খামারি থেকে এক্সপোর্টার: প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে চিংড়ি চাষের চিত্র

Category: এগ্রিবিজ এন্ড টেক্ Written by Shafiul Azam

রাজধানী প্রতিনিধি: বাংলাদেশের চিংড়ি শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। একসময় যেখানে খামারিরা শুধুমাত্র স্থানীয় বাজারের জন্য চিংড়ি উৎপাদন করতেন, এখন আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার ফলে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মানের চিংড়ি রপ্তানি করতে সক্ষম হচ্ছেন।

আজ শনিবার ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানী বনানীর গ্যালেসিয়া হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় দেশের খ্যাতনামা একোয়াকালচার বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তিভিত্তিক চিংড়ি চাষের নানা বিষয়গুলি তুলে ধরেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন এ কর্মশালা বাস্তবায়ন করছে এগ্রো সলিউশন। খ্যাতনামা একোয়াকালচার বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ কর্মশালা চিংড়ি খামারিদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

প্রযুক্তিনির্ভর চিংড়ি চাষের মূল দিকগুলো ফুটিয়ে তুলতে সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টের আওতায় “উন্নত ও প্রযুক্তিনির্ভর চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনা” শীর্ষক কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য ও প্রতিষ্ঠান পরিচিতি তুলে ধরেন এগ্রো সল্যুশনের প্রধান নির্বাহী অং থোয়েন এ (অন্তু)।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিংড়ি চাষে সঠিক ব্যবস্থাপনা, আবহাওয়ার প্রভাব, অক্সিজেন উৎপাদনে আবহাওয়ার ভূমিকা, পানির গুণগত মান বজায় রাখতে আবহাওয়া ভিত্তিক খাদ্য প্রয়োগের গুরুত্ব এবং চিংড়ির খোলস পরিবর্তনে মিনারেলসের ভূমিকা এসব কারিগরি বিষয়গুলি জানা অত্যন্ত জরুরি। আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে চিংড়ি চাষে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা আরো জানান, প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদ শুধু উৎপাদনশীলতা বাড়াচ্ছে না, বরং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে চিংড়ি রপ্তানির পথও সুগম করছে। আগে যেখানে অনেক খামারি সীমিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার কারণে ক্ষতির মুখে পড়তেন, এখন তারা আধুনিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন।

দিনব্যাপি এ কর্মশালায় মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আরো উপস্থিত ছিলেন উপ প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শরিফুল আজম, গ্রান্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম, সহকারী প্রকল্প পরিচালক আ. ন. ম. মুশফিকুস সালেহীন, সহকারী প্রকল্প পরিচালক মোঃ মঈনুল ইসলাম, সহকারী প্রকল্প পরিচালক তাছলিমা আক্তার, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা তাপসী মরিয়ম বেগম প্রমুখ।

মধ্যাহ্নভোজের পর অনুষ্ঠিত সেশনে চিংড়ি চাষে ফিশ ক্লিনিক সেবা কার্যক্রম এবং “খামার সেবা” কল সেন্টারের কার্যক্রম উপস্থাপন করা হয়। এখানে মেশিন লার্নিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ প্রদানের পদ্ধতি তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি পানির গুণগত মান পরীক্ষা প্রদর্শনী ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, যা অংশগ্রহণকারী খামারিদের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়।

সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন কর্মশলার সভাপতি মৎস্য অধিদপ্তরের উপ প্রকল্প পরিচালক মি: বরুন চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, চিংড়ি চাষে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে খামারিরা আরও বেশি লাভবান হবেন এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্প এবং বেসরকারি খাতের প্রযুক্তি সেবা খামারিদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ফলে স্থানীয় খামারিরা এখন শুধু উৎপাদক নন, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক এক্সপোর্টার হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন।

চিংড়ি শিল্পে এই প্রযুক্তিগত রূপান্তর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে বলে মনে করছেন চিংড়ি চাষে সম্পৃক্ত সকলে।