জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে ‘নিরাপদ পথ খাবার নিশ্চিতে করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক নাগরিক সংগঠন বিসেফ ফাউন্ডেশন কর্তৃক ‘নিরাপদ পথ খাবার নিশ্চিতে করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউএসএআইডি ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ পলিসি লিংক এগ্রিকালচারাল পলিসি একটিভিটি এর সহায়তায় ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, বৃহস্পতিবার, সকাল ১০.৩০ টায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) কনফারেন্স কক্ষে বিসেফ ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুকের সভাপতিত্বে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সিটিউট এর মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (খাদ্যভোগ ও ভোক্তা অধিকার) আবু নূর মোঃ শামসুজ্জামান। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাহিম খান, কান্ট্রি লীড বাংলাদেশ, ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ, পলিসি লিংক এগ্রিকালচার পলিসি একটিভিটি এবং বিসেফ ফাউন্ডেশন এর সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মিটন। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও বিসেফ ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক।

খাদ্য মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সবার জন্যই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। রূপকল্প ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে দেশে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। এটা গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, বাংলাদেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে, বাসষ্টান্ড, বাজার ও অন্যান্য জনসমাগমস্থলে ছোট ছোট খাদ্য বিক্রেতাগণ কর্তৃক খাবার বিক্রিত হয়, যা সাধারণ মানুষ আগ্রহ নিয়ে গ্রহণ করে থাকেন। এই খাবারগুলোকে সাধারণভাবে ‘পথ-খাবার’ বা ‘ষ্ট্রিট ফুড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই পথ খাবার নিরাপদ হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ, দিনের পর দিন এসব খাবার খাওয়ার ফলে মানুষ বিশেষ করে কোমলমতি শিশু, কিশোর ও তরুণ সমাজসহ এসব খাবার গ্রহণকারী স্বল্প আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

প্রতিদিন কতমানুষ পথ খাবার বা ষ্ট্রিট ফুড গ্রহণ করে থাকেন এবং এই ব্যবসায় ঠিক কত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত সে বিষয়ে কোন তথ্য না থাকলেও বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কেবলমাত্র রাজধানীতেই প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখের বেশি মানুষ পথ খাবার বা রাস্তার পাশের দোকানগুলিতে খাবার খেয়ে থাকেন। আর রাজধানীর সাথে সারা দেশ যুক্ত হলে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ পথ খাবার বা পথের পাশের দোকানগুলি থেকে খাবার খেয়ে থাকেন বলে অভিজ্ঞজনদের ধারণা। এই খাবারগুলি কতখানি নিরাপদ সে বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে।

সবার জন্যই নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে হবে। তবে স্বল্প আয়ের মানুষ, তথা সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরী। প্রতিবছর ৮% হারে নগরায়ণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা কারণে বাড়ির বাইরে খাবার গ্রহণকারীর সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, নাগরিক সমাজ মনে করে, দেশের বিকাশমান অর্থনীতির গতি অব্যাহত রাখতে চাইলে মানুষের খাদ্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়া অত্যাবশ্যক। নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সরকারের যুগান্তকারী অনেক পদক্ষেপ থাকলেও নিরাপদ পথ খাবার বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগের অভাব রয়েছে। এই পরিস্থিতির উন্নতি করা উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্যই অপরিহার্য। সমন্বয়ের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। স্থানীয় সরকার তথা সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দিতে হবে। যদিও কোন একটি একক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পক্ষে নিরাপদ পথ খাবার নিশ্চিত করা কঠিন তথাপি শুরু করাটা জরুরী। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে অনেক আলোচনা হলেও পথ খাবার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। সামনে রমজান আসছে। রমজানে পথখাবার বিক্রি বেড়ে যায়। তাই সরকারকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে যাতে করে সবার জন্য নিরাপদ ইফতার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

সভায় বক্তাগণ সুপারিশ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে পথ খাবার বিপণনের সাথে জড়িত ব্যক্তিসহ সকল খাদ্য ব্যবসায়ীদের তালিকা করতে হবে। তাদের একটি গাইডলাইন এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। গাইডলাইন মানা হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করতে হবে। কেবল শাস্তির বিধান রেখে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়, দরকার সমন্বিত উদ্যোগ। মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে হবে। এটা কঠিন হলেও প্রাথমিক শিক্ষার স্তর থেকে শুরু করতে পারলে একসময় জাতি তার সুফল ভোগ করবে। পথ খাবার বিক্রির সাথে জড়িতদের সাথে আলোচনা করে তাদের বিরাজমান সমস্যা চিহ্নিতপূর্বক একটি সহায়ক কর্মপরিকল্পনা সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি গণমাধ্যমের সহায়তায় সর্বস্তরে ব্যাপক খাদ্য সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।