বাকৃবি প্রতিনিধি-বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম ও তার গবেষক দল অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনের দাবি করেছেন। উদ্ভিজ্জ নির্যাস, বিশেষ করে নিমের নির্যাস থেকে তৈরি এই বিশেষ ফর্মুলার নাম 'BAUSafe-Vet', যা প্রায় শতভাগ নিরাপদ ব্রয়লার উৎপাদনে কার্যকর বলে জানান অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম।
ড. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সাত বছর ধরে চলমান এই গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। গবেষণা দলে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. আবু রায়হান পারভেজ, শাকিল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, তানভীর হাসান, নাজিবুল হক ও আশরাফুল আলম।
সম্প্রতি, ৩১তম বাংলাদেশ ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণা সমিতি (বিএসভিইআর) আয়োজিত বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এই গবেষণার পোস্টার "High Performance Liquid Chromatography Analysis of Azadirachta in a Pathway to Drug Discovery for Safe Poultry Production in Bangladesh" শীর্ষক উপস্থাপনা সেরা পোস্টার পুরস্কার অর্জন করেছে। এতে গবেষণাটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে বলে জানান অধ্যাপক শফিকুল।
পোল্ট্রি খামারিরা সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের দিনেই মুরগি বিক্রি করা হয়, যা মানবদেহে প্রবেশ করে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যা সমাধান করতেই উদ্ভাবিত হয়েছে 'BAUSafe-Vet'।
অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম জানান, এটি একটি বিশেষ ধরনের সল্যুশন বা উদ্ভিজ্জ নির্যাস যা পোল্ট্রি শিল্পে অ্যান্টিবায়োটিক-মুক্ত ব্রয়লার উৎপাদনের সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিম পাতার গ্রোথ প্রোমোটিং ইফেক্ট, ইমিউনো-স্টিমুলেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাবসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংযুক্ত করে এই নির্যাস তৈরি করা হয়েছে।
এই সল্যুশনের কার্যকারিতা যাচাইয়ে ল্যাব ট্রায়াল শেষে দিনাজপুর ও গাজীপুরে ফিল্ড ট্রায়াল চালানো হয়।
ড. শফিকুল বলেন, "ফিল্ড ট্রায়ালে দেখা গেছে, এই সল্যুশন ব্যবহারে প্রতিটি মুরগির ওজন প্রায় ৩৫০-৫০০ গ্রাম বেশি হয়েছে, যা মোট ওজনের ৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি, মাংসের গুণগত মান ও স্বাদ সাধারণ ব্রয়লারের তুলনায় বেশি। মুরগির স্বাস্থ্যও ভালো থাকায় বাড়তি কোনো ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়নি।"
তিনি আরও জানান, এটি প্রায় ১০০% নিরাপদ, কারণ সল্যুশন প্রয়োগের পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি এবং ভ্যাকসিন দেওয়া হলে আর অন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয়নি।
ড. শফিকুল ইসলাম বলেন,"১০০টি মুরগির জন্য প্রায় ২ লিটার 'BAUSafe-Vet' প্রয়োজন, যার খরচ ৪,০০০ টাকা। তবে মুরগির ওজন ও গুণগত মান বৃদ্ধি পাওয়ায় এই খরচ সহজেই পোষিয়ে আসে।"
গবেষকরা এখন এটি পেটেন্ট করার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অধ্যাপক শফিকুল মনে করেন, এই উদ্ভাবন শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী পোল্ট্রি শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে। এটি পোল্ট্রি খামারিদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পকে বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।