
এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:ব্রাজিলের বেলেম শহরে যখন জাতিসংঘের বার্ষিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ-৩০) অনুষ্ঠিত হচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিশাল 'গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক' (বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে একশনএইড বাংলাদেশ-এর সাথে সংহতি প্রকাশ করে ১৩ যুব সংগঠনের পাঁচ শতাধিক তরুণ জলবায়ু কর্মী এই সমাবেশে যোগ দিয়ে একটি সবুজ, ন্যায্য ও সমতাপূর্ণ বিশ্বের দাবি জানিয়েছে।
সমাজের সর্বস্তরের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা একত্রিত হয়ে বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে ন্যায়বিচার-কেন্দ্রিক পদক্ষেপের দাবি জোরদার করেছেন। তরুণরা বিভিন্ন রঙিন ফেস্টুন, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে তাদের কণ্ঠকে জোরালো করে তুলেছে। জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করা; জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ স্থানান্তর করা এবং সবার জন্য সবুজ, সমতাপূর্ণ, ন্যায্য ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
তরুণ জলবায়ু কর্মীরা সম্মিলিতভাবে ন্যায্য রূপান্তরের এজেন্ডাটি পুনঃউল্লেখ করে দাবি জানিয়েছে যে, কপ-৩০ যেন একটি সিদ্ধান্তমূলক কপ হয়, যেখানে গ্লোবাল সাউথের জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়। তারা জোর দিয়ে বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনা এবার ব্যর্থ হওয়া উচিত নয়। বিশ্বনেতাদের কাছে ফাঁকা প্রতিশ্রুতি থেকে বেরিয়ে এসে সুনির্দিষ্ট ন্যায়বিচার-কেন্দ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বৃহত্তর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে তারা।
এই ধর্মঘটে কেবল ঢাকা নয়, খুলনা, নেত্রকোনা, বান্দরবান, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, পটুয়াখালী, ভোলা, রাজশাহী, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, কুড়িগ্রাম, টেকনাফ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ ২৪টিরও বেশি জেলা থেকে এবং গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম লোকাল ইয়ুথ হাবের হাজারেরও বেশি অ্যাক্টিভিস্ট ও তরুণরা 'ফ্রাইডেস ফর ফিউচার'-এর সাথে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয়।
দেশজুড়ে এই প্রাণবন্ত ও শান্তিপূর্ণ জলবায়ু পদযাত্রায় তরুণরা জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং ন্যায্য ও সমতাপূর্ণ রূপান্তরের জন্য তাদের আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করতে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে স্লোগান দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: জাস্ট ট্রানজিশন নাউ, ফান্ড আওয়ার ফিউচার, ক্লাইমেট ফাইন্যান্স, স্টপফসিলফুয়েল, ক্লাইমেট জাসটিস নাউ, পে আপ ফর লস অ্যান্ড ড্যামেজ, ক্লাইমেট স্ট্রাইক, এন্ড ফসিল ফুয়েল।
তরুণ জলবায়ু অধিকারকর্মী সাদিয়া আক্তার বলেন, “ন্যায্য রূপান্তর কার্যক্রমে অবশ্যই পরিবেশবান্ধব কাজের সৃষ্টি করতে হবে, মর্যাদাপূর্ণ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, প্রযুক্তি স্থানান্তর করতে হবে এবং তরুণদের নেতৃত্বাধীন সমাধানগুলিতে সমর্থন দিতে হবে। সবুজ অর্থনীতিকে অবশ্যই তরুণবান্ধব হতে হবে, যেখানে তরুণদের পরিবেশবান্ধব ধারণা বাস্তবায়নে ক্ষমতায়নের জন্য জলবায়ু অর্থায়ন সহজলভ্য থাকবে। টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এই পরিবর্তনে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা উচিত নয়।”
এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে একশনএইড বাংলাদেশ-এর ইয়ুথ এন্ড জাস্ট সোসাইটি টিমের লিড মো. নাজমুল আহসান বলেন, “কপ-৩০ এর আগে জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য যারা সোচ্চার হচ্ছে, দেশজুড়ে সেই তরুণদের সঙ্গে আমরা সংহতি প্রকাশ করছি। আমরা তাদের ন্যায্য রূপান্তরের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাই, যা তাদের জীবন-জীবিকা, মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণতা থেকে সুরক্ষার অধিকারকে সম্মান ও বাস্তবায়ন করবে। আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে যুব-নেতৃত্বাধীন সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী ও ক্ষমতায়নের জন্য নিঃশর্ত আর্থিক সহায়তার দাবিতেও তাদের কণ্ঠের প্রতিধ্বনি করছি।”
বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রভাগে রয়েছে। একশনএইড বাংলাদেশ 'ফান্ড আওয়ার ফিউচার' প্রচারণার অধীনে, ফ্রাইডেস ফর ফিউচার-এর সাথে সংহতি রেখে, ক্ষতিকারক জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসা বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য, সবুজ ও টেকসই জ্বালানি-কেন্দ্রিক প্রকল্প ও কার্যক্রমে আরও বেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যে দেশজুড়ে হাজারো তরুণ জলবায়ু কর্মীকে একত্রিত করে।
জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য এই ধারাবাহিক দাবি আজ এবং আগামী বছরগুলোর জন্য বিশ্বকে ন্যায্যতায় রূপ দেবে বলে আশ্বাস তরুণ জলবায়ু কর্মীদের।