এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আলিমুল ইসলাম বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। শুধু খাদ্যের প্রাচুর্য নয়, আমাদের নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে সুস্থভাবে গড়ে তুলতে হলে নিরাপদ খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ব এখন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি কৃষি খাতে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছে।
দিনের পর দিন খাদ্য উৎপাদনে ঘটছে বিপ্লব। এ বিপ্লবের ধারাকে আরও ত্বরান্বিত করতে হলে তরুণদের কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, চাকরির পেছনে ছোটা নয়, বরং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করো। তোমাদের উদ্ভাবনী শক্তি, জ্ঞান, পরিশ্রম ও স্বপ্নই পারে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী, আত্মনির্ভরশীল, উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে। তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ অনুষ্ঠাণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার দেশ। এখানে তরুণরাই সবচেয়ে বড় শক্তি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের তরুণ সমাজ শুধুমাত্র চাকরির জন্য ছুটছে। আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। কেবল চাকরি করার প্রবণতা নয়, বরং চাকরি দেওয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে। কারণ চাকরি মানুষকে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ করে দেয়, কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়া মানুষকে সম্মান এনে দেয়, আত্মনির্ভরশীল করে তোলে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে তরুণদের হাত ধরে। এটি হবে আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ। স্বল্প পুঁজি, সামান্য জ্ঞান কিংবা সীমিত মেধা দিয়েও একজন তরুণ যদি সৎ উদ্দেশ্য ও কঠোর পরিশ্রম নিয়ে এগিয়ে আসে, তবে সে কেবল নিজের ভাগ্যই নয়, আরও অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে।
সরকার ঘোষিত ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর আয়োজনে এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ‘তারুণ্যের উদ্ভাবনী শক্তি, কৃষি রূপান্তরের চালিকা শক্তি’ শীর্ষক একটি সেমিনার অদ্য ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলিমুল ইসলাম। বিএআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম এর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিকৃবি ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ.টি.এম মাহবুব-ই-ইলাহী, কৃষি মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব ড. মোঃ লুৎফুর রহমান, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার ও প্রক্টর প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আহাম্মদ।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএআরসি’র কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সদস্য পরিচালক এবং ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ কর্মসূচি আয়োজক কমিটির আহবায়ক ড. মোঃ মোশাররফ উদ্দিন মোল্লা। সেমিনারে ‘তারুণ্যের উদ্ভাবনী শক্তি, কৃষি রূপান্তরের চালিকা শক্তি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএআরসি’র কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আব্দুস সালাম। সেমিনারে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে তরুণদের উৎসাহিত করতে সারাদেশ থেকে কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ০৮ জন উদ্যোক্তা তাদের সফলতার গল্প উপস্থাপন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিকৃবি ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ.টি.এম মাহবুব-ই-ইলাহী বলেন, ধৈর্য ও পরিশ্রম করলে জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে যেমন সফলতা অর্জন সম্ভব, তেমনি কৃষিক্ষেত্রেও সাফল্য অনিবার্য। কৃষক, গবেষক, নীতি-নির্ধারক এবং তরুণ উদ্যোক্তা সবাই মিলে আমরা যদি কৃষিকে আধুনিক, নিরাপদ ও টেকসই করার লক্ষ্যে কাজ করি, তবে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
কৃষি মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব ড. মোঃ লুৎফুর রহমান বলেন, কৃষি পেশা কেবল জমি চাষ করা নয় এটি একটি সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ পেশা। আজকের তরুণ প্রজন্ম যদি পরিশ্রম, দক্ষতা এবং দূরদৃষ্টি নিয়ে কৃষিতে আত্মনিয়োগ করে, তবে এখান থেকেও গড়ে তোলা সম্ভব একটি সফল ক্যারিয়ার। কৃষিতে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ব্যবহার ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য উন্মুক্ত করতে পারি উন্নয়নের অসংখ্য দুয়ার। নিরাপদ খাদ্যই আগামী প্রজন্মের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষক, গবেষক, নীতি-নির্ধারক ও ভোক্তা সবার ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই কৃষি উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে নিরাপত্তা ও মান বজায় রাখার বিকল্প নেই।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে গমের উৎপাদন ১১গুণ, তৈলবীজের ৬.৭গুন, ধানের ৩.৬ গুণ, আলুর ১২.৩ গুণ, ডালের ১.৬ গুণ, সবজির ৬.৮২ গুণ, ভূট্টার ৪০০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বিশ্বে কৃষি প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদেরও সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। ডিজিটাল কৃষি হবে আগামীর জ্বালানি শক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ কৃষিকে আরও সহজ, উৎপাদনশীল এবং টেকসই করবে। কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ড্রোন প্রযুক্তি, আইওটি এবং আধুনিক তথ্যব্যবস্থার ব্যবহার কৃষকদের উৎপাদন বাড়াবে এবং তাদের জীবনমান উন্নয়ন করবে।
সেমিনারে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিএআরসি’র কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী, বিভিন্ন এনজিও ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিসহ প্রায় ৬০০ জন অংশগ্রহণ করেন।