বাকৃবিতে সামুদ্রিক মাছের ভেল্যু-চেইন বিষয়ক মৎস্য খামারী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু।। ‘টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার ও ভেল্যু-চেইন জোরদারের মাধ্যমে মৎস্য পণ্যের পোস্ট হারভেস্ট ক্ষতি কমিয়ে উপক‚লীয় অঞ্চলের আয় বৃদ্ধি’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে শনিবার ২৯ জুন ২০২৪ মৎস্য খামারী, জেলে, উদ্যোক্তা ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে সামুদ্রিক মাছের ভেল্যু-চেইন বিশেষ করে কাচা মাছ থেকে ফিস পাউডার, ফিস স্মোকিং, ও ফিস ক্যানিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) অধীনে সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (এসসিএমএফপি) এর অর্থায়নে পরিচালিত কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদীয় সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোঃ খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য বিজ্ঞানী প্রফেসর মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, একোয়াকালচার বিভাগ, বাকৃবি এবং প্রফেসর ড. চয়ন গোস্বামী, সহযোগী পরিচালক, বাউরেস।

অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করেন প্রধান গবেষক সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রকল্প ও সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এসজি), বাউরেস এবং কৃষি বিজ্ঞানী ড. পরেশ কুমার শর্মা। প্রশিক্ষণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান গবেষক প্রকল্পটির বিষদ বিবরণসহ প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

মৎস্য বিজ্ঞানী জনাব সাজ্জাদ হোসেন, পিএইচডি ফেলো (ডিওএফ প্রতিনীধি) তার বক্তব্যে বলেন সামুদ্রিক মাছ থেকে ফিস পাউডার, ফিস স্মোকিং ও ফিস ক্যানিং করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা প্রসংসার দাবিদার এ ধরনের প্রকল্প খুবই দরকার। তিনি প্রধান গবেষকের কার্যক্রমকে স্বাগত জানান। প্রফেসর মোঃ সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, ফিস ক্যানিং করার সময় ফুড সেফটির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন।

পরে প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মোঃ খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ভেল্যু-চেইনের গুরুত্বারোপ করেন এবং প্রশিক্ষণের শুভ উদ্বোধন করেছেন।

সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মুল প্রশিক্ষনটি পরিচালনা করেন প্রধান গবেষক ড. পরেশ কুমার শর্মা এবং তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন খামার ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মৎস্য বিজ্ঞানী ড. আবু তাহের।

প্রধান গবেষক খামারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মাছের স্মোকিং হলো ইলেকট্রিক ওভেন বা কাঠ, বা অন্যান্য উপকরণ পোড়ানো ধৈাঁয়ার সংস্পর্শে এনে মাছ সংরক্ষণ করার ঐতিহ্যবাহী একটি পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় মাছের ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি রোধ করে শেলফ লাইফকে প্রসারিত করা হয়। প্রক্রিয়াটির একটি স্বতন্ত্র ধৈাঁয়াটে গন্ধও আছে যা অনেক রন্ধন শিল্পের অত্যন্ত মূল্যবান গুরুত্ব বহন করে। এটির মাধ্যমে মাছের পুষ্টিমান বৃদ্ধি করে দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণ ও খাওয়ার মাধ্যমে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ ভুমিকা পালন করে।

ফিস ক্যানিং হলো মাছকে বায়ুরোধী পাত্রে সীলমোহর এবং তাপপ্রয়োগের মাধমে মাছ সংরক্ষণ করার একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় মাছের ব্যাক্টোরিয়া এবং অন্যান্য অণুজীবকে ধ্বংস করে মাছকে হিমায়ন ছাড়াই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাছের পুষ্টিমান অপরিবর্তিত রেখে নিরাপদ, দীর্ঘাস্থায়ী খাদ্যপণ্য যা, পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। তিনি আরও বলেন ফিস প্রোটিন পাউডার হলো কাঁচা মাছ থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরীকৃত পাউডার।

তিনি আরও বলেন, এটি নিরাপদ পুষ্টি, সুস্বাদু, উচ্চ-মান প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যপণ্য যা, শিশু ও বয়স্ক লোকদের জন্য বিশেষ উপযোগী। এটি সরাসরি (Ready to eat) ভক্ষণযোগ্য। এটিতে অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড, ওমেড়া-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এবং খনিজ লবন, উচ্চ-মানের উপাদান রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে এটি পচনশীল পন্যের মুল্য সংযোজনকারী (ভ্যালু-চেইন), পোষ্ট-হারভেস্ট ক্ষতি হ্রাস, নতুন বাজার সৃষ্টির, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ ভুমিকা পালন করতে সহায়তা করে। এটি উদ্যোক্তাদের লাভ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে, খাদ্যের অবচয় হ্রাস করতে সহজে পরিবহনযোগ্য ফিস প্রোটিন পাউডার হলো দীর্ঘ শেলফ লাইফ খাদ্যপণ্য। এটি বিভিন্ন খাবার এবং পানীয়র সাথে যুক্ত তরে বুস্টার প্রোটিন হিসেবে খাওয়া যায়। খাদ্য তালিকায় এটি রাখলে, দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পুরণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ ভুমিকা পালন করে। মানব স্বাস্থ্য সুস্থ ও সবল রাখতে ফিস প্রোটিন পাউডার অপরিহায্য।