"আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস পালন" প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

রোটারিয়ান ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ: প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে পরিচিত পাখি শকুন। প্রাণীটিকে বাঁচাতে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের প্রথম শনিবার পালন করা হয় 'আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস'। আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস পালন প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

শকুন প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখে এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীকে রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। তবে, দুঃখজনকভাবে, শকুনের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে, যার প্রধান কারণ হলো প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংস, খাদ্য সংকট, ওষুধের বিষক্রিয়া, এবং অন্যান্য মানবসৃষ্ট হুমকি।

শকুন বিলুপ্ত হলে তার প্রভাব শুধু বন্যপ্রাণী বা পরিবেশেই নয়, মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, আইইউসিএন-এর রেড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত এই মহাবিপন্ন প্রজাতিটিকে রক্ষা করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। শকুন রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক বাসস্থান সংরক্ষণ, এবং বিষমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।

আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবসে ভেটেরিনারি চিকিৎসক ও সেচ্ছাসেবকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, কারণ তারা সরাসরি শকুন এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিয়ে কাজ করেন। শকুন রক্ষায় তাদের কিছু পদক্ষেপ ও উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারেঃ

১. ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধকরণ প্রচারণা:
• ডাইক্লোফেনাক (Diclofenac) ওষুধ পশুচিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়, যা শকুনের জন্য মারাত্মক বিষাক্ত। ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা বিকল্প ওষুধ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করতে পারেন এবং সেচ্ছাসেবকরা এই বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালাতে পারেন।
২. শকুনের বাসস্থান সংরক্ষণ:
• শকুনের নিরাপদ বাসস্থান সংরক্ষণ ও খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে। সেচ্ছাসেবকরা শকুনের বসবাসের জায়গাগুলো সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে কাজ করতে পারেন।
৩. জনসচেতনতা বৃদ্ধি:
• ভেটেরিনারি চিকিৎসক ও সেচ্ছাসেবকরা শকুনের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে জানাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। শকুনের বিলুপ্তির ফলে পরিবেশে যে বিপর্যয় হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা, কর্মশালা এবং প্রচারণা চালানো উচিত।
৪. রোগ প্রতিরোধে শকুনের ভূমিকা বোঝানো:
• শকুন মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে পরিবেশকে রোগমুক্ত রাখে, যেমন অ্যানথ্রাক্স এবং যক্ষার মতো রোগের সংক্রমণ কমায়। ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন এবং সেচ্ছাসেবকরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পারেন।
৫. শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পে অংশগ্রহণ:
• শকুন সংরক্ষণে বিভিন্ন প্রকল্প ও গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে। ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা শকুনের স্বাস্থ্যের ওপর গবেষণা ও চিকিৎসায় অবদান রাখতে পারেন এবং সেচ্ছাসেবকরা এর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করতে পারেন।
৬. শকুনের খাদ্যের ব্যবস্থা করা:
• নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। শকুন ফিডিং স্টেশন তৈরি করে সেখানে মৃত প্রাণীর বিষমুক্ত মাংস সরবরাহ করা যেতে পারে, যা তাদের খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করবে।
৭. কমিউনিটি ইনভলভমেন্ট:
• শকুন সংরক্ষণে স্থানীয় কমিউনিটিকে যুক্ত করা জরুরি। সেচ্ছাসেবকরা স্থানীয়দের মধ্যে শকুন রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন।

আহ্বান:
ভেটেরিনারি চিকিৎসক ও সেচ্ছাসেবকদের প্রতি আহ্বান: আসুন, আমরা সবাই মিলে শকুন রক্ষায় একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করি। পরিবেশের ভারসাম্য ও রোগমুক্ত সমাজ গঠনে শকুনের অবদান অপরিসীম, তাই তাদের সংরক্ষণে আমাদের সক্রিয় ভূমিকা রাখা উচিত।
আসুন, আমরা শকুনের গুরুত্ব বুঝে তাদের রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করি এবং তাদের বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করি।

-লেখকঃ ডেপুটি চিফ ভেটেরিনারিয়ান, ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সভাপতি (২০২৩-২৪), রোটারি ক্লাব অফ রাজশাহী সেন্ট্রাল; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি (বিএলএস), যুগ্ম নির্বাহী সম্পাদক (বাংলাদেশ লাইভস্টক জার্নাল; ISSN 2409-7691), সম্পাদক সুজন, (রাজশাহী মেট্রোপলিটন), সভাপতি, বিবিসিএফ, রাজশাহী।