প্রাণী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা: বিশ্ব প্রাণী চিকিৎসক দিবস ২০২৫ এর গুরুত্ব

Category: গবেষণা ফিচার Written by Shafiul Azam

রোটারিয়ান ডা. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি (BLS)

ভূমিকা:

প্রাণী স্বাস্থ্য রক্ষা শুধু একজন প্রাণী চিকিৎসকের একক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সম্মিলিত প্রক্রিয়া—যেখানে চিকিৎসক, প্রযুক্তিবিদ, গবেষক, প্রশাসন, এনজিও, কৃষক ও ভোক্তাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ একযোগে কাজ করে। ২০২৫ সালের বিশ্ব ভেটেরিনারি চিকিৎসক দিবসের থিম "Animal Health Takes a Team" এই দলগত প্রয়াসের গুরুত্বকেই সামনে নিয়ে এসেছে।

বিশ্ব ভেটেরিনারি চিকিৎসক সংস্থা (WVA) এর এই বার্তাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় একসাথে কাজ করাটাই সময়ের দাবি। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে কীভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রাণীস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই দলের অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকা এবং WVA-এর উদ্যোগ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট।

১. দলগত প্রচেষ্টা: প্রাণীস্বাস্থ্য সুরক্ষার মূল চাবিকাঠি

কেন "টিম" গুরুত্বপূর্ণ?
প্রাণীস্বাস্থ্য একটি জটিল ও বহুমাত্রিক বিষয়। এখানে প্রয়োজন:

একজন ভেটেরিনারিয়ান একা এসব দায়িত্ব পালন করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ:

বাংলাদেশের উদাহরণ:

২. বাংলাদেশে প্রাণীস্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা

(ক) সরকারি প্রতিষ্ঠান:

(খ) বেসরকারি খাত ও এনজিও:

(গ) কৃষক ও ভোক্তা:

 ৩. বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট: ওয়ান হেল্থ ধারণা

"ওয়ান হেল্থ" একটি সমন্বিত ধারণা, যেখানে মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্যকে একে অপরের সাথে যুক্ত মনে করা হয়।

 ৪. বিশ্ব প্রাণী চিকিৎসক দিবস ২০২৫-এর কর্মসূচি

"প্রাণী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা " থিমের আলোকে বিশ্ব ভেটেরিনারি চিকিৎসক দিবস ২০২৫ পালন করতে সকল স্তরের স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করতে হবে। ভেটেরিনারি পেশাজীবী, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পশুপালক সমিতি ও গণমাধ্যমের সমন্বয়ে নিম্নলিখিত কর্মসূচি জোরদার করা প্রয়োজন:

ক. সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন:

খ. মিডিয়া সম্পৃক্ততা:

গ. নীতিগত সমর্থন আদায়:

ঘ. WVA নিম্নলিখিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে:

ঙ. বিশ্ব পশু চিকিৎসক দিবস ২০২৫ উদযাপনে বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির যৌথ উদ্যোগঃ

 বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি (বিএলএস) বিশ্ব ভেটেরিনারি চিকিৎসক দিবস ২০২৫ উপলক্ষে অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বিতভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেঃ

এসব আয়োজনের মাধ্যমে বিএলএস প্রাণীস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

চ. বিশ্ব ভেটেরিনারি চিকিৎসক দিবস ২০২৫ উদযাপনে জাতীয় পর্যায়ের সংস্থাসমূহের  উদ্যোগঃ

বিশ্ব ভেটেরিনারি চিকিৎসক দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ভেটেরিনারি সংস্থাগুলো নিম্নলিখিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে:  বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল (বিভিসি) ও বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন (বিভিএ) যৌথভাবে পেশাগত নীতিমালা ও মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক জাতীয় সেমিনার ও ভেটেরিনারি শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ অলিম্পিয়াড আয়োজন।  দ্য ভেট এক্সিকিউটিভ তরুণ ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেশন ও র‌্যালির আয়োজন।  এ বছরই হোক প্রাণীস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকারের সূচনা, যেখানে প্রতিটি স্তরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে গড়ে তুলব একটি রোগমুক্ত, উৎপাদনশীল প্রাণিসম্পদ খাত।

৫. অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর থ্রি জিরো তত্ত্ব ও প্রাণীস্বাস্থ্যে টিমওয়ার্ক

থ্রি জিরো তত্ত্ব: শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, শূন্য কার্বন নিঃসরণ—এই লক্ষ্য অর্জনে প্রাণীস্বাস্থ্য টিমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

 ৬. উপসংহার: সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সাফল্যের মূলমন্ত্র

প্রাণী স্বাস্থ্য রক্ষা শুধু চিকিৎসকের দায়িত্ব নয়—এটি আমাদের সকলের সম্মিলিত সামাজিক দায়িত্ব। সরকারের নীতিনির্ধারণ, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ, গবেষণার সমন্বয়, কৃষকের অংশগ্রহণ এবং জনগণের সচেতনতাই প্রাণীস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভিত্তি।

২০২৫ সালের বিশ্ব ভেটেরিনারি চিকিৎসক দিবস আমাদের এই বার্তাই দেয়:
“একাই নয়, সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই আমরা প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করব।”

প্রাণী স্বাস্থ্য মানেই মানুষের স্বাস্থ্য—এবং তা রক্ষায় আমাদের হতে হবে এক টিম।