ড. মোঃ মাহফুজ আলম: বোঁটা পঁচা আমের সংগ্রহোত্তর একটি মারাত্মক রোগ, যা Botryodiplodia theobromae নামক এক প্রকার ছত্রাকের কারণে ঘটে। প্রথমে আমের বোঁটায় ছোট বাদামী বা কালো দাগ দেখা দেয়, যা দ্রুত বড় হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছত্রাক ফলের শাঁস পর্যন্ত প্রবেশ করে, যেখানে এটি এনজাইম নিঃসরণ করে আমের কোষগুলোর গঠন নষ্ট করে ফেলে। ফলে, আক্রান্ত আম মাত্র ২-৩ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ পঁচে যায়।
উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্র আবহাওয়া এই রোগের দ্রুত বিস্তারের জন্য অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা ফলের দ্রুত ক্ষতির অন্যতম কারণ।
১. বোঁটা পঁচা রোগের কারণ:
- ছত্রাকের নাম: Botryodiplodia theobromae or Lasiodiplodia theobromae
- বিস্তার: বায়ু, বৃষ্টি, সংক্রামিত যন্ত্রপাতি এবং সংক্রমিত গাছের অংশের মাধ্যমে ছড়ায়।
- অনুকূল পরিবেশ: ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্রতা (৮০%+) এই রোগের দ্রুত বিস্তারে সহায়ক।
- অবহেলা: অপরিচ্ছন্ন বাগান, অপর্যাপ্ত ছাঁটাই এবং পানি নিষ্কাশনের অভাব।
২. বোঁটা পঁচা রোগের লক্ষণ:
- ফলে: বোটা বা ডাঁটায় কালো বা বাদামি দাগ যা ধীরে ধীরে বড় হয়ে পচে যেতে শুরু করে।
- অভ্যন্তরীণ ক্ষতি: ফলের অভ্যন্তরে ছত্রাকের বৃদ্ধির ফলে মাংসল অংশ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
- ফলের গন্ধ: পচনের ফলে ফল থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে।
- সংরক্ষণে সমস্যা: ফল সংগ্রহের পরেও পচনের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে, যা ফলের গুণগত মান কমিয়ে দেয়।
৩. ক্ষতির প্রক্রিয়া:
- ফলন হ্রাস: বড় পরিমাণে ফল নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং বাজারমূল্য কমে যাওয়া।
- রপ্তানি সংকট: রোগাক্রান্ত ফলের গুণগত মান কমে যাওয়ার কারণে রপ্তানির সুযোগ হ্রাস।
- ভোক্তার সন্তুষ্টি কমে যাওয়া: পচা ও নিম্নমানের ফলের কারণে ভোক্তাদের অসন্তোষ।
৪. বোঁটা পঁচা রোগের দমনে করণীয়:
- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
- নিয়মিত গাছের পরিচর্যা ও ছাঁটাই করুন।
- গাছের আশপাশ পরিষ্কার রাখুন এবং জমিতে পানি জমে থাকা এড়িয়ে চলুন।
- সংক্রমণমুক্ত চারা রোপণ করুন।
- রোগ নিবারণ:
- ফল সংগ্রহের আগে ছত্রাকনাশক (যেমন: কারবেন্দাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক) স্প্রে করুন।
- ১৫ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করুন।
- ফল সংগ্রহের পর ৫২-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১০-১৫ মিনিট গরম পানিতে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করুন।
- ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:
- পরিপক্ব ফল সময়মত সংগ্রহ করুন।
- ফল সংগ্রহের পরে ফলগুলোকে পরিষ্কার এবং শুকনো স্থানে সংরক্ষণ করুন।
আমের বোঁটা পঁচা একটি মারাত্মক রোগ যা সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ এই রোগের বিস্তার রোধ করতে সহায়ক
লেখক: প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (BARC)