কৃষিবিদ ডা. শাহাদাত হোসেন পারভেজ: আজ বিশ্ব খাদ্য দিবস। খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার, কিন্তু এর নিশ্চয়তা শুধু উন্নয়নের প্রশ্ন নয় এটি মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এ বছরের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ঘোষণা করেছে “Water is life, water is food – leave no one behind.” কারণ পানি ছাড়া খাদ্য নেই, আর খাদ্য ছাড়া টেকসই মানবসভ্যতার অস্তিত্ব অসম্ভব।
কৃষিবিদ ও ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি
নিরাপদ খাদ্য বলতে অনেকের কাছে শুধু ধান বা গম বোঝালেও প্রকৃত অর্থে খাদ্য নিরাপত্তার মূল স্তম্ভ পাঁচটি কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, পানি ও পরিবেশ। পুষ্টি চাহিদা পূরণে দুধ, ডিম, মাংস ও মাছ অপরিহার্য। তাই শুধু শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি নয়, পশুপালন ও মৎস্য খাতকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। খাদ্য চেইনে কৃষক, খামারি ও মৎস্যজীবীর অবদান রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পেতে হবে।
উন্নয়নকর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি
এই উপমহাদেশে টেকসই খাদ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলে চরাঞ্চল, উপকূলীয় অঞ্চল, খরা-প্রবণ এলাকা ও হাওর-বাঁওড় অঞ্চলের কৃষি ও খামার অর্থনীতিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষিতে নারীর অবদান ৫৩% এবং বেকার যুবকদের বড় অংশ যদি কৃষি ও খামারভিত্তিক উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠে তাহলে খাদ্য অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটবে।
- কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ হলো পানি সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তন। বন্যা, লবণাক্ততা, নদীভাঙন, খরা ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া আগামী দিনের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই আমাদের এখনই বৈজ্ঞানিক ও বিকল্প কৃষি কৌশল গ্রহণ করতে হবে
- পানি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক সেচ প্রযুক্তি
- জলাধার ও পুকুর পুনর্খনন
- বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ
- জলজ সম্পদ ও দেশি মাছ রক্ষা
- টেকসই পশুপালন
- নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি
খাদ্য নিরাপত্তা শুধু নীতি নয় এটি মানুষের নাগরিক অধিকার। তাই রাষ্ট্রকে কৃষকের ন্যায্য মূল্য, উৎপাদন খরচ নির্ধারণ, ভর্তুকি ও প্রণোদনা, বাজার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মাঠের কৃষকই দেশের মেরুদণ্ড এ সত্যকে নীতিনির্ধারণে প্রতিফলিত করতে হবে।
-লেখক:সাধারন সম্পাদক, এগ্রিকালচারিস্টস’ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এ্যাব ঢাকা জেলা চ্যাপ্টার।। সাংগঠনিক সম্পাদক, ভেটেরিনারি ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ভ্যাব।