জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির স্বীকৃতি পেল মিশন গ্রিন বাংলাদেশের “এক দিনে ৬৪ জেলার বৃক্ষরোপন উদ্যোগ”

Category: ফোকাস Written by Shafiul Azam

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫-এর বৈশ্বিক উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশের তারুণ্যনির্ভর পরিবেশবাদী সংগঠন মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নেতৃত্বে আয়োজিত “এক দিনে ৬৪ জেলায় বৃক্ষরোপন ও সচেতনতা কর্মসূচি”। গত ৫ জুনে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে “প্লাস্টিক নয়, প্রকৃতির জয়” থিমে সারাদেশের জাতীয় ও স্থানীয় ৬৪টি সংগঠনের সহযোগিতায় সব জেলায় একযোগে বৃক্ষরোপন, বৃক্ষবিতরণ ও প্লাস্টিকবিরোধী জনসচেতনতা কর্মসূচির জন্য এই স্বীকৃতি পেল সংস্থাটি।

বুধবার (২৪ জুন) মিশন গ্রিন বাংলাদেশের অফিসিয়াল মেইলে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় এই স্বীকৃতির কথা জানায় ইউনাইটেড ন্যাশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি)। একযোগে ৬৪ জেলায় এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনের জন্য মিশন গ্রিন বাংলাদেশকে ধন্যবাদও জানিয়েছে ইউএনইপি। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই জানিয়েছে সংস্থাটি।

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) পাঠানো ই-মেইল বার্তায় বলা হয়, “বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫‐কে স্মরণীয় করে তুলতে আপনাদের দল যে অবদান রেখেছে, তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। এই প্রচেষ্টার প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত হবে—এটি আমাদের একসাথে ধরিত্রির প্রতি যত্নবান হয়ে বাঁচার পথকে আলো দেখায়। গুরুত্বপূর্ণ এই কাজ অব্যাহত রাখুন—আগামী বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আপনাদের আবার দেখতে চাই।”

এটি বাংলাদেশ থেকে নাগরিক সমাজ নেতৃত্বাধীন সারাদেশব্যাপী পরিবেশ অভিযানকে ইউনাইটেড ন্যাশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম-এর বৈশ্বিক উদ্‌যাপনে সরাসরি স্থান দেওয়ার প্রথম দৃষ্টান্তগুলোর একটি বলেও মেইল বার্তায় উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস ঈদের ছুটির সময়ে হওয়ায় আয়োজন করা অনেক কঠিন ছিল। তবু আমরা সেদিন একযোগে ৬৪ জেলায় বৃক্ষরোপন, বৃক্ষবিতরণ, প্লাস্টিকবিরোধী মানববন্ধন ও সচেতনতা কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সারাদেশ থেকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগ সফল হয়েছে। এই উদ্যোগে আমাদেরকে জাতীয়ভাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ - সিথ্রিইআর, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়্যুথ ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ, তরু পল্লব, স্বপ্নপূরী কল্যাণ সংস্থা সহযোগিতা করেছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে দেশের ৬৪ জেলার শত শত স্বেচ্ছাসেবক ও অংশীদার সংগঠন এতে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিল।

তিনি আরও বলেন, একদিনে অনেক বেশি গাছ লাগানোর মাধ্যমে বড় পরিবর্তন করে ফেলা যাবে না। তবে আমরা চেয়েছি পরিবেশ দিবসে পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তাটি পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে। এটিকে আমরা বড় ধরনের সচেতনতামূলক উদ্যোগ হিসেবে নিয়েছিলাম। এ বছরের অক্টোবরের মধ্যে দেশের ৪৯৫টি উপজেলায় আমরা একই ধরনের কর্মসূচি ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি সবার সহযোগিতা পেলে এই কর্মসূচিও সফল হবে।

‘এই স্বীকৃতি কেবল এক দিনের সাফল্য নয়—এটি প্রমাণ করে প্রত্যন্ত স্তর থেকেই বাংলাদেশের জলবায়ু নেতৃত্ব দিতে পারে এবং আমরা একটি সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও সহনশীল বাংলাদেশের পথে এগোচ্ছি।’ বলেন মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান রনি।

কর্মসূচির সহযোগী সংস্থা বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘স্থানীয় স্বেচ্ছাশ্রম আর উদ্ভাবনী সমন্বয় যে বৈশ্বিক পর্যায়ে মূল্যায়িত হতে পারে, ইউনাইটেড ন্যাশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম-এর স্বীকৃতি তা স্পষ্ট করল। এই সবুজ শক্তিই বাংলাদেশকে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সামনের সারিতে রাখবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পলিসি ও ক্যাম্পেইন কো-অর্ডিনেটর বারীশ হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, বাংলাদেশ এখন কেবল পরিবেশ আন্দোলনের অংশ নয়—আমরাই এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছি। এক দিনে ৬৪ জেলা কর্মসূচি দেখিয়েছে, কীভাবে তৃণমূলের শক্তি জাতীয় পর্যায়ের প্রভাব তৈরি করতে পারে। এটি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিজয়।’

সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ - সিথ্রিইআর’র সহকারী পরিচালক রওফা খানম বলেন, ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম-এর স্বীকৃতি আমাদের কাজের মান, স্থায়িত্ব ও প্রভাবকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরেছে। মিশন গ্রিন বাংলাদেশের এই উদ্যোগ পরিবেশ শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগের একটি দৃষ্টান্ত। শিক্ষার্থী, তরুণ ও গবেষকদের এই অভিযানে যুক্ত করতে পেরে আমরা গর্বিত।’