রোটারিয়ান ড মো হেমায়েতুল ইসলাম আরিফঃ আমাদের সমাজে এক গভীর নৈতিক সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রতিটি পেশার পেশাদারিত্ব যেন একটি ভোগবাদী প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে, যেখানে নৈতিকতা আর মানবিক মূল্যবোধ ক্ষয়িষ্ণু। ব্যবসায়ীরা মুনাফার পেছনে ছুটছে, চিকিৎসকরা সেবার পরিবর্তে বাণিজ্যিক মানসিকতায় বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে অযৌক্তিক ফি আদায় করছেন, শিক্ষকরা কোচিং ব্যবসায় লিপ্ত হয়ে শিক্ষার মৌলিক দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছেন।
এই প্রবণতা শুধু শিক্ষক ও চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য পেশাতেও বিরাজমান। ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, সার্ভেয়ার, বীমা বিশেষজ্ঞ, এমনকি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির মত গুরুত্বপূর্ণ পেশাগুলোও এখন অর্থনৈতিক লোভের কাছে নৈতিকতার স্থান হারিয়ে ফেলছে। এভাবে প্রতিটি পেশাজীবী যেন কেবল নিজের সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত। সমাজের সেবার যে নীতি ও মূল্যবোধ, তা একপ্রকার উপেক্ষিত।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন নৈতিক পুনর্জাগরণ, প্রয়োজন বোধোদয়ের। প্রতিটি পেশাজীবীকে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পুনরায় সচেতন হতে হবে। মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে হবে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে। নীতি-নৈতিকতার চর্চা ফিরিয়ে আনতে হবে, যেখানে স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের মঙ্গলের জন্য কাজ করার মানসিকতা গড়ে ওঠবে।
আমাদের সমাজে এই বোধোদয় কবে ঘটবে, তা নির্ভর করছে আমাদের চিন্তাশক্তি ও সচেতনতার উপর। প্রতিটি মানুষকে নিজ নিজ দায়িত্বের জায়গা থেকে নীতি ও মূল্যবোধের চর্চা করতে হবে। ব্যক্তিগত লোভ-লালসার পরিবর্তে সম্মিলিতভাবে সমাজের মঙ্গলই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। একমাত্র তখনই আমাদের সমাজ প্রকৃত অর্থে নৈতিকতার ভিত্তিতে দাঁড়াতে পারবে এবং মানবিক মূল্যবোধের আলো ফুটবে।