সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ ও মাংসের যোগান দিতে চায় বাংলাদেশ ডেইরি এন্ড ফ্যাটেনিং ফার্মারস এসোসিয়েশন

রাজধানী প্রতিনিধি: ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ ও মাংসের যোগান দিতে চায় বাংলাদেশ ডেইরি এন্ড ফ্যাটেনিং ফার্মারস এসোসিয়েশন। তবে এর জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা রয়েছে যেগুলোকে সংগঠনটি চিহ্নিত করে আশু পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সরকার ও সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতি আহবান জানিয়েছে সংগঠনটি। দুধের ন্যায্য মূল্য ও সাপ্লাই চেইন নিশ্চিতকরণ সহ ডেইরি ও ফ্যাটেনিং খামারীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার প্রতিকার কামনা করেছে সংগঠনটি।

আজ রবিবার (২০ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি এন্ড ফ্যাটেনিং ফার্মারস এসোসিয়েশন-এর নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডেইরি এন্ড ফ্যাটেনিং ফার্মারস এসোসিয়েশন-এর সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ভুট্টু, সভাপতি মালিক মোঃ ওমর সহ কার্যর্করী কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ ডেইরি ও ফ্যাটেনিং খামারের বিদ্যুৎ ও পানির বিল কৃষির আওতায় আনার দাবী তুলে বলেন, কৃষিতে বিদ্যুৎ বিল যেখানে প্রতি ইউনিট- ৫.৪০ টাকা সেখানে গরুর ফার্ম এর প্রতি ইউনিট -১১ থেকে ১৪.০০ টাকা এই অসম বিদ্যুৎ বিলের কারণে তাদের উৎপাদন বেড়ে যায়। দেশে দুধ ও মাংসের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ও জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ ও মাংস যোগান দিতে খামারিদের প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য ইউরোপীয়, আমেরিকার বা ভারতের খামারিদের মতো সরকারকে ভর্তুকি প্রদান করার কথা বলা হয়। গুড়া দুধ আমদানিতে ট্যাক্স সমন্বয় অথবা খামারীদের ভর্তুকি প্রদান এর মাধ্যমে অসম প্রতিযোগিতা থেকে তাদের পরিত্রাণ দেয়া ছাড়া খামারিদের টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে জানান নেতৃবৃন্দ ।

খামারীদের নিকট সঠিক পরিসংখ্যান ও তথ্য তুলে ধরার কথা বলে নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারতে সরকারি বেসরকারি সব ব্রিডিং স্টেশনে সেক্সিং টেকনোলজি স্থাপিত হচ্ছে,যার মাধ্যমে শুধুমাত্র বকনা বাছুর হবে, ফলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের স্থানীয় ষাড় বাছুরের উৎপাদন অন্তত ৩০% কমে যাবে। এতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ভারত থেকে আর ষাড় বা ষাড় বাছুর আসবে না। এখনি আমরা যদি সঠিক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে সেই সময়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ না করি তবে এই সেক্টরে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

একই অবস্থা গুড়া দুধের ক্ষেত্রেও আমরা গত ২০ বছরের পরিসংখ্যান নিলে দেখব স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। কিন্তু অপরদিকে গুড়া দুধে আমদানি প্রতিবছর ৩০/৪০ পার্সেন্ট করে বেড়ে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান সঠিক হলে এটা কিভাবে সম্ভব? প্রশ্ন রাখেন বাংলাদেশ ডেইরি এন্ড ফ্যাটেনিং ফার্মারস এসোসিয়েশন নের্তৃবৃন্দ।

খামারিদের জন্য গো খাদ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ডেইরি এন্ড ফ্যাটেনিং ফার্মারস এসোসিয়েশন বলেন, আমাদের দেশের ফিডমিলগুলো শুল্কমুক্তভাবে গো খাদ্য উপাদান আমদানির সুযোগ পায়। কিন্তু বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করতে পারে না। এটি পরোক্ষভাবে দুধ ও মাংসের মূল্য বাড়ার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে খামারিরা সিমেন কিনে প্রতারিত হচ্ছে বলে জানানো হয়। অতি দ্রুত খামারীদের জন্য উন্নত জাতের প্রুভেন,ক্রস ব্রিড ও ভালো মানের আমদানি কৃত দুধ, মাংস বা ডুয়েল পারপাস জাতের বুলের সিমেন সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়া দুধ ও মাংস উতপাদন বাড়ানো সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন নের্তৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে এফ,এম,ডি ও এল,এস,ডি রোগ নির্মূলে সরকারিভাবে প্রজেক্ট এর মাধ্যমে ফ্রি ভ্যাকসিন সরবরাহ করার দাবি তুলে ধরা হয়। এসময় এলডিডিপি প্রজেক্টর কথা উল্লেখ করে এসোসিয়েশন নের্তৃবৃন্দ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক জায়গায় সঠিক খাতে খরচ করে দেশের গো সম্পদ রক্ষায় সরকারিভাবে টিকা আমদানি করে খামারীদের দিলে এল,এস,ডি ও এফ এম ডি রোগ থেকে খামারগুলো রক্ষা পাবে। কারণ হিসেবে নের্তৃবৃন্দ বলেন, এলএসডিও এফ এম ডি আমদানিকৃত ভ্যাকসিনের দাম অনেক বেশি হওয়ায় প্রান্তিক খামারীরা তা ব্যবহার করতে পারছে না। এতে দেশের লক্ষ লক্ষ গরু এলএসডিও এফএমডি তে কিছু মারা যাচ্ছে কিছু প্রজনন অক্ষম হয়ে যাচ্ছে।

কাজেই খামারীদের সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি ভোক্তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ ও মাংসের যোগান দিতে এসব চ্যালেঞ্জ ও সমস্যাগুলির সমাধানে সরকার ও সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, খামরীদের সংগঠন সকলকে এক যোহে কাজ করতে হবে।