ড. মু. তোফাজ্জল হোসেন রনি, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা: নিরাপদ-বিষমুক্ত কৃষি পণ্য উৎপাদনে কৃষি-বান্ধব উন্নত জাত-প্রযুক্তির সম্ভারে দেশের খাদ্য উৎপাদনে ভুমিকা রাখবেন বিজ্ঞানীরা যা কৃষি সম্প্রসারণ এর মাধ্যমে কৃষকের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দিতে হবে। উন্নত টেকশই জৈব-বালাই ব্যবস্থাপনায় উদ্ভিদের বালাই দমন, আধুনিক মানসম্পন্ন, গুণগত এবং কাঙ্খিত বৈশিষ্টের উন্নত জাত উদ্ভাবন, উন্নত সেচ, সার, মাটি ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীদের আরো নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন বিভাগের সাথে বিশেষ করে কৃষি সম্প্রসারণ, বিএডিসির সাথে একই যোগসূত্রে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীস্থ আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের স্বাগতিকায় চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বারি উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বিস্তার শীর্ষক গবেষণা-সম্প্রসারণ-কৃষক সন্নিবদ্ধ কর্মশালায় আজ শনিবার ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ইং কৃষি মন্ত্রণালয় অধীনস্থ কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন পেশার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, মানসম্পন্ন বীজ-চারা উৎপাদনের টেকসই জাত-প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা আজ বড় প্রয়োজন যা বিজ্ঞানীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কৃষির এই প্রকট সমস্যা দূরীকরণে বিজ্ঞানীদের গবেষণা আরো জোড়ালো করার জন্য তিনি আহবান জানান। আর এটি তখনই বাস্তবায়ন হবে যদি তা কৃষকের দ্বার প্রান্তে যেতে পারে এবং তা বাস্তবায়নে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের প্রতি তিনি উদাত্ত আহবান জানান।
উদ্বোধনী এবং করিগরি অধিবেশন এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। ড. মুহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন রনি, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার কোরআন তেলাওয়াত এর মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। ড. মো. সামছুর রহমান, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সভাপতিত্ত্বে মো.রাশেদ সরকার ও আনিকা তাবাসসুম বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সঞ্চালনায় এই কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ড. ফেরদৌসী ইসলাম, পরিচালক, সেবা ও সরবরাহ, ড. মো. আব্দুল্লাহ ইউছুফ আখন্দ, পরিচালক, গবেষণা এবং ড. দিলোয়ার আহমদ চৌধুরী, পরিচালক, পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন, বিএআরআই মহোদয়গন উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগতিক বক্তব্য রাখেন মো. মসিউর রহমান, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
বিশেষ অতিথি ড. ফেরদৌসী ইসলাম বলেন, ক্রপ মিউজিয়াম এর মাধ্যমে বারি উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শনী করে কৃষক এবং সংশ্লিষ্টদেরকে আকর্ষণ করে তুলতে হবে; তবেই বারির প্রযুক্তি কৃষক নিতে আগ্রহী হবে। ড. আব্দুল্লাহ ইউছুফ আখন্দ বলেন, জীন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বারির বহুল প্রচলিত বারি সরিষা ১৪ এর ইউরেসিক এসিড কে কমানো সম্ভব। তিনি উক্ত বিষয়ে গবেষণা করার আহবান জানান।
ড. দিলোয়ার আহমদ চৌধুরী বলেন, সরেজমিন গবেষণার মাধ্যমে বারির উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সমূহ কৃষকের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দিতে হবে এবং এর মাধ্যমে সম্প্রসারণের সাথে যোগসূত্র বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে কারিগরি অধিবেশনটি ড. দেবাশীষ সরকার, মহাপরিচালক, বিএআরআই, গাজীপুর সঞ্চালনা করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্হাপনা করেন ড. মো. সামছুর রহমান, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। ড. রহমান কৃষি গবেষণার বিভিন্ন জাত প্রযুত্তি নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। পরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা শেষে বিজ্ঞানের নানা বিষয় সম্বলিত প্রযুক্তি বিস্তার এবং কৃষক পর্যায়ে তাদের অবস্থা নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ, বিএডিসি এবং গবেষণার কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সম্পন্ন হয়।
আরো উপস্থাপনা করেন কিশোর কুমার মজুমদার, উপপরিচালক, খাগড়ছড়ি, মো. ওমর ফারুক, অতিরিক্ত উপপরিচালক, চট্টগ্রাম। তাঁরা বারি উদ্ভাবিত জাত প্রযুক্তি, উন্নত বীজ, চারা কলম উক্ত কর্মশালার মাধ্যমে চাহিদা উপস্থাপন করেন। এই সময় বারি মহাপরিচালক মহোদয় তাদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিজ্ঞানীরা প্রস্তুত রয়েছে, অচিরেই সরেজমিন গবেষণা কেন্দ্র চন্দনাইশ, দিঘীনালায় স্হাপন করা হবে এবং তাদের মাধ্যমে এই যোগসূত্র আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ মতবিনিময় আলাচনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ মো.নাছির উদ্দীন, অতিরিক্ত পরিচালক, চট্টগ্রাম অঞ্চল, কৃষিবিদ তপন কুমার পাল, অতিরিক্ত পরিচালক, রাংগামাটি অঞ্চল, এ এফ এম শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম পরিচালক (বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিএডিসি, চট্টগ্রাম। করিগরি অধিবেশনে আরো বক্তব্য দেন মো. আব্দুচ ছোবহান, উপপরিচালক, চট্টগ্রাম, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার, হাবিবুননেছা, অতিরিক্ত উপিপরিচালক, চট্টগ্রাম, বিভিন্ন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা, কৃষকবৃন্দ প্রমুখ।
বিভিন্ন ফসলের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ, ঢলে পড়া রোগ দমন ব্যবস্থাপনা, বেসিলাস ব্যাক্টেরিয়ার কার্যক্রম বাড়ানো, কেনোলা জাতীয় বারি সরিষা-১৮, বারি মাল্টা ২ এর বিস্তারসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় বক্তারা তুলে ধরেন।
পরে কারিগরি অধিবেশন শেষে মহাপরিচালক মহোদয় আইসি ব্লকের বিভিন্ন মাতৃবাগান এবং বিভিন্ন পরীক্ষাকার্য পর্যবেক্ষন করেন। উৎসবমুখর পরিবেশে এই কর্মশালাটি শতাধিক কর্মকর্তার সমন্বয়ে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই কর্মশালাটির মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৃষকদের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক বাস্তবায়িত হবে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।