আলু চাষে সার এবং সেচ ব্যবস্থাপনা

সমীরণ বিশ্বাসঃ আলু চাষের উপযুক্ত সময় কার্তিক- অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল। হালকা বেলে-দোয়াশ মাটি আলু চাষের জন্য উপযুক্ত। ভালো জাত ও বীজ আলু চাষের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আলু চাষ করার উপযুক্ত সময় এখনি । আলুর এক বিঘা জমিতে অর্থাৎ ৩৩ শতক জমিতে কখন, কি পরিমানে, সার প্রয়োগ করলে, আলুর কলন বেশি পাওয়া যায় ? অর্থাৎ আলুর জমিতে কখন কি সার কতটুকু প্রয়োগ করা দরকার, উচ্চ ফলন পেতে হলে কি করনিয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা আজকের লেখার মূল বিষয়বস্তু।

তাহলে দেখে ও পড়ে নিন আজকের লেখার মূল বিষয়বস্তু। আলুর ভালো ফলন পেতে হলে, অবশ্যই সঠিক সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ না করলে ভালো ফলন পাবেন না। এছাড়া সময়মতো সেচ দেওয়া, বেশি ফলন পাওয়ার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আলুর জমিতে সাধারণত দুই থেকে তিন ধাপে সার প্রয়োগ করা হয়।

প্রথম ধাপে : আলু রোপণের আগে, জমি চাষের সময় মাটির সাথে সারগুলো মিশাতে হয়। তারপর আলু রোপণ করতে হয়।

দ্বিতীয় ধাপে : আলু রোপনের ২৪ থেকে ২৫ দিনের সময় অর্থাৎ আলুর গাছ যখন মাটি দিয়ে পুনরায় বেঁধে (কেইল) দেওয়া হয়, তখন দেয়া হয়। এই দুইটি ধাপে, কখন কি পরিমান সার দেওয়া প্রয়োজন তা হল নিম্নরূপ।

যে সমস্ত কৃষক ভাইয়েরা বাণিজ্যিকভাবে ডায়মন্ড এবং কার্ডিনাল জাতের আলু চাষ করে থাকেন, তাদের জন্য আলু রোপনের আগে, চাষের সময় মাটির সাথে যে পরিমাণ সার মিশাতে হবে তাহা তুলে ধরা হলো । আলু চাষে প্রতি বিঘা ( ৩৩ শতক) জমির জন্য ইউরিয়া ২৫ কেজি, পটাশ ৭৫ কেজি, টি এস পি ৭৫ কেজি, জিপসাম ৩০ কেজি, দস্তা ১ কেজি, এবং বোরন ১ কেজি, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ৮ থেকে ১০ কেজি। এছাড়া মাটির পোকামাকড় এবং রোগ জীবাণু ধ্বংসের জন্য তরল কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। এ সবগুলো সার একত্রে মিশিয়ে জমিতে ছিটাতে পারেন।

আলু রোপনের পর সাধারণত মাটির জোর অনুযায়ী দুটি সেচর পর আলু গাছ মাটি দিয়ে বেঁধে দিতে হয়। অর্থাৎ আলু রোপনের ২৪ থেকে ২৫ দিনের ভেতর আলু গাছের দুই পাশের মাটি কেটে, আগাছা পরিষ্কার করে, আলুর জমিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের যে পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে, তাহা হলো: আলু চাষে প্রতি বিঘা ( ৩৩ শতক) জমির জন্য ইউরিয়া ২৫ কেজি, পটাশ ২৫ কেজি, টি এস পি ২৫ কেজি, থিউভিট ১ কেজি, বোরন ১ কেজি, এবং দস্তা ১ কেজি। এর সাথে তরল কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

এ সবগুলো সার একত্রে মিশিয়ে জমিতে ছিটাতে পারেন। সার ছিটানোর পর দুই পাশের মাটি দিয়ে আলু গাছকে বেঁধে (কেইল) দিতো হবে। আলু গাছকে মাটি দিয়ে বেঁধে দেওয়ার কাজটি নির্দিষ্ট মাপের কোদাল দিয়ে করা হয়। এ সময় একটি বিষয় খুব সতর্কতার সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আলু গাছকে মাটি দিয়ে বেঁধে দেওয়া শেষ হলে, আলু খেতে দ্রুত সেচ দিতে হবে।

চাষী ভাইদের মনে রাখতে হবে, আলুর ভালো ফলন পেতে হলে, সময় মতো সেচ দেওয়া খুবই জরুরী। আলু ফসলের রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা পরবর্তী লেখায় প্রকাশ করার আশা রাখছি। আজ এ পর্যন্ত ! সবাই ভালো থাকবেন।

লেখক: কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ