
এগ্রিলাইফ প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ফিশ ফিড শিল্প বর্তমানে উৎপাদন-প্রযুক্তি, ফিড নিরাপত্তা, পুষ্টি দক্ষতা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প খোঁজার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন অ্যাডিটিভ ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ফিড ফরমুলেশন ও ফিড মান উন্নয়নে এসিডিফায়ার (Acidifier) একটি কার্যকরী সমাধান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে ফিশ ফিড ফরমুলেশনে এসিডিফায়ার ব্যবহারের বিষয়টি শিল্পের ভেতরে নতুন আগ্রহ তৈরি করেছে। আর বি এগ্রো লিমিটেড (কেজিএস গ্রুপ)-এর এজিএম, সেলস অ্যান্ড টেকনিক্যাল এবং ফিশ ফিড, পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির সম্প্রতি এসিডিফায়ারের কার্যকারিতা ও শিল্পে এর প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।
ফিড ও অন্ত্রে pH কমিয়ে উন্নত হজম
পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির জানান, এসিডিফায়ার ফিড গ্রহণের পর অন্ত্রে pH কমিয়ে মাছের হজম প্রক্রিয়াকে উল্লেখযোগ্যভাবে সক্রিয় করে তোলে। পিএইচ কমার ফলে হজমকারী এনজাইমগুলো কার্যকর হয় এবং এর ফলে প্রোটিন, খনিজ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের শোষণ বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, “এসিডিফায়ার ব্যবহারে মাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়, আর ফিড কনভার্সন রেশিও (FCR) দৃশ্যমানভাবে উন্নত হয়।”
অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা ও রোগ প্রতিরোধে সহায়তা
অন্ত্রের ভেতর একটি স্থিতিশীল এবং সামান্য এসিডিক পরিবেশ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমিয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উন্নয়নে সহায়তা করে। পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির জানান, এসিডিফায়ার সালমোনেলা, ই. কোলাইসহ বিভিন্ন প্যাথোজেনিক জীবাণুর বৃদ্ধি দমন করে। পাশাপাশি ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়ার মতো উপকারী জীবাণুর বিস্তার বাড়ায়, যা মাছকে রোগ প্রতিরোধে প্রাকৃতিকভাবে শক্তিশালী করে। তিনি আরও বলেন, “অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে এসিডিফায়ার একটি টেকসই সমাধান। বিশ্বমানের অ্যাকুয়াকালচারে এটি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।”
ফিড স্টোরেজে মোল্ড, ইস্ট ও ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ
বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়ায় ফিড স্টোরেজে মোল্ড ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ একটি বড় সমস্যা। এসিডিফায়ারে থাকা ফর্মিক, প্রোপিওনিক, বিউটরিক ও সাইট্রিক অ্যাসিড ফিডের পিএইচ কমিয়ে এসব মাইক্রো-অর্গানিজমের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। এতে ফিডের মেয়াদ বৃদ্ধি পায় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে। সাইফি নাসির বলেন, “ফ্যাক্টরি স্টোরেজে এসিডিফায়ার ফিড হাইজিন নিশ্চিত করে। মোল্ড ও মাইকোটক্সিনের ঝুঁকি কমায়, যা মাছের স্বাস্থ্য ও ফার্মারদের উৎপাদন সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
পুষ্টি গ্রহণ ও শক্তি বিপাকে অতিরিক্ত সুবিধা
বিশেষ কিছু জৈব এসিড মাছের বিপাকীয় কার্যক্রমে সরাসরি ভূমিকা রেখে অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করে। এর ফলে মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। খনিজ শোষণ বৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের পুষ্টি ব্যবহার দক্ষতাও উন্নত হয়। তাঁর মতে, এসিডিফায়ার ব্যবহারে মৃত্যুহার কমে এবং সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির জানান, ফিশ ফিডে এসিডিফায়ার যোগ করার মাধ্যমে শুধু মাছের বৃদ্ধি নয়, বরং পুরো ফিড ইন্ডাস্ট্রিতেই এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। ফিশ ফিডে এসিডিফায়ার ব্যবহার শুধু পুষ্টি বা বৃদ্ধি নয়, বরং ফিড নিরাপত্তা, মাইক্রোবিয়াল নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অ্যান্টিবায়োটিক বিকল্প হিসেবে একটি সমন্বিত সমাধান প্রদান করে। জাতীয় অ্যাকুয়াকালচার শিল্পকে আরও টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে এসিডিফায়ার ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির।