মো: ওবায়দুল ইসলাম: গত কয়েকদিন যাবত ভারত ও বাংলাদেশের উপর দিয়ে মারাত্মক তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। যা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলে ৪০°-৪২° ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই অতিরিক্ত তাপমাত্রা মাছের/ চিংড়ির জন্য বিরাট অশনিসংকেত। কারণ অধিক তাপমাত্রার কারনে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, মাটিতে থাকা ক্ষতিকর গ্যাস সক্রিয় হয়ে পানিতে মিশে যায়, পিএইচ এর পরিমান বেড়ে যায়।
এসব কারনে পুকুরের মাছ/ চিংড়িগুলো প্রথমে শ্বাস কষ্টে ভোগে এবং অক্সিজেন গ্রহন করতে উপরের স্তরের পানিতে আসতে চায় কিন্তু পানি গরম থাকায় উপরে উঠে শ্বাস নিতে পারেনা। ফলে ঠাণ্ডার খোজে মাটির মধ্যে মুখ গুঁজে দেয় এবং সেখানে মাছের/চিংড়ির মৃত্য হতে পারে।
এই গরমে একটু সতর্ক না হলে বড় বিপদ হতে পারে এবং আংশিক বা সমস্ত মাছ/চিংড়ি ভেসেঁ উঠে মারা যেতে পারে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে মাছের/চিংড়ির কি কি ক্ষতি হতে পারে:-
(১) পানিতে অক্সিজেনের অভাব তৈরী করে।
(২) পানিতে এ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমান বেড়ে যায়।
(৩) পানি অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার ফলে ফাইটোপ্লান্কটন ও জুওপ্লান্কটন মারা যায়।
(৪) পানির পিএইস ভারসাম্য হারায়।
(৫) মাছ/চিংড়ি দূর্বল হয়ে পড়বে, চলা ফেরার গতি (চাঞ্চল্যতা) কমে আসে।
(৬) মাছের/চিংড়ির হজম শক্তি লোপ পাবে এবং খাবার গ্রহন কমে যায়
(৭) অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারনে পানিতে জৈব পদার্থ বেড়ে বিভিন্ন পরজীবী ও ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়।
(৮) অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারনে শ্লেষ্মা বেরিয়ে গিয়ে মাছের দেহ খসখসে হয়ে যায়, ফলে মাছগুলো দ্রুত ব্যাক্টেরিয়া ও পরজীবী কর্তৃক আক্রান্ত হয়।
(৯) মাছের দেহে লাল লাল ছোঁপ ছোঁপ দাগ নিয়ে মরে যেতে পারে।
(১০) অনেক ক্ষেত্রে সন্ধ্যা বা ভোর রাতের দিকে অধিক হারে মাছের/চিংড়ির মরক দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে মাছকে বাঁচাতে করণীয়ঃ
(১) তুলনামূলক কম গভীরতার পুকুরে নতুন পানি যোগ করে গভীরতা কমপক্ষে ৫ ফুট করতে হবে যাতে নিচের পানি কিছু ঠান্ডা থাকে এবং মাছ সেখানে থাকতে পারে।
(২) পুকরের দক্ষিণ পাড়ে পানির মধ্যে মাঁচা করে লাউ জাতীয় গাছ লাগিয়ে পুকুরে ছাঁয়ার ব্যবস্হা করা যেতে পারে।
(৩) পুকুরের মোট আয়তনের ১০ শতাংশ জায়গায় চারদিকে বাঁশের ঘেরাও দিয়ে কচুঁরি পানা/ নারকেল গাছের পাতা রাখা যেতে পারে।
(৪) দিনের বেলায় রোদের সময় অর্থাৎ দুপুর ১২ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত গভীর নলকূপ থেকে পানির সরবরাহ করে কমপক্ষে ৫ ফুট বা তার বেশি পানির উচ্চতা বজায় রাখতে হবে ।
(৫) সকাল বেলায় শতকে ২০০- ২৫০ গ্রাম লবন বা ১০০ গ্রাম ভেট স্যালাইন গুলে পুকুরে ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
(৬) রাতের বেলায় এরেটর/ব্লোয়ার/মেশিন চালিয়ে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যাবস্থা করতে হবে অন্যথায় শতকে ১০ গ্রাম হারে অক্সিজেন ট্যাবলেট পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
(৭) পুকুরের পানি স্বাভাবিক ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত পুকুরে খাবার সরবরাহ কমিয়ে দিতে হবে, বা প্রয়োজনে সাময়িক বন্ধ রাখতে হবে। সকালে এবং সন্ধ্যার পর খাবার অল্প করে দিতে হবে।
(৮) ভিটামিন-সি মিশিয়ে (৭-৮ গ্রাম/কেজি খাদ্যে) খাদ্যের সাথে খাওয়াতে হবে তাপমাত্রা স্বভাবিক না হওয়া পর্যন্ত।
(৯) এ সময় দিনের বেলায় মাছ/পোনা স্থানান্তর বন্ধ রাখতে হবে বা অত্যান্ত সতর্কতার সাথে করতে হবে।
তাপদাহে মাছের রেনু/নার্সারী পুকুরের জন্য করণীয়ঃ
* রেনু/পোনা সকালে বা সন্ধ্যা বেলায় ছাড়তে হবে। অর্থাৎ ঠান্ডা পরিবেশে ছাড়তে হবে। ছাড়ার সময় গ্লুকোজ পানিতে কিছুক্ষন রেখে তারপর পুকুরে ছাড়া যেতে পারে।
* রেনুর/ পোনার পুকুরে তুলনামূলক কম পরিমাণ খাবার দিতে হবে। অতিরিক্ত খাবার দেওয়া যাবে না।
* রেনুর/পোনার পুকুরে কচুঁরিপানা/ নারকেল পাতার আশ্রয়স্থল দিতে হবে, যাতে অধিক তাপমাত্রায় থেকে রেনু/ পোনা আশ্রয় নিতে পারে।
* এমতাবস্থায় খাবারের সাথে ভিটামিন-সি খাওয়াতে হবে তাপমাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত।
লেখক: সিনিয়র ম্যানেজার
নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড