এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: দেশের শীর্ষস্থানীয় নিত্য-ব্যবহার্য ও ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশ ২০২৫ সালেও চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপনার বাইরে থাকা (অব্যবস্থাপিত) ১০% প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এই মাইলফলক উদযাপন উপলক্ষে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এবং ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন (ইপসা) এর সহযোগিতায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বে ভিউ র্যাডিসন ব্লু হোটেলে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে। সেখানে তারা তাদের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উদ্যোগের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে। একইসঙ্গে, অনুষ্ঠানে তিনজন বর্জ্য সংগ্রাহক এবং দুইজন ভাঙ্গারিওয়ালা/সিএসও প্রতিনিধিকে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সমাজ উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন; চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও চিফ কনজারভেন্সি অফিসার কমান্ডার আইইউএ চৌধুরী (এস), (বিএন)। আরও ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের সাপ্লাই চেইন ডিরেক্টর রুহুল কুদ্দুস; লিগ্যাল ডিরেক্টর অ্যান্ড কোম্পানি সেক্রেটারি এস.ও.এম. রাশেদুল কাইয়ুম; কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর শামিমা আক্তার এবং ইপসা’র সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর নাসিম বানু।
২০২২ সালের জুনে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং ইপসা’র মধ্যে ত্রিপক্ষীয় এই সহযোগিতা শুরু হয়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। উদ্যোগটির আওতায় এখন পর্যন্ত ২৪,০০০ টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যা শহরের মোট বর্জ্যের প্রায় ১০ শতাংশের সমান। এছাড়া, ৩,০০০ এর বেশি বর্জ্যকর্মীকে নিরাপদভাবে বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০ জনের বেশি ভাঙারিওয়ালা ও ২,০০০ জনের বেশি বর্জ্য সংগ্রাহককে সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম এবং ব্যবসায়িক উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও দক্ষ করে তোলা হয়েছে।
কর্মপদ্ধতি উন্নয়নের পাশাপাশি, এই উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে টেকসই জীবিকা ও দীর্ঘমেয়াদী কমিউনিটি উন্নয়নের পথও তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া, ১,৮২৭ জন বর্জ্যকর্মী ও ভাঙারিওয়ালার জন্য একটি গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স কর্মসূচি চালু করা হয়েছে, যেখানে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হলে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জীবন বীমার সুবিধা রয়েছে। চিকিৎসার খরচ, যেমন- ডাক্তার ফি, হাসপাতালের খরচ ও ওষুধের খরচও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এসব আর্থিক নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাগুলো এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশাজীবীদের জন্য বড় ধরনের সহায়তা নিয়ে এসেছে। জনসচেতনতা তৈরিতেও এই প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৫,০০০টিরও বেশি পরিবারের মাঝে এবং ৭১টি স্কুলের ৭,০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে উৎসস্থলেই বর্জ্য পৃথক করার বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের জন্য প্লাস্টিক দূষণ একটি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ, আর এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকার, বেসরকারি খাত, এনজিও এবং সাধারণ নাগরিকদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ এবং ইপসা’র মধ্যে এই সহযোগিতা একটি অনুপ্রেরণাদায়ক উদাহরণ- যা দেখিয়েছে কিভাবে একসাথে কাজ করে প্লাস্টিককে বর্জ্য নয়, বরং একটি সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। আমি ইউনিলিভার বাংলাদেশ এবং ইপসা-কে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্যকর্মীদের কল্যাণে অবিচল প্রতিশ্রুতির জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা যদি এই পরিবর্তনের নেপথ্যের নায়কদের পাশে থাকি, তাহলে নিশ্চয়ই একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ এবং টেকসই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।”
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে বেসরকারি খাতের উদ্ভাবনকে একত্রিত করে, আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সুরক্ষায় বাস্তব পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, এই মডেলটি দেশের অন্যান্য শহরেও বাস্তবায়ন করা হলে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব হবে।”
ইউনিলিভার বাংলাদেশের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর শামিমা আক্তার বলেন, “ইউনিলিভার বাংলাদেশ প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে প্লাস্টিক টেকসই ব্যবস্থাপনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং ইপসা’র সঙ্গে একসাথে কাজ করে আমরা দেখিয়েছি, সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে টেকসই সমাধান সম্ভব।
অনানুষ্ঠানিকভাবে প্লাস্টিক সংগ্রহ করা শ্রমিকরা আমাদের এই উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ— তাদের ছাড়া বড় পরিসরে প্লাস্টিক সংগ্রহ সম্ভব নয়। তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা একটি ন্যায্য টেকসই অর্থনীতির উদাহরণ তৈরি করছি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা চট্টগ্রামের প্রায় ১০% প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছি, যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মীরা, সরকারি সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীরা সক্রিয়ভাবে একসঙ্গে কাজ করছেন।”
ইপসা’র সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর নাসিম বানু বলেন, “এই সহযোগিতা প্রান্তিক বর্জ্যকর্মীদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি সমাজের সহনশীলতা বৃদ্ধি করে একটি পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রমাণ করে, কমিউনিটি-ভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমেও সবচেয়ে বড় পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।”
উল্লেখ্য, টেকসই উন্নয়ন ও সমাজ উন্নয়নে নিজেদের দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে ইউনিলিভার বাংলাদেশ ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের অগ্রগতির নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে কাজ করে আসছে।
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই বহুজাতিক কোম্পানি ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একটি কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ৩৯.২৫ শতাংশ শেয়ার বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন এবং ৬০.৭৫ শতাংশ মালিকানায় রয়েছে বৈশ্বিক ইউনিলিভার গ্রুপ। বাংলাদেশের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমে কোম্পানির ৯৬ শতাংশ পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। ইউনিলিভার বাংলাদেশ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তুলতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।