সমীরণ বিশ্বাস:চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ৪.৯৭ শতাংশ । আগামী অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের শতকরা ৪.৬৪ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের টাকার অংক বাড়লেও খাতয়ারি বরাদ্দের হিসাবে কৃষিখাতের বরাদ্দ শতকরা দশমিক ৩৩ ভাগ কমেছে।
নতুন অর্থবছরে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানো হলেও কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের আওতায় দুই কোটি কৃষককে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। সকল কৃষকদের স্মার্ট কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বাজেটে। এছাড়া হাওর এলাকার কৃষকদের জন্য ৭০ ভাগ এবং অন্য এলাকার কৃষকদের জন্য ৫০ ভাগ সহায়তা দিয়ে ৫১ হাজার ৩০০ টি কৃষি যন্ত্র সরবরাহ করার বরাদ্দ ধরা হয়েছে বাজেটে। বাজেট প্রস্তাবনায় সকল প্রকার কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে কাজুবাদাম উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানা গড়ে তোলা হবে । সার বীজ কীটনাশক সহ কৃষি উপকরণ আমদানিতে শুল্কহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে- বাড়াতে হবে উৎপাদন। এ লক্ষ্যে সুলভ মূল্যে সার, কীটনাশক সরবরাহ, নুতন জাত উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করণে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে এ খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
বাজেট ঘোষণার পরপরই চড়া নিত্যপণ্যের বাজার ! সবজি, মাছ ,মাংস, ডিম, চাল-ডাল সহ দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের ! সার্বিকভাবে বাজেটে দেখা যাচ্ছে; কৃষি খাতে বাজেট খুবই নিম্নমানের ! যে দেশের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষির সাথে জড়িত, সে দেশে কৃষির উপরে বরাদ্দ এত নিম্নমানের কল্পনা করা যায় না। যদি কৃষিতে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব না হয় তাহলে দেশে খাদ্য দুর্ভিক্ষ দেখা এবার মত ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থাৎ কৃষিতে তেমন কোন বরাদ্দ ধরা হয়নি ! কৃষকের অবস্থা খুবই করুন ! দিন দিন আরো খারাপ থেকে খারাপ হয়ে যাচ্ছে ! কারণ কৃষি ক্ষেত্রের যে ব্যয়গুলি বাড়ছে তাহলো ; ওষুধ ,সার, কীটনাশক এগুলির অনেক টাকা দাম বেড়ে গিয়েছে। আগে ৫০০ টাকার ওষুধ কিনলে হয়ে যেত। এখন দেখা যায় ৫০০ টাকার ওষুধ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা হয়ে গেছে। যে লেবার ৩০০ টাকা পাওয়া যেত, এখন তা ৫০০ টাকাতেও পাওয়া যায় না।
কৃষক এখন শুরু থেকে শেষ ফসল কাঁটা পর্যন্ত হিসাব করে দেখে, কৃষকের লস হয়ে যাচ্ছে । এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকার এবারও কৃষি খাতে বাজেট বাড়ায়নি। যদি সরকার কৃষিকাকে এই বাজেট বৃদ্ধি না করে, তাহলে কৃষকের দুরবস্থা থেকেই যাবে এবং কৃষকের আর্থিক অবস্থা আরো করুন থেকে করুণতম হবে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষকরা চরমভাবে বঞ্চিত হবে। এখনো সময় আছে কৃষিতে বরাদ্দ বাড়িয়ে দিন, না হলে কৃষক চাষাবাদ বাদ দিয়ে অন্য উপায় খোঁজার জন্য উঠে পড়ে লেগে যাবে।
কৃষকদের এখন একটাই দাবি ? সরকার কৃষি খাতের বরাদ্দ যেন সন্তোষজনকভাবে বাড়িয়ে দেয়। তাহলে কৃষক এবং কৃষকের স্বার্থ টিকে থাকবে। তাহলেই কৃষিবান্ধব সরকারের, সত্তিকারের প্রতিফলন ঘটবে বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ।
লেখক: কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ , ঢাকা।