রংপুরে “হিমায়িত মাংস ও দুধ খাওয়ার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা সপ্তাহ” পালন

Category: ফারমার্স এন্ড ফার্মিং প্রডাক্টস্ Written by Shafiul Azam

এগ্রিলাইফ প্রতিনিধি: খোলা মাংস ও দুধে স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং হিমায়িত খাদ্যের পুষ্টিগুণ ও নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য সারাদেশে ১২ মার্চ থেকে ১৮ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত “হিমায়িত মাংস ও দুধ খাওয়ার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা সপ্তাহ” পালন করা হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংক এর সহায়তায় আইআরজি ডেভলোপমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (আইআরজিডিএসএল) ১৩ মার্চ ২০২৫, দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রংপুরের যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একটি বিশেষ ক্যাম্পেইন আয়োজন করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হিমায়িত মাংস ও পাস্তুরিত দুধ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত, কারণ এটি আধুনিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত হয়। হিমায়িত মাংস সঠিক উপায়ে সংরক্ষণের ফলে এতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সুযোগ কম থাকে এবং এর পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে। একইভাবে, পাস্তুরিত দুধ উচ্চ তাপমাত্রায় প্রক্রিয়াকৃত হওয়ায় এতে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস হয়, যা খাদ্যজনিত রোগের ঝুঁকি কমায়। অপরদিকে, বাজারের খোলা মাংস ও দুধ সংরক্ষণের মানদণ্ড অনুসরণ না করায় তা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। খোলা মাংসে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা ফুড পয়জনিংসহ নানা রোগের কারণ হতে পারে। তাছাড়া, কাঁচা দুধে টিবি, ব্রুসেলোসিস ও সালমোনেলা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে, যা মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

দেশের বাজারে মাংস ও দুধের গুণগত মান নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাবার নিশ্চিতে হিমায়িত মাংস ও পাস্তুরিত দুধ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে খোলা মাংস ও কাঁচা দুধ হতে পারে নানা রোগের উৎস। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা হিমায়িত মাংস ও পাস্তুরিত দুধ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে কেনা ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষিত খাবার গ্রহণই সুস্থ জীবনের অন্যতম চাবিকাঠি। সরকারের পাশাপাশি ভোক্তাদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে, যাতে খোলা ও অনিরাপদ খাদ্য বর্জন করে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা যায়।

প্রাণিসম্পদ ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ ড. এস এম রাজিউর রহমান বলেন, খোলা বাজারের মাংস বেশি সতেজ সুস্বাদু হয়– এই বিশ্বাসও ভুল! খোলা বাজারে দীর্ঘ সময় খোলা থাকা মাংস জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে দ্রুত নষ্ট হতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। একইসাথে, পাস্তুরিত দুধ, ঠাণ্ডা দুধ ও ইউএইচটি দুধ খাঁটি, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ। এই ধরনের দুধ উচ্চমানের প্রযুক্তিতে জীবাণুমুক্ত করা হয়, যা প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য অপরিহার্য।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মো. আবু ছাইদ বলেন, বিশ্ব ব্যাংক হিয়ামিত মাংস ও দুধ খাওয়ার জন্য যে সচেতনতা চালাচ্ছে এটা একটা সময়োপযোগী উদ্যোগ। আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে বিশ্ব ব্যাংক ও আইআরজিকে এই ব্যাপারে যে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, উন্নত বিশ্বের মত সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য একই মানের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে।
আইআরজিএসএল এই প্রচারণা সপ্তাহে বিভিন্ন ব্যানার, লিফলেট, গণমাধ্যম প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে সরাসরি সংলাপের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে।

বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক যোগাযোগ কর্মকর্তা তারেক মাহমুদ বলেন, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ শুধু একটি অভ্যাস নয়, এটি সুস্থ জীবনের অপরিহার্য শর্ত। বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিমায়িত দুধ ও মাংস খাওয়ার প্রচারণা সপ্তাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব তুলে ধরছে। খাদ্যবাহিত রোগ প্রতিরোধ, সুস্থতা নিশ্চিত এবং একটি শক্তিশালী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে আমাদের সকলেরই স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর হিমায়িত মাংস ও দুধ বেছে নেওয়া উচিত।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার মুন্নী, সিনিয়র প্রশিক্ষণ প্রাণিসম্পদ মো. মিজানুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন রংপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর কো-অর্ডিনেটর আবুল কাশেম। ক‍্যাম্পেইন প্রোগ্রামের শুরুতেই বিশিষ্ট কৃষি ও প্রাণিসম্পদ অর্থনীতিবিদ এবং প্রকল্প টিম লিডার প্রফেসর ডক্টর এস এম ফখরুল ইসলামের লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়।

“সচেতন ভোক্তা, স্বাস্থ্যবান পরিবার—নিরাপদ খাবারে হিমায়িত দুধ-মাংসের অগ্রাধিকার!”