প্রফেসর ড. মোঃ সামিউল আহসান তালুকদার তুষার: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের একজন দূরদর্শী নেতা, ১৯৭৭ সালে সৌদি আরবে একটি অসাধারণ অবদান রেখেছিলেন, যা আজ দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছর পরেও দেশটির পরিবেশগত ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গভীর প্রভাব ফেলছে। তৎকালীন সৌদি বাদশা ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজের আমন্ত্রণে রিয়াদে গিয়েছিলেন তিনি। অন্য রাষ্ট্রনেতাদের মতো মূল্যবান উপহারের পরিবর্তে জিয়াউর রহমান নিয়ে গিয়েছিলেন নিমের চারা। এই সাধারণ উপহারটি সৌদি বাদশার কাছে এতটাই মূল্যবান হয়ে ওঠে যে, তা এক অপরূপ "ঐশ্বর্য" এ পরিণত হয়েছে।
নিমগাছ মরুভূমিতে শীতল ছায়া ছড়ানোর পাশাপাশি কম পানিতে টিকে থাকতে সক্ষম এবং এদের পাতায় প্রচুর পানি ধরে রাখে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিমগাছ তার ঔষধি গুণাগুণ এবং পরিবেশগত সুবিধার জন্য পরিচিত। যদিও নিমগাছ নদীমাতৃক অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, এটি উষ্ণ এবং শুষ্ক অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত, কারণ এতে খুব কম পানির প্রয়োজন হয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই প্রথম সৌদিদের এই পরামর্শ দান করেছিলেন, যার জন্য তারা প্রেসিডেন্ট জিয়ার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
সৌদি আরবের জনগণ তথা সারা বিশ্বের হজ পালনকারী লাখ লাখ হাজি প্রতি বছর শ্রদ্ধাভরে শহীদ জিয়াকে স্মরণ করেন। পরবর্তীতে সৌদি সরকার দ্রুতই উপলব্ধি করেছিলেন যে নিমগাছ মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশে আদর্শ। এবছর হজ্জ পালন করতে এসে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায় সৌদি সরকার নিজ উদ্যোগে জেদ্দা শহর, মিকাদ মসজিদসহ সারাদেশে নিম গাছ রোপনের কাজ চালু রেখেছেন। এই নিমগাছগুলো সৌদি আরবে "জিয়া শাজারা" (শাজারা অর্থ গাছ) এবং ইংরেজিতে "জিয়া ট্রি" নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
ইসলামে আরাফাতের ময়দানের গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলন এবং তাদের ক্ষমা প্রাপ্তির স্থান হিসেবে পবিত্র আরাফাত ময়দানের এই জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড় পরিচিত। এছাড়াও, এই পাহাড়েই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন এবং পবিত্র কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ আয়াত নাজিল হয়েছিল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এই উদ্যোগ ছিল সেই ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে হাজিদের কষ্ট লাঘবের একটি দূরদর্শী চিন্তা। শহীদ জিয়ার এই কাজটি একটি 'সদকায়ে জারিয়া' (চলমান দান) হিসেবে বিবেচিত। যতদিন এই নিমগাছগুলো মানুষের কল্যাণে ছায়া ও শীতলতা প্রদান করবে, ততদিন তিনি এর সওয়াব পেতে থাকবেন। এটি একজন রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার এক অনন্য সৌভাগ্য, যা খুব কম মানুষের ভাগ্যে জোটে।
১৯৭৭ সালে তৎকালীন বাদশা খালিদ বিন আব্দুল আজিজকে উপহার দেওয়ার সময় জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, "গরিব মানুষের পক্ষ থেকে আপনার জন্য এ সামান্য উপহার।" সেই সাধারণ উপহারই আজ সৌদি আরবের মরুর বুকে সবুজের এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে, যা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সৌদি আরব তথা মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকীতে জিলহজ মাসে পবিত্র ভূমি মক্কা থেকে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
লেখক: পরিচালক, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।