এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: চট্টগ্রামে এক নাগরিক পদযাত্রায় এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)কে কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক জ্বালানীতে বিনিয়োগ থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালনিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর নগরীর বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের চত্বরে আয়োজিত নাগরিক পদযাত্রায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নেরে সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, চান্দগাঁও পাবলিক ল্যাবরেটরী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইসমাইল ফারুকী, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রিয় সদস্য মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, ক্যাব যুব গ্রুপের আইন সম্পাদক মিনা আকতার প্রমুখ।
বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্লিন এবং বিডাব্লুজিইডির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক(এআইআইবি) একটি বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক তথা বেইজিং ভিত্তিক আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বহু-পাক্ষিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান। যার লক্ষ্য এশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থাকে উন্নত করা। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রথম তিন বছরের মধ্যে যত অর্থ বিনিয়য়োগ করেছে তার মধ্যে ২০ শতাংশ বিনিয়য়োগই কয়লা এবং এলএনজি ভিত্তিক জ্বালানি প্রকল্প। চট্টগ্রামে এআইআইবি বেশ কয়টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং আরো কিছু পরিকল্পনায় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং দ্রুতগতিতে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য এই কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহারই অন্যতম দায়ি। এআইআইবি ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।
বক্তাগন আরো বলেন, পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০২২ পর্যন্ত ৫১০ মিলিয়ন ডলার শুধু মাত্র জ্বালানি খাতেই বিনিয়োগ করেছে এআইআইবি। এরা শুধু বিনিয়োগ করে না, আমাদেরকে পরামর্শও দিয়ে থাকে । এই পরামর্শ আবার তাদের লাভের স্বার্থেই দেয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এসে বিদ্যুৎ খাতে দুটি প্রকল্পে ২৭৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ৫৮৪ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কম্বাইন্ড-সাইকেল গ্যাস টারবাইন এবং বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য ১৬৫ মিলিয়ন ঋণ অনুমোদন করেছে। যার একটি হলো উচ্চ-ক্ষমতা সম্পন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ক্ষমতর সম্প্রসারণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে দূষণকারী এবং ব্যয়বহুল প্রকল্প।
বক্তারা বলেন, আমাদের দেশ বিভিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালনী প্রকল্পের নামে বিনিয়োগে অব্যহত রেখেছে। এআইআইবি এর জ্বালানি খাতে (গ্যাস ও কয়লা) এই বিনিয়োগের ফলে আমাদের দেশ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত নানামুখি সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। এআইআইবি বার্ষিক সভা উপলক্ষে আমাদের দাবি, আর নয় জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ, সবার জন্য হোক নবায়নযোগ্য জ্বালানি। গ্যাস-কয়লা-তেল ভিত্তিক জ্বালানীতে বিনিয়োগ না-করে, বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।
দারিদ্রকরণের নীতি বর্জন করো, সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলো। এআইআ্ইবি'র বিনিয়োগ আমাদের জীবনকে ধ্বংস করছে, পরনির্ভরশীলতা ও ঋনের দায় বাড়িয়ে তুলছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তোমাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার কর, কার্বন নির্গমন বন্ধে অর্থায়ন কর।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশকে আর ডলার সংকটের দিকে ঠেলে না দেবার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। যেখানে ২০১৩ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিলো ১৩৯ কোটি ডলার, ২০২২ সালে সেটা ২০২২ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ দাড়িয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার।
দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৮২ শতাংশই গ্যাস, কয়লা ও ডিজেল ভিত্তিক এবং এর অধিকাংশই আমদানি নির্ভর। পিডিবি ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুতকেন্দ্রভাড়া দিতে হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে আমদানি করা ৭৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। স্পট মার্কেটে দাম বাড়ায় সেটির আমদানি সীমিত করেছে সরকার। আশংকার বিষয় হলো এ বছরই এলএনজি আমদানিতে সরকারকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।