কে এস রহমান শফি, টাঙ্গাইলঃ গোপালপুরে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১০ একর জমি ইটভাটার জন্য বরাদ্দ করে। সাত দশক আগে ইটভাটাটি বন্ধ হওয়ায় স্থানীয়রা জমিটি অবৈধভাবে দখলে রাখে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তা উদ্ধার করা হয়। সেই জমিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। ফলন ভাল হওয়ায় ১০ টন ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। ফুল থেকে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এই সূর্যমুখী ফুল টাঙ্গাইলের প্রতিটি উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত বিনামূল্যে ছড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৭০ বছর আগে গোপালপুর পৌরসভার ভুয়ারপাড়া এলাকায় ইটভাটাটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে জমিটি পরিত্যক্ত থাকায় স্থানীয়রা ওই জমিতে ফসল না ফলিয়ে বিভিন্নভাবে দখল করা শুরু করে। কেউ কেউ ওই জমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র সরিয়ে ফেলে। পরে সরকারের উদ্যোগে জমিটি ১ নং খাস খতিয়ানে আনা হয়। সম্প্রতি ওই ১০ একর জমির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে’ সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সেখানে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের নির্দেশনায় ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২৩০ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে ১২ টি উপজেলায় সূর্যমুখী চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে ২৪২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। উৎপাদনের সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬৪ মেট্রিক টন।
সরেজমিন সোমবার গিয়ে দেখা যায়, অবৈধ দখলে থাকা উদ্ধারকৃত জমি বাঁশ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে সূর্যমুখী চাষে সবুজের সমারোহ। ইতিমধ্যে ফুল ফোঁটায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তা দেখতে আসছে। শ্রমিকরা পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।
টাঙ্গাইল শহরের কাগমারা এলাকা থেকে আসা মামুনুর রহমান বলেন, গোপালপুরে বিশেষ একটি কাজে এসেছিলাম। সূর্যমুখী বাগানের কথা শুনে তা দেখার কৌতুহল সৃষ্টি হয়। এই বাগানটি দেখে আমার খুব ভাল লাগছে।
বাগানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আব্বাস আলী বলেন, আগে আমি শ্রমিকের কাজ করতাম। একদিন কাজ করলে আরেক দিন বসে থাকতে হতো। এখানে আমার নিয়মিত কাজ করতে হয়। এতে আমার সংসার খুব ভাল চলে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, কৃষিমন্ত্রী তেল বীজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সূর্যমুখীতে তেলও বেশি পাওয়া এবং এর উপকারীতাও বেশি। এই তেল স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করে। ক্যান্সার এবং হৃদরোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ত্বকের স্বাস্থ্য বাড়ানোর কাজেও অনেক উপকারী। তিনি আরও বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার দেয়া হয়েছে। ১০ একর জমিতে ৪০ কেজি সূর্যমুখী বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে যারা শ্রমিকের কাজ করছে তাদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া সুর্যমুখী চাষের জন্য অনেক উপকারী। দুই হাজার টাকা কেজি বীজ কিনে রোপন করেছিলাম। আমরা আশা করছি এখান থেকে প্রায় ১০ টন সুর্যমুখী উৎপাদন হবে। এক মন বীজ থেকে ১৭ থেকে ২০ কেজি তেল হয়। প্রতি কেজি সূর্যমুখী তেলের দাম এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। সুর্যমুখীর উপকারীতা ও সয়াবিনের অপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করতে পারলেই সুর্যমুখী চাষ আরও বাড়বে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ মল্লিক বলেন, আমরা মনে করি সারাদেশে এটি সর্ববৃহৎ সূর্যমুখীর প্রকল্প। সূর্যমুখী উঠানোর পরে উদ্ধারকৃত জমিতে সয়াবিনের চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রকল্প দেখে অনেক মানুষ উৎসাহ পাবে। এতে করে আমাদের যে ৮০ শতাংশ ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয়, সূর্যমুখী চাষ করলে আমাদের আমদানী নির্ভরতা অনেকটাই কমে আসবে। খরচের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় এখান থেকে সহজেই লাভবান হওয়া সম্ভব।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, অবৈধ দখলে থাকা ১০ একর জমি উদ্ধার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে’ সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। বাগান থেকে যে পরিমাণ সুর্যমুখীর বীজ উৎপাদন হবে তা টাঙ্গাইলের ১২ টি উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিনামূল্যে ছড়িয়ে দেয়া হবে।