বাকৃবি প্রতিনিধি: রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল ৩ নং গেইটের সামনে চাঁদা না দেওয়ায় অপরাধে ভাংগারি ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গসংগঠনের চাঁদাবাজ কিছু নেতাকর্মী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ওই নেতাকর্মীরা সোহাগের রক্তাক্ত দেহের ওপর পাথর নিক্ষেপ করছে এবং তার উপর দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে উন্মত্ততা প্রদর্শন করছে।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ছাত্রনেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক পেজে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, "হাসিনার আওয়ামী জাহেলিয়াতের জায়গায় জন্ম নিল নতুন আরেক জাহেলিয়াত!" "বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগেই ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের দানবীয় রূপে ফিরে এসেছে।" কেউবা লিখেছেন, "এই উপত্যকায় বিপ্লব এখনও শেষ হয়নি। ' আওয়ামী লীগের নতুন কার্বন কপির জন্ম হলো!"
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাকৃবি শাখার সভাপতি আবু নাসের ত্বোহা ফেসবুকে লিখেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে আবারও এমন নৃশংসতা দেখতে হবে, তাও আবার আরেক জুলাইয়ে এসে, এদেশের মানুষ কখনোই কল্পনাও করেনি। তার অপরাধ কেবল যুবদলের কর্মীকে চাঁদা না দেওয়া। এজন্য তাকে উলঙ্গ করে, পাথর মেরে, হত্যা করে তার লাশের উপর বুনো উল্লাস করেছে। একবিংশ শতাব্দীতে যেন আবারও ফিরে এসেছে মধ্যযুগীয় বর্বরতা। এই ছবি, ভিডিওগুলো আমাদের হৃদয়কে আন্দোলিত করে। লাল সবুজের পতাকার বুকে আবারও শকুন, হায়েনাদের রক্তের নেশা আমাদের লজ্জিত করে।
তিনি আরও লিখেন, আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধদের আত্মত্যাগের সম্মান দিতে জাতি হিসেবে আমরা ব্যর্থ। এসব দেখে আমাদের রক্ত গরম হয়, হৃদপিন্ডে তীব্র যন্ত্রণা হয়, তবে আমাদের আর ভয় করে না। কারণ ভয় তো কেটে গেছে বিগত জুলাইয়েই। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ফ্যাসিস্টদের জায়গা এই বাংলার জনপদ মেনে নেয় নি। আমরা জানি কিভাবে বিপ্লবের ইতিহাস লিখতে হয়। ইতিহাস লেখার সেই হাত আমাদের এখনও শক্তিশালী আছে। যে কেউ নতুন ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবেন, নতুন জালিম হয়ে উঠবেন, আমরা নতুন জুলাইয়ের উদ্ভব ঘটাবো। এই জনপদকে আমরা জালিমদের হাতে ছেড়ে দিবো না।
এই বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাকৃবি শাখার সভাপতি সঞ্জয় রায় জানান, গত এক বছরে দেশে বহু খুনের ঘটনা ঘটেছে, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচার ব্যবস্থার নাজুক অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। তবুও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তা সুসংগঠিত করার মতো কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। একইসঙ্গে খুনের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও নিশ্চিত করা হয়নি। প্রশাসনের এই নীরব ভূমিকা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুধু অপরাধের মাত্রা বাড়ায়নি, বরং নৃশংসতার মাত্রাও বাড়িয়েছে। আমরা বিএনপিসহ সন্ত্রাস কায়েমের সকল অপশক্তিকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই—গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশে সেই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ভুলে গিয়ে যারা লুটপাট ও মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, দেশের সাধারণ মানুষ তা কখনোই মেনে নেবে না। গত ৫ আগস্টে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সেই ঐতিহাসিক রায় দেশের আপামর জনগন জানিয়ে দিয়েছে। আরও একবার যদি ফ্যাসিবাদ নতুন রূপে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তবে তা কঠোর হাতে প্রতিহত করা হবে। কোনো ধরনের অত্যাচারকে কখনও প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাকৃবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মঈন জানান, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আজ দেশে এক ভয়াবহ অরাজকতার রূপ নিয়েছে। সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। আমরা মিটফোর্ডসহ দেশের প্রতিটি অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । এই দায় কোনোভাবে এড়ানো যায় না। অন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে, অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। আমরা চাই একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ।