খুলনায় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতবিনিময় সভা: খাল খননে কৃষি ও জীবিকায়নের টেকসই উন্নয়ন

Category: ফারমার্স এন্ড ফার্মিং প্রডাক্টস্ Written by Shafiul Azam

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: রাজকীয় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের আর্থিক সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও এর সহযোগী সংস্থা উত্তরণ কর্তৃক আয়োজিত 'সফল ফর ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (IWRM)' প্রকল্পের উদ্যোগে আজ খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা পর্যায়ের সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও খুলনার জেলা প্রশাসক আ.স.ম. জামশেদ খোন্দকার। সভায় সলিডারিডাড ও উত্তরণ-এর পক্ষ থেকে প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করেন আইডব্লিউআরএম (IWRM) প্রকল্পের খুলনা অঞ্চলের ম্যানেজার কৃষিবিদ মোস্তফা নূরুল ইসলাম এবং সলিডারিডাড-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার কৃষিবিদ ড. এস এম ফেরদৌস।

কৃষিবিদ মোস্তফা বলেন, আইডব্লিউআরএম প্রকল্পের আওতায় খুলনা অঞ্চলে জলাবদ্ধতা নিরসন ও সেচ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খাল ও জলাশয় পুনঃখনন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। স্থানীয় কমিউনিটিকে যুক্ত করে পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং পানি ব্যবহারকারী দল তৈরির মাধ্যমে টেকসই কৃষি ও মৎস্য চাষ নিশ্চিত করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৃষকদের কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্জন করার জন্য 'ক্লাইমেট স্মার্ট' কৃষি প্রযুক্তি এবং পানি সাশ্রয়ী পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে। যার ফলে এই অঞ্চলে পূর্বের তুলনায় নিরাপদ কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আ.স.ম. জামশেদ খোন্দকার বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসন ও সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। খাল খনন ও এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের ফলে কৃষকদের ভোগান্তি কমছে এবং কৃষি উৎপাদন বাড়ছে। তবে এই সুফল দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও রক্ষণাবেক্ষণে সম্পৃক্ত হতে হবে।”

তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই কাজ সমাধা করা সম্ভব না। আমাদের কাজ হলো সকল পক্ষকে একত্র করে পানির সুষম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খুলনা অঞ্চলের কৃষিকে টেকসই অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। সলিডারিডাড ও উত্তরণ-এর এই উদ্যোগ খুলনার কৃষি ও মৎস্য খাতে যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে তা প্রশংসনীয়।”

সভায় বক্তারা জানান, খাল খনন ও কমিউনিটির দ্বারা এর পরিচালনার ফলে কৃষক ও মৎস্যচাষীরা সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন। আগে পণ্য পরিবহনে যে কষ্ট হতো, এখন নৌকায় সহজে পরিবহন সম্ভব হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসন ও সেচ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ধান, সবজি ও তরমুজ চাষে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সভায় অংশ নেওয়া কৃষক ও মৎস্যচাষী প্রতিনিধিরা জানান, খাল খননের পর পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং দীর্ঘদিন পর তারা আবার মাছ ও সবজি চাষে সফল হচ্ছেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা খাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট রাখা, ইউনিয়নভিত্তিক সমন্বিত খাল খনন কার্যক্রম গ্রহণ, ভাসমান কৃষি ও জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব ফসল উৎপাদনকে উৎসাহিত করার সুপারিশ করেন।

উক্ত মতবিনিময় সভায় সম্মানীয় অতিথি ও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য-সচিব বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মন্ডল, এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কামরুল ইসলাম সরদার, জেলা সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এবং সলিডারিডাড ও উত্তরণ-এর কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়াও পুনঃখননকৃত মাইক্রো-ওয়াটারসেড সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও কৃষকবৃন্দ।