বিশেষ প্রতিবেদক:মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখা নিরাপদ খাবার উৎপাদনের মাধ্যমে সুস্থ মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে দেশে-বিদেশের পোল্ট্রি বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদনের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীর মানুষের জন্য প্রাণিজ প্রোটিন উৎপাদনে পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত বিজ্ঞানী গবেষকগণ সবসময়ই তৎপর। ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এ স্বপ্ন সফল করতে হলে আমাদেরকে সুস্থ, সবল ও মেধাবী হতে পাবে। আর এটির জন্য প্রয়োজন পুষ্টিসম্পন্ন খাবার যা পোল্ট্রি শিল্প যোগান দিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউ.ভি.পি.এ), বাংলাদেশ শাখা আয়োজিত দু’দিনব্যাপী পঞ্চম ডব্লিউ.ভি.পি.এ এশিয়া মিটিং-২০২২ চলাকালীন সময়ে এগ্রিলাইফের সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব বিষয় তুলে ধরেন এসিআই এনিমেল হেলথ-এর চিফ টেকনিক্যাল এডভাইজার ডা. এম এ ছালেক।
আমরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হতে চাই উল্লেখ করে ডা. ছালেক বলেন, পোল্ট্রি শিল্প এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ শিল্পের কাঙ্খিত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে বেসরকারি উদ্যোক্তা, শিক্ষক, গবেষক এবং সরকার একযোগে কাজ করছে। পোল্ট্রি উন্নয়নকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা WVPA একটি বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা অ্যাসোসিয়েশন যা পোল্ট্রির সাম্প্রতিক সময়ের চ্যালেঞ্জগুলি বিশেষ করে রোগ-বালাই সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এখানে দেশ-বিদেশের পোল্ট্রি বিজ্ঞানীরা গুরুত্পূর্ণ পেপার উপস্থাপন করেছেন।
তিনি আরো বলেন, WVPA মিটিং থেকে থেকে অর্জিত সুপারিশগুলিকে কাজে লাগিয়ে দেশের পোল্ট্রি শিল্পকে ব্যাপক সমৃদ্ধ করার যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পোল্ট্রির রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা গবেষণালব্ধ তথ্য দ্বারা দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীরা এখানে উপস্থাপন করেছেন। দেশের বাহির থেকে পোল্ট্রি বিজ্ঞানীরা এখানে এসেছিলেন যারা গ্লোবাল ও রিজিওনাল পরিস্থিতি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিফল। সেসব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই তারা এখানে পোল্ট্রির বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন যোগ করেন ডা. ছালেক।
ডা. ছালেক বলেন, আমাদের এ সুযোগগুলিকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশাপাশি আমাদের দেশের খ্যাতনামা পোল্ট্রি বিজ্ঞানীগণ পোল্টির সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলি তুলে ধরেছেন এবং তাদের গবেষণালব্ধ পেপারে তাদের সুপারিশমালাও প্রদান করেছেন। বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পের গ্রোথ যেভাবে বৃদ্ধি হয়েছে পাশাপাশি রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি সমান্তরালে বাড়ছে। এসব ঝুঁকিগুলি কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়গুলির সমাধান মিলেছে এ সম্মেলনে। ডিম উৎপাদনে এখন আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ মাংস আমরা অনেক দূরে গিয়েছি ভবিষ্যতে এর চাহিদা আরো বাড়বে সেজন্য আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। সার্বিক দিক দিয়ে বিবেচনায় উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সুস্থ সবল পোল্ট্রি ফ্লক তৈরি করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন টেকসই রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনা যার মাধ্যমে কস্ট ইফেকটিভনেস ধরে রাখা যায়।
এখানে অংশগ্রহণকারী ৩০০ এর অধিক পার্টিসিপেন্ট সরাসরি উপকৃত হয়েছে বলে মনে করেন ডা, এম এ সালেক। এখন তাদের দায়িত্ব হল নিজ নিজ কর্মস্থলে অর্জিত ফলাফলগুলি স্থানীয় পোল্ট্রি এক্সপার্টদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া। এটি এখন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে রোগবালাই দমন ও প্রতিরোধ করে নিরাপদ ডিম ও ব্রয়লার উৎপাদনে সক্ষম হবে দেশের পোল্ট্রি শিল্প। সেইসাথে ভোক্তারাও নিশ্চিন্তে গ্রহণ করতে পারবেন সবচেয়ে সহজলভ্য এ প্রাণিজ প্রোটিন।