রাজধানী প্রতিনিধি: কৃষি গবেষণা ও শিক্ষায় ড. কাজী এম বদরুদ্দোজার অসামান্য অবদান চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। তার অবদানের কারণে দেশে কৃষি গবেষণায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। বর্তমান সরকারের উদারনীতি এবং মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গবেষণায় প্রাইভেট সেক্টর ৩২% গ্লুটেন সম্পন্ন, উচ্চ ফলনশীল গমের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে। ৯৩% ভাগ হাইব্রিড ধানের জাত নিবন্ধন করেছে, ২২.৫% ড্রাই-ম্যাটার সম্পন্ন ইন্ডাসট্রিয়াল আলু নিবন্ধন করেছে, ৪৫ টি সবজির প্রায় ৬০০টিরও অধিক হাইব্রিড নিজস্ব গবেষণা বা আমদানী করে ছাড় করেছে। এছাড়া ৯০% বেশি হাইব্রিড ভুট্টার জাতসহ সূর্যমুখী, বিদেশী ফল, ফুল এবং অন্যান্য ফসল প্রবর্তনে বেসরকারি সেক্টর উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
আজ সোমবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর: কাজী বদরুদ্দোজার অবদান' শীর্ষক বিএজেএফ জাতীয় কৃষি সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এসিআই এগ্রিবিজনেসেস-এর প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এমপি।
ড. আনসারী বলেন, বেসরকারী খাতের তত্ত্বাবধানে একটি ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় ড. কাজী এম বদরুদ্দোজার দূরদর্শী নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, যা সে সময়ে, সমগ্র উন্নয়নশীল বিশ্বে ছিল প্রথম। দেশে আধুনিক জাতের গম উদ্ভাবন ও চাষ শুরু হয় ড. বদরুদ্দোজার হাতে, এমনকি ভূট্টার বাণিজ্যিক আবাদও শুরু হয় তার মাধ্যমে । ভুট্টা থেকে তেল উদ্ভাবন এবং তা পোল্ট্রি শিল্পের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করার ধারণাটিও তারই ছিল। ২০১২ সালে এসব অবদানের জন্য দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার' পান কৃতি এই কৃষি বিজ্ঞানী।
কৃষির এ রুপান্তরের ধারাবাহিকতায় কৃষি গবেষণা অবকাঠামো উন্নয়নে দেশে বেসরকারি পর্যায়ে ফিল্ড ল্যাবরেটরি, মলিকুলার ল্যাবরেটরি, অটোমেশন ইন ডাটা কালেকশন, অৱজিএ ফ্যাসিলিটি, গ্রিনহাইস, জিনব্যাংক স্থাপন সহ আধুনিক রিসার্চ ক্যাপাসিটি ডেভেলোপমেন্ট করা হয়েছে যার মাধ্যমে ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখবে যোগ করেন ড. আনসারী।
কৃষিতে মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর লিডারশীপে ব্যাপক সাফল্য এসেছে উল্লেখ করে ড. আনসারী বলেন আগামী দিনের কৃষির চ্যালেঞ্জ ও রুপান্তরেও তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখবেন। কৃষির সাফল্যের এই ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী দিনের কৃষির রুপান্তর ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় লাগবে আরও প্রাইভেট সেকটরের অংশগ্রহন । প্রয়োজন সরকারের নীতিগত সহায়তা ও উৎসাহ প্রদান। এছাড়া ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের আরও অংশগ্রহন জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, কৃষি গবেষণায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে দেশে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারী কোম্পানীগুলো ইরি, সিমিট, সিআইপি, এভিআরডিসি, সিজিআইএআর সহ পৃথিবী বিখ্যাত বীজ কোম্পানির সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ সহ রিসার্চ ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট করেছে যার মাধ্যমে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হচ্ছে। সরকারি এবং বিদেশি পার্টনারের কোম্পানির সহযোগিতা নিয়ে দেশে প্রাইভেট সেক্টরে ফিল্ড এবং মলিকুলার লেভেলে আর্ন্তজাতিক মানের রিসার্চ ক্যাপাসিটি ডেভেলপ করেছে। সরকার এই ক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টরের স্বক্ষমতা বাড়াতে আরও কার্যকরি ভূমিকা নিলে ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে গতি আসবে বলে মনে করেন ড. আনসারী।
হাইভ্যালু ক্রপস যেমন ড্রাগনফ্রুট, এ্যাভোকাডো, কফি, ক্যাসুনাট, কমলা, ক্যাপসিকাম, অফসিজন তরমুজ সহ ফুল, ফল এবং সবজি ফসলের নতুন নতুন জাত প্রাইভেট সেক্টর দেশে প্রবর্তন করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের উদার নীতির কারনে । জাপান এবং নেদারল্যান্ডে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী স্বয়ং নিজে উপস্থিত থেকে বিদেশি কোম্পানির সাথে সংযুক্ত করতে প্রাইভেট সেক্টরকে উৎসাহিত করেছেন। এসব সংযোগের ফলে দেশে নতুন নতুন জার্মপ্লাজম আসছে উল্লেখ করেন ড. আনসারী।
ড. আনসারী বলেন, ফসল উৎপাদন সবটাই দেশে প্রাইভেট সেক্টর করে থাকে। ফসল উৎপাদন কাজে আধুনিক চাষাবাদ প্রযুক্তির ব্যবহার, উচ্চ ফলনশীল, স্বল্পজীবনকাল সম্পন্ন, রোগ-বালাই সহসশীল ক্লাইমেট স্মার্ট জাতের ব্যবহার, যান্ত্রিকীকরণ, এবং কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকারের নানাবিধ উদ্যোগের ফলে গত এক দশকে বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে যা আমাদের কৃষিকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে কৃষকদেরকে, ডিলার ও সম্প্রসারন কর্মীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করছে, অন্যদিকে কৃষিপণ্য বাজারে সংযোগ করে দিচ্ছে। বর্তমানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, কর্মসংস্থান তৈরির এক অন্যতম মাধ্যম বলেন তিনি।
কৃষি গবেষনায় প্রাইভেট সেকটরকে আরও সম্পৃক্ত ও উৎসাহ প্রদান। সক্ষমতা বাড়াতে প্রনোদনা এবং স্বল্প সুদে ঋণ। ফলে বৈরি জলবায়ু, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে উচ্চফলনশীল, রোগবালাই সহনশীল ও মার্কেটেবল জাত দ্রুত তৈরি করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ড. আনসারী।
নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্প্রসারণে সরকারি ও বেসরকারি কৃষি সম্প্রসারন কর্মী, সাংবাদিক, মিডিয়া, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ডিলার ও কৃষকদের সম্পৃক্ত করা এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মের ব্যাপক ব্যবহারের প্র্রতি জোর দেন তিনি। কৃষি রুপান্তরে কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের বিকল্প নাই তাই এই ক্ষেত্রে আরো জোর দিতে হবে।।
একজন কৃষিবিদ, কৃষি বিজ্ঞানী একজন সফল কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে সারা পৃথিবীর চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আমাদের কৃষি আজ এক অনন্য উদাহারন। ভবিষ্যতেও তার নেতৃত্বে কৃষিতে ব্যাপক রুপান্তর হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।