রোটারিয়ান ড. মো হেমায়েতুল ইসলাম আরিফঃ
ভূমিকা
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৮ নভেম্বর ২০১২ তারিখের প্রস্তাবের মাধ্যমে ২১শে মার্চ আন্তর্জাতিক বন দিবস প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালে পালিত হতে যাওয়া ১৩তম বিশ্ব বন দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে “বন বনানী সংরক্ষণ, খাদ্যের জন্য প্রয়োজন”। এই প্রবন্ধে কপ-২০ প্রটোকলের অধীনে কার্বন ট্রেডিং, এলডিসি দেশসমূহের অধিকার এবং বন সংরক্ষণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
কার্বন ট্রেডিং কী?
কার্বন ট্রেডিং হলো একটি বাজারভিত্তিক ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা তাদের নির্ধারিত কার্বন নির্গমন সীমার মধ্যে থাকার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্বন ক্রেডিট লেনদেন করে। যারা নির্গমন কমাতে সক্ষম হয়, তারা উদ্বৃত্ত কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করতে পারে এবং যারা নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি নির্গমন করে, তারা এই ক্রেডিট কিনতে বাধ্য হয়।
কপ-২০ প্রটোকলে কার্বন ট্রেডিং
কপ-২০ (কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ-২০) বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে কার্বন নির্গমন হ্রাস ও কার্বন ট্রেডিং ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে:
- উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নির্গমন কমানোর বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়।
- কার্বন ট্রেডিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্বন ক্রেডিট লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
- উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করা হয়।
এলডিসি দেশসমূহের প্রাপ্য
স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) সমূহ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হয়েও এর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার। কপ-২০ প্রটোকলে এলডিসি দেশগুলোর জন্য কিছু বিশেষ সুবিধা নির্ধারিত হয়েছে:
অর্থায়ন – জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ।
প্রযুক্তি সহায়তা – নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির স্থানান্তর।
ধারাবাহিক উন্নয়ন পরিকল্পনা – কার্বন নির্গমন হ্রাসের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ।
বন বনানী সংরক্ষণ ও খাদ্যের জন্য প্রয়োজন
বন সংরক্ষণের গুরুত্ব
বন আমাদের খাদ্য, পানি, কাঠ, ওষুধি গাছসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ সরবরাহ করে। এছাড়া, বন কার্বন শোষণ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস করে।
বন ধ্বংস ও খাদ্য সংকট
যখন বনভূমি ধ্বংস হয়, তখন এর ফলে:
মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে কৃষির জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায় এবং খাদ্য চক্র ব্যাহত হয়।
স্থানীয় জনগোষ্ঠী খাদ্য সংকটে পড়ে, বিশেষ করে যারা বনভিত্তিক খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল।
খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বন সংরক্ষণ
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
বৃক্ষরোপণ ও পুনঃবনায়ন – ধ্বংস হওয়া বনভূমি পুনরুদ্ধার করা।
টেকসই কৃষি চর্চা – বনভিত্তিক কৃষি উন্নয়ন করা।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি – বন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা।
উপসংহার
কপ-২০ প্রটোকলের মাধ্যমে কার্বন ট্রেডিং ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সুরক্ষার জন্য একটি কার্যকর উদ্যোগ। এলডিসি দেশসমূহের জন্য এই ব্যবস্থার সুযোগ ও সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কার্বন ট্রেডিং এবং বন সংরক্ষণের সমন্বিত প্রয়োগ অপরিহার্য।
লেখক:ঃডেপুটি চিফ ভেটেরিনারিয়ান, ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এবং সভাপতি (২০২৩-২৪), রোটারি ক্লাব অফ রাজশাহী সেন্ট্রাল; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি (বিএলএস), যুগ্ম নির্বাহী সম্পাদক (বাংলাদেশ লাইভস্টক জার্নাল; ISSN 2409-7691), সভাপতি, বিবিসিএফ, রাজশাহী এবং সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), রাজশাহী ।