এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি, কানাডা ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবেই বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক গড়ে উঠে রাজনৈতিক ভাবে যা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি সম্মানের শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে। এ লক্ষে গত ৪ঠা এপ্রিল, ২০১৭ অনুষ্ঠিত আলবার্টা সংসদের ২৯তম বৈকালিক অধিবেশনে বাংলা নববর্ষকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি সর্বসম্মত বিবৃতি গৃহীত হয়। এ ঐতিহাসিক স্বীকৃতির ষষ্ঠ বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ৪ এপ্রিল রাতে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ ঐতিহাসিক স্বীকৃতির ষষ্ঠ বার্ষিকীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করেছে বাংলাদেশ কমিউনিটি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আলবার্টাতে বাংলা সংস্কৃতি ও ভাষার প্রচারে সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং প্রদেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আয়োজনে একজন মুখ্য ব্যক্তিত্ব, বহুসংস্কৃতি এবং বৈচিত্র্যের সোচ্চার উকিল ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া এবং সংলাপকে উন্নীত করার জন্য একজন নিবেদিত সেবক এবং এ স্বীকৃতি আদায়ে অন্যতম সংগঠক কানাডার বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক এর সভাপতি প্রবাসী লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক, স্টেপ টু হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশনের স্পেশাল প্রজেক্ট কমিটির চেয়ারপারসন মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ও অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টার সভাপতি প্রবীণ সমাজকর্মী শাহ সুফী মহ. লস্কর, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক এর সভাপতি ও ইউএনবি স্টাফ রিপোর্টার কবি খায়রুল আহসান মানিক, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা, বিশিষ্ট সমাজ কর্মী ও সংগঠক ,আনামুর রহমান মিয়া, বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় দাবাড়ু এসরার জাহিদ খসরু ও এস. হাসান রাজীব।
মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ বলেন, ২০১৭ সালে আলবার্টা পার্লামেন্টে নিউ ডেমোক্র্যাট ককাসের সহযোগিতায় বাংলা নববর্ষকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করা হয়। গভীর আনন্দ ও শ্রদ্ধায় স্মরণে আসে ডেনিস ওলার্ড এমএলএ সংসদে তা উত্থাপন করেছেন, বিপুল করতালির মাধ্যমে একে স্বাগত জানান আলবার্টার সর্ব্বদলীয় আইন প্রণেতারা। তদানীন্তন স্পিকার রবার্ট ই ওয়ানার বাংলা নববর্ষকে নিয়ে হাউসের গভীর আগ্রহের কথা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেন এবং আলবার্টাবাসিকে তা পালনের আহ্বান জানান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন সে মহান মুক্তিযুদ্ধে ও কানাডা আমাদের পাশ্বে দাঁড়িয়েছে এবং ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
শাহ সুফি মহ. লস্কর বলেন, মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ আলবার্টাতে বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষার প্রচার প্রসারে সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং এ প্রদেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আয়োজনে একজন অন্যতম মুখ্য ব্যক্তি তিনি বহুসংস্কৃতি এবং বৈচিত্র্যের জন্য সোচ্চার সমাজকর্মী এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া এবং সংলাপকে উন্নীত করার জন্য তিনি নিরলস ভাবে কাজ করেছেন এবং আমাদেরকেও অনুপ্রাণিত করছেন।
কবি খায়রুল আহসান মানিক বলেন, কুমিল্লার কৃতি সন্তান কানাডা প্রবাসী প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম যেমন একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে এনেছেন তেমনি মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ ও ২০১৭ সালে আলবার্টা পার্লামেন্টে বাংলা নববর্ষকে স্বীকৃতি আদায়ে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। প্রবাসে এমন ইতিবাচক ও অনুপ্রেণামূলক কাজ বাংলাদেশের মর্যাদাকে সমুন্নত করে একজন সাংবাদিক ও কলমযোদ্ধা হিসেবে এর জন্য আমরা গর্বিত।
আলোচক আনামুর মিয়া ২০১৭ সালের ৪ঠা এপ্রিলের সে অধিবেশনের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন। যে অধিবেশনে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কানাডা ইউনিটের নির্বাহী দেলোয়ার জাহিদ সহ শুরুতে বাংলাদেশ হেরিটেজ অ্যান্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টার সভাপতি মাসুদ ভূঁইয়া, এমজেএমএফ বাংলাদেশ স্পোর্টস ক্লাব অব আলবার্টা, বাংলাদেশ হেরিটেজ মিউজিয়াম সহসভাপতি আনামুর রহমান, এশিয়া নিউজ ও ভিউজের তৎকালীন প্রকাশক সাইফুর হাসান, জুলফিকার আহমেদ, বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব এডমন্টনের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আরিফ খান, ক্যালগেরির এনডিপি নেতা বিনয় দে ও বঙ্গ সোসাইটির তাপস হাওলাদার প্রমুখ নেতাদের হাউসে পরিচয় করিয়ে দিলে তাদের করতালির মাধ্যমে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়।
সভার সভাপতি তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ২০২২ সালে কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি একটি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ গঠিত হয়েছে। এ গ্রুপের বিশিষ্ট সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন মাল্টি-পার্টি গ্রুপটির সভাপতিত্বকারী এমপি ব্র্যাড রেডেকপ সহ-সভাপতি সালমা জাহিদ এমপি ছাড়াও সিনেটর মবিনা জাফর, সালমা আতাউল্লাহজান, সংসদ সদস্য চন্দ্র আর্য, কেন হার্ডি, লুক ডেসিলেটস, কেভিন ওয়া, রবার্ট কিচেন, সমীর জুবেরি প্রমুখ। কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার ডঃ খলিলুর রহমান বাংলাদেশ-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে উন্নীত করতে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং প্রাণবন্ত ইতিবাচক ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করবে। কানাডা সহ প্রবাসী ভাইবোনেরা যা বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় লক্ষ্য অর্জনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।
সভা শেষে কানাডার অটোয়া নিবাসী মাহফুজ হোসেনের স্ত্রী ও এডমন্টন নিবাসী সমাজকর্মী হায়দারজান চৌধুরীর বোন চাদ সুলতানার আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক ও বঙ্গবাজার মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্থ সকলের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে দমকল বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, স্থানীয় ব্যবসায়ী, এলাকার বাসিন্দা এবং বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করে তাদের ত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।