে এয়ারক্রাফটে উঠে পড়ি। বিমান বাংলাদেশের বিজি-৩৩৫ নং ফ্ল্যাইট আমাদের নিয়ে ছুটে চললো নবীর দেশে। যেখানের ধুলিকনায় মিশে আছে আমার নবীর পদচিহ্ন। ৯ জনের একটি গ্রæপ আমাদের। বন্ধু-ভাই নূর মোহাম্মদ আবু তাহের এই গ্রæপে থাকায় নিঃসন্দেহে আমাদের সফরটি ছিলো একটু বেশিই আলোকিত।
স্থানীয় সময় রাত ১২.০০ টার দিকে আমরা জেদ্দাহ বিমানবন্দরে অবতরণ করি। নবীর দেশে এই প্রথম আগমন। বিমানের সিঁড়ি বেয়ে নেমে যখন ভূমি স্পর্শ করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। জেদ্দাহ কিং আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর। সূ-বিশাল এরিয়া নিয়ে গঠিত। আমাদের ঢাকা বিমানবন্দরের কয়েকগুন বেশি বড় হবে নিশ্চয়। সেখানের প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদন করে আমরা রওনা দেই পবিত্র কাবার উদ্দেশ্য। মন যেন কিছুতেই ত্বর সইছে না। কাবা ঘর দেখবো। তাওয়াফ করবো। আমার নবীর অজস্র স্মৃতি আছে এই ঘরের সাথে। মক্কায় পৌছে গাড়ী থেকে নেমে হোটেলে শুধুমাত্র লাগেজ রেখেই সরাসরি কাবার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি আমরা।-চলবে
-জেনারেল ম্যানেজার, এগ্রোভেট ফার্মা