ফিশ ফিডের মান, বৃদ্ধি ও খরচ সাশ্রয়ে ইমালসিফায়ারের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব তুলে ধরলেন পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির

Category: গবেষণা ফিচার Written by Shafiul Azam

এগ্রিলাইফ প্রতিবেদক: অ্যাকোয়া নিউট্রিশনে ফিডের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ইমালসিফায়ার একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত সমাধান এমনটাই জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির। তিনি বলেন, লিপিড, ফ্যাট, প্রোটিন, স্টার্চ ও কার্বোহাইড্রেটকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে ইমালসিফায়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা সরাসরি মাছ ও চিংড়ির বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য এবং খামারির লাভের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

পুষ্টিবিদ সাইফি নাসিরের মতে, অ্যাকোয়া ফিড পুষ্টিতে ইমালসিফায়ার এমন একটি উপাদান যা তেল ও পানিকে একসাথে মিশতে সাহায্য করে। এর ফলে মাছ ও চিংড়ি সহজে চর্বিযুক্ত পুষ্টি শোষণ করতে পারে, হজমশক্তি বাড়ে এবং সামগ্রিক বৃদ্ধি উন্নত হয়। বিশেষ করে ছোট মাছ ও অপরিণত জলজ প্রাণীর ক্ষেত্রে ইমালসিফায়ারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইমালসিফায়ারের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির বলেন, এর কার্যকারিতা মূলত হাইড্রোফিলিক-লিপোফিলিক ব্যালেন্স (HLB) মানের ওপর নির্ভর করে। এই মানের মাধ্যমে বোঝা যায় ইমালসিফায়ার পানি ও তেলের সঙ্গে কীভাবে কাজ করবে, যা ফিডের ভেজানো ক্ষমতা, স্থায়িত্ব ও পুষ্টি শোষণে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

চর্বি শোষণ বৃদ্ধির বিষয়ে পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির জানান, ইমালসিফায়ার মাছের হজমতন্ত্রে চর্বিকে ক্ষুদ্র কণায় (micelles) ভেঙে দেয়। এতে চর্বি সহজে হজম ও শোষণযোগ্য হয়, শক্তি ঘনত্ব বাড়ে এবং ফিডের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।

ফিডের গুণগত মান উন্নয়নে ইমালসিফায়ারের অবদান প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির বলেন, এটি ফিড পিলেট বা দানার গঠন মজবুত করে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও স্থিতিশীল করে তোলে। বিশেষ করে এক্সট্রুডেড অ্যাকোয়া ফিডে ইমালসিফায়ার পেটেন্ট ফর্মুলেশনের মতো কাজ করে, যা ফিডের স্থায়িত্ব বাড়ায়।

অন্ত্রের স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির উল্লেখ করেন, ইমালসিফায়ার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা গঠন ত্বরান্বিত করে এবং ভিলি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এর ফলে পুষ্টি শোষণ বাড়ে, রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় এবং মাছের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়।

আধুনিক অ্যাকোয়া পুষ্টি বিজ্ঞানে ইমালসিফায়ারের ভূমিকা আরও বিস্তৃত হয়েছে বলে জানান পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির। তিনি বলেন, আগে ইমালসিফায়ার শুধু লিপিড ও ফ্যাট নিয়ে কাজ করলেও এখন এটি প্রোটিন, স্টার্চ ও কার্বোহাইড্রেটের ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যা ফিশ ফিড নিউট্রিশনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

প্রোটিন স্পেয়ারিং ইফেক্টের বিষয়ে পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির বলেন, ফিডে ইমালসিফায়ার যুক্ত করলে লিপিড হজম ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে শক্তির জন্য প্রোটিনের ব্যবহার কমে যায় এবং ব্যয়বহুল প্রোটিনের খরচ সাশ্রয় সম্ভব হয় যা খামারিদের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক সুবিধা।

গবেষণালব্ধ ফলাফল তুলে ধরে পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির জানান, অ্যাকোয়া ফিডে ইমালসিফায়ার ব্যবহারে চর্বির মাত্রা যাই হোক না কেন, মাছের বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। পাশাপাশি খাদ্য গ্রহণ, এফসিআর (FCR) ও প্রোটিন দক্ষতা অনুপাত উন্নত হয়, যা সরাসরি উৎপাদন খরচ কমাতে সহায়ক।

রক্ত সঞ্চালন, ইমিউন সিস্টেম ও মাছের গুণগত মান নিয়েও ইতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির। তাঁর মতে, ইমালসিফায়ার ব্যবহারে মাছের অ্যান্টি-অক্সিডেটিভ ক্ষমতা বাড়ে, ফিলেটের ফলন ও এনজাইমের কার্যকারিতা উন্নত হয় যা বাজারমূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

পরিশেষে পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির বলেন, অ্যাকোয়া ফিডে ইমালসিফায়ার ব্যবহার মানেই উন্নত পুষ্টির হজমযোগ্যতা ও শোষণ, কম ফিড খরচ, উন্নত অন্ত্রের গঠন এবং স্থিতিশীল ফিড ফর্মুলেশন। তাই আধুনিক ও টেকসই অ্যাকোয়া উৎপাদনের জন্য ইমালসিফায়ার মৎস্য খামারিদের জন্য একটি সত্যিকারের লাভজনক সমাধান।