হুমায়ুন কবীর:আমাদের সমাজে অনেক পুরুষই এমন আছেন, ব্যক্তি জীবনে এবং পারিবারিক জীবনে তারা ভীষণ কৃপণ। পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধবের জন্য তারা মোটেই খরচ করতে চান না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নিজের জন্যও না। খরচ করার মতো টাকা-পয়সা নেই ব্যাপারটা এমন নয়। তাছাড়া সত্যিই যদি এমন হতো, তাহলে তো দোষের কিছু ছিলো না। কারণ, তার সামর্থ্য নেই, খরচ করবে কোথা থেকে। কিন্তু আমি বলছি এমন শ্রেণীর মানুষের কথা─ যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও খরচ করে না, করতে চায় না। আবার কখনো করলেও সেটা অনেক টালবাহানার পরে।
রাসুলাল্লাহ (সা.)-এর যুগেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিলো। সহিহ হাদিসের কিতাবে এর বিবরণ পাওয়া যায়। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন─ হিন্দা বিনতে উতবা (রা.), যিনি মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আবু সুফিয়ান (রা.)-এর স্ত্রী এবং ‘কাতিবুল ওহি’ হজরত মুআবিয়া (রা.)-এর মাতা ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে তিনি বলেন─ 'হে আল্লাহর রাসুল! আমার স্বামী আবু সুফিয়ান একজন কৃপণ মানুষ। আমাকে এবং আমার সন্তানদেরকে প্রয়োজনীয় খরচাদি দেন না। এমতাবস্থায় তার অজ্ঞাতসারে আমি কি তার কিছু সম্পদ নিতে পারি?' আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন─ 'হ্যাঁ, অজ্ঞাতসারে এই পরিমাণ নিতে পারো, যা তোমার জন্য এবং তোমার পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে।'(সহিহ মুসলিম: ৪৫৭৪)
উলামায়ে কেরাম উল্লিখিত হাদিসের অনেক ব্যাখ্যা করেছেন। আমাদের হানাফি উলামায়ে কেরাম তন্মধ্যে- ইমাম আবু হানিফা, ইমাম খাচ্চাফ, ইমাম কারখি (র.) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁদের ব্যাখ্যার মূল কথা হলো─ ‘স্বামীর অবস্থা বিবেচনা করে টাকা-পয়সা অজ্ঞাতসারে নেওয়া যাবে। তিনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে খরচাদি না দেন।’
কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রমানিত, স্বামীর জন্য অপরিহার্য হলো─ স্ত্রীর খোর-পোশের ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে স্বামীকে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। তবে হ্যাঁ, স্ত্রী যদি নিজের সম্পদে নিজে চলতে চান, বাবার বাড়ির সম্পদে চলতে চান বা স্বামীর অনুমতি নিয়ে অন্য কোনো জায়েজ পন্থায় টাকা উপার্জন করে চলতে চান; তাহলে কোনো সমস্যা নেই। তিনি চলতে পারবেন। তবে স্বামী এসবে জোর করতে পারবেন না, এটা একান্তই স্ত্রীর ব্যাপার।
এমন অনেক স্ত্রী আছেন, স্বামীর টাকা-পয়সা থাকার পরেও স্বামী থেকে তার এবং সন্তানদের খরচাদি সঠিকভাবে পান না। ভীষণ কষ্টে দিনাতিপাত করেন তারা। অজ্ঞাতসারে স্বামীর পয়সা নিতেও ভয় পান এই ভেবে যে, গোনাহ হবে। এই ধারণা সঠিক নয়। বরং সঠিক হলো─ স্বামী যদি আপনার এবং সন্তানদের প্রয়োজন মোতাবেক খরচ না দেন, তাহলে অজ্ঞাতসারে নেওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে অতিরঞ্জন জায়েয হবে না।
ফিকহের কিতাবগুলোতে পাওয়া যায়─ পরিবারের যাবতীয় খরচাদিই দেন স্বামী। কিন্তু স্ত্রীকে একান্তই ব্যক্তিগত খরচের জন্য কিছুই দেন না। যেটাকে আমরা হাতখরচ বলি। তাহলে স্ত্রী সেটাও নিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের প্রতি খুব খেয়াল রাখতে হবে─ প্রথমত প্রয়োজন থেকে বেশি নেওয়া যাবে না। আর দ্বিতীয়ত স্বামীর অবস্থা বিবেচনা করে নিতে হবে। তার অবস্থা ভীষণ খারাপ আর আপনি অজ্ঞাতসারে অনেক নিবেন, সেটা গোনাহের কারণ হবে।
সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন─ “বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ দিয়েছেন, তারচেয়ে বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না।” (সূরা তালাক: ৭) আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।
-লেখক: হুমায়ুন কবীর
শিক্ষক─ মাদ্রাসাতুল হেরা, ঢাকা।
মিরপুর-২, ঢাকা-১২১৬